খুলনা, বাংলাদেশ | ২ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ১৭ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  প্রীতি ম্যাচ : মালদ্বীপকে ২-১ গোলে হারাল বাংলাদেশ, সিরিজ শেষ হলো ১-১ সামতায়
  ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ৮ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৯৯৪
  আগামীর বাংলাদেশ হবে ন্যায়বিচার, মানবাধিকার, বাক স্বাধীনতার : ড. ইউনূস
  জুলাই-আগস্টে নিহতদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশে সময় লাগবে : উপদেষ্টা আসিফ

কমলমতি শিক্ষার্থীদের সাথে শত্রুতা, খেলার মাঠে লাগানো হয়েছে গাছ

সলিল বিশ্বাস মিঠু, গোপালগঞ্জ

এ যেন কমলমতি শিক্ষার্থীদের সাথে শত্রুতা। তাদের খেলার মাঠে লাগিয়ে দেয়া হয়েছে সারি সারি গাছ। গাছ রক্ষায় গাছের ডাল পুতে বেড়া দিয়ে ঘিরে দেয়া হয়েছে মাঠটি। গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় গোপালপুর পঞ্চপল্লী উচ্চ বিদ্যালয়ে এমন ঘটনা ঘটেছে।। এতে স্কুলের শিক্ষার্থীরা খেলাধুলা করতে পারছে না।

এ ঘটনায় শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। তারা মাঠ দখলের প্রতিবাদে ও দখলমুক্ত করার দাবীতে বুধবার (১৫ সেপ্টেম্বর) দুপুরে স্কুলের সামনে মানববন্ধন করেছে। একই সাথে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা মাঠ উদ্ধারে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। যাতে আগের মতো কমলমতি শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার পাশাপাশি খেলাধূলা করতে পারে।

জানাগেছে, ১৯৫৮ সালে টুঙ্গিপাড়া উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়নের গোপালপুর গ্রামে পঞ্চপল্লী উচ্চ বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়। সেই থেকে স্কুলটি লেখাপড়ার পাশাপাশি খেলাধূলায় খ্যাতি ধরে রেখেছে। বর্তমানে স্কুল প্রায় সাড়ে ৮’শ শিক্ষার্থী রয়েছে।

স্কুলের প্রধান শিক্ষক তাপস কুমার বাড়ৈ বলেন, ‘তৃতীয় দফা স্কুলের মাঠ বালু ভরাট করে উঁচু করার সময় স্থানীয় গোপালপুর গ্রামের উপেন্দ্রনাথ টিকাদার মাঠের জমি তাদের পৈত্রিক সম্পত্তি দাবী তুলে বাঁধা দেন। পরে স্থানীয় চেয়ারম্যান ও গন্যমান্য ব্যক্তিদের মধ্যস্থতায় বালু ভরাট কাজ শেষ করা হয়। কিন্তু গত ১২ সেপ্টেম্বর স্কুল খোলার দিন দেখা যায়, কে বা কারা স্কুলের মাঠে অস্থায়ীভাবে বেড়া দিয়ে মেহগনি ও কলাগাছসহ বিভিন্ন ধরনের গাছ লাগিয়ে দিয়েছে। পরে আমি খবর নিয়ে জানতে পারি উপেন্দ্রনাথ টিকাদার রাতের আধারে লোকজন নিয়ে স্কুলের মাঠ ভরে গাছ লাগিয়ে দিয়েছেন। এতে স্কুলের শিক্ষার্থীরা খেলাধুলা করতে পারছেন না।’

প্রধান শিক্ষক বলেন, প্রায় ১৫ বছর যাবত তিনি এ স্কুলে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছেন। এই স্কুলের মাঠটি টুঙ্গিপাড়া উপজেলার সবচেয়ে বড় মাঠ। এখানে বিভিন্ন সময় উপজেলা পর‌্যায়ের ফুটবলসহ গ্রীষ্মকালীন খেলাধুলা অনুষ্ঠিত হয়। তার দায়িত্ব পালনকালিন সময়ে কেউ এই জমি নিজেদের বলে দাবী করেননি। এর আগেও দুই বার এই মাঠে বালু ভরাট করে উচুঁ করা হয়েছে। তখন কেউ বাঁধা দেননি। আর এই মাঠের জমি স্কুলের নামে রেকর্ডীয় সম্পত্তি। স্কুল থেকে নিয়মিত এই জমির খাজনা পরিশোধ করা হয়।

তিনি আরো জানান, বিষয়টি স্থানীয় চেয়ারম্যান, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জানিয়েছেন তিনি। কিন্তু এখনও মাঠটি উদ্ধার হয়নি। তাই মাঠ উদ্ধারের জন্য তিনি প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

