আজ ২৫ বৈশাখ। মহাকালের বিস্তীর্ণ পটভূমিতে এক ব্যতিক্রমী রবির কিরণে উজ্জ্বল এই ২৫শে বৈশাখ। বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান লেখক রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৩তম জন্মদিন। এই দিনে (বাংলা ২৫শে বৈশাখ ১২৬৮) কলকাতার জোড়াসাঁকোয় কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জন্মগ্রহণ করেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এর জন্মবার্ষিকী উদযাপনের এবারের প্রতিপাদ্য ‘সোনার বাংলা স্বপ্ন ও বাস্তবতা: রবীন্দ্রনাথ থেকে বঙ্গবন্ধু’।
রবীন্দ্রনাথকে “গুরুদেব”, “কবিগুরু” ও “বিশ্বকবি” অভিধায় ভূষিত করা হয়। রবীন্দ্রনাথের ৫২টি কাব্যগ্রন্থ, ৩৮টি নাটক, ১৩টি উপন্যাস ও ৩৬টি প্রবন্ধ ও অন্যান্য গদ্যসংকলন তার জীবদ্দশায় বা মৃত্যুর অব্যবহিত পরে প্রকাশিত হয়। তার সর্বমোট ৯৫টি ছোটগল্প ও ১৯১৫টি গান যথাক্রমে গল্পগুচ্ছ ও গীতবিতান সংকলনের অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
দিবসটি উপলক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাণী দিয়েছেন। রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, অসাম্প্রদায়িক চেতনা, উদারনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি, মাতৃভাষার প্রতি গভীর অনুরাগ এবং ধর্ম-বর্ণ-বিত্ত-লিঙ্গনির্বিশেষে সর্বমানবের মুক্তির চেতনা রবীন্দ্রনাথকে অনন্য উচ্চতা দান করেছে। রবীন্দ্রনাথ বাঙালির অমৃত সন্তান। বাঙালি সংস্কৃতির বিকাশ, বাঙালি জাতীয়তাবাদের উন্মেষ এবং স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের অভ্যুদয়ে রবীন্দ্রনাথ ছিলেন আমাদের প্রেরণাশক্তি। তার গান, সাহিত্য ও কর্মচেতনা