বাবুই পাখিরে ডাকি, বলিছে চড়াই,
“কুঁড়ে ঘরে থাকি কর শিল্পের বড়াই,
আমি থাকি মহাসুখে অট্টালিকা পড়ে
তুমি কত কষ্ট পাও রোদ, বৃষ্টি, ঝড়ে।”
বাবুই হাসিয়া কহে, “সন্দেহ কি তায়?
কষ্ট পাই, তবু থাকি নিজের বাসায়।
পাকা হোক, তবু ভাই, পরের ও বাসা,
নিজ হাতে গড়া মোর কাঁচা ঘর, খাসা।”
হ্যাঁ, উপরোক্ত চরণগুলি কবি রজনীকান্ত সেন রচিত ‘স্বাধীনতার সুখ’ কবিতা থেকে চয়ন করা হয়েছে। আজ যে কবির জন্মদিন।
‘মায়ের দেওয়া মোটা কাপড় মাথায় তুলে নে রে ভাই/ দীন-দুঃখিনী মা যে তোদের, তার বেশি আর সাধ্য নাই।’ অথবা ‘ভিক্ষার চালে কাজ নাই, সে বড় অপমান/ মোটা হোক সে সোনা মোদের মায়ের ক্ষেতের ধান।’
স্বদেশ প্রেমের মন্ত্রে উজ্জীবিত এই বিখ্যাত গানের রচয়িতাও ছিলেন কবি রজনী কান্ত সেন। সেকালে “কান্ত কবি” নামে তিনি সকলের কাছে পরিচিত ছিলেন। বাঙালীর কণ্ঠে ঘরে ঘরে গীত হতো সেকালের এই বিখ্যাত গানগুলো। রজনী কান্ত সেনের গান বলতে আমরা বুঝি বিশ শতকের ত্রিশ, চল্লিশ দশকের কথা। এখন যাকে বলা হয় পুরোনো দিনের গান।
রজনীকান্ত সেনের জন্ম ১৮৬৫ সালের ২৬ জুলাই তৎকালীন পাবনা জেলার সিরাজগঞ্জ মহকুমার ভাঙ্গাবাড়ী গ্রামে। পিতা গুরু প্রসাদ সেন ছিলেন সেকালের সঙ্গীতঙ্গ গুণী ব্যক্তিত্ব ও বরিশালের নাম করা সাবজজ এবং ব্যক্তিত্বময়ী নারী মনো মোহিনী দেবীর তৃতীয় সন্তান ছিলেন রজনীকান্ত সেন। মানিকগঞ্জের তারক নাথ সেনের কন্যা হিরন্ময়ী দেবীর সঙ্গে তিনি বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।
রজনীকান্ত সেন কুচবিহার জেনকিন্স স্কুল থেকে ১৮৮৩ সালে এন্ট্রান্স, ১৮৮৫ সালে রাজশাহী কালেজ থেকে এফএ ১৮৮৯ সালে কোলকাতার সিটি কলেজ থেকে বিএ ও ১৮৯৭ সালে বিএল পরীক্ষায় উর্ত্তীণ হন। পরবর্তী কালে তিনি রাজশাহী কোর্টে ওকালতি শুরু করেন। কিছুদিন তিনি নাটোর ও নওগাঁয় অস্থায়ী মুন্সেফ ও ছিলেন। বিএল পরীক্ষা দেবার আগে থেকেই তার কবিতা ও গান রাজশাহী পত্রিকায় প্রকাশিত হতে থাকে।
রজনীকান্ত সেন শৈশব থেকেই পিতার নিকট সঙ্গীত শিক্ষা গ্রহন করেন এবং মাত্র ১৫ বছর বয়সে “কালী সঙ্গীত” রচনা করে কবিত্ব শক্তির পরিচয় দেন। প্রায় দুই বছর কঠিন রোগ ভোগের পর ১৯১০ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর গানের রাজা রজনীকান্ত সেন পরলোকগমন করেন।
খুলনা গেজেট/এআইএন