স্কুলের সহকারি শিক্ষক দেশবন্ধু বিশ্বাস বলেন, ১৯৯০ সাল থেকে তিনি এই স্কুলে ইংরেজী শিক্ষক হিসেবে কর্মরত আছেন। সেই থেকে স্কুলের মাঠটি তারা ব্যবহার করে আসছেন। এতো বছরে কেউ দাবী করেনি মাঠটি তাদের। এখন হঠাৎ করে জনৈক উপেন্দ্রনাথ টিকাদার মাঠ তাদের পৈতৃক সম্পত্তি বলে দাবী করেছেন। তিনি রাতে আধাঁরে মাঠটি বেড়া দিয়ে ঘিরে গাছ লাগিয়ে দিয়েছে। এতে শিক্ষার্থীদের চিত্তবিনোদন ও খেলাধুলায় ব্যাঘাত ঘটছে। তাই বিষয়টি আশু সমাধান হওয়া উচিত বলে তিনি মন্তব্য করেন।

স্কুলের দশম শ্রেনীর ছাত্রী মিষ্টি বাইন বলেন, ‘করোনার কারণে দীর্ঘ ১৮ মাস ঘরবন্দি ছিলাম। প্রখম দিন স্কুলে এসে দেখলাম মাঠ দখল হয়ে গেছে। মাঠ সারি সারি গাছ। ভেবেছিলাম অনেকদিন পর স্কুলে এসে বান্ধবীদের সাথে মাঠে ঘুরবো আর খেলাধুলা করবো। কিন্তু তা সম্ভব হচ্ছে না। তাই সরকারের কাছে দাবী জানাচ্ছি আমাদের মাঠটি যেন দখল মুক্ত করে দেয়া হয়। যাতে আগের মত আমরা পড়াশোনার পাশাপাশি খেলাধুলা করতে পারি।’

একই শ্রেনীর কলিস হাজরা, জিতু মন্ডল, শোভন সিকদার, নয়ন কবিরাজ মাঠটি অবমুক্ত করার দাবী জানিয়ে বলেছেন, খেলাধুলা তো পড়াশোনার অংশ। আর খেলাধুলা করলে মন ও শরীর ভাল থাকে। আর পড়াশোনায় মনোযোগ আসে। আমাদের দাবী দ্রুততম সময়ে মাঠটিতে আবার আমরা আগের মত খেলাধুলা করতে পারি সরকার তার ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত উপেন্দ্রনাথ টিকাদারের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, ‘মাঠটি আমার বাবা-দাদার পৈত্রিক সম্পত্তি। স্কুলের নামে কি ভাবে রেকর্ড হলো তা আমার জানা নাই। আমি মামলা করেছি কিন্ত আমার পক্ষে রায় আসেনি। আগে যখন বালু ভরাট করেছে তখন আমার পক্ষে লোকজন ছিলো না তাই বাঁধা দিতে পারিনি। এখনও আমার পিছনে লোকজন আছে তাই আমি বাঁধা দিয়েছি। স্কুল কর্তৃপক্ষ বলেছিলো বিষয়টি সমাধান করে দিবে কিন্তু বালু ভরাট করা হলেও কোন সমাধান না দেয়ায় আমি বেড়া দিয়ে গাছ লাগিয়ে দিয়েছি।’

স্থানীয় গোপালপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সুষেন সেন বলেছেন, ‘দীর্ঘ ৩০/৩৫ বছর ধরে এই মাঠটি স্কুল ব্যবহার করছে। এতো দিন কেউ বলেনি এটি তাদের। এখন বালু ভরাট করতে গিয়ে দেখলাম উপেন্দ্রনাথ টিকাদার মাঠটি তার দাবী করে বালু ভরাটে বাঁধে দেয়। আমি বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় গন্যমান্য ব্যক্তিদের আলাপ আলোচনা করেছি। বিষয়টি বসে সমাধানের চেষ্টা করবো।’

টুঙ্গিপাড়া উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শাহ জালাল বলেন, ‘বিষয়টি প্রধান শিক্ষক আমাদের জানিয়েছেন। আমি বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জানাতে বলেছি। আশা করি বিষয়টি সমাধান হয়ে যাবে।’

টুঙ্গিপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা একেএম হেদায়েতুল ইসলাম জানিয়েছেন, ‘প্রধান শিক্ষক মোবাইল ফোনে মৌখিক ভাবে জানিয়েছেন। এ বিষয়ে লিখিত কোন অভিযোগ পায়নি। আগামীকাল বৃহস্পতিবার বিষয়টি তদন্তে জন্য সরেজমিনে সহকারি কমিশনার ভূমি নির্দেশ দেয়া হয়েছে। স্কুল কর্তৃপক্ষ ও জমির দাবীদারের কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে পরবর্তি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

খুলনা গেজেট/ এস আই

 




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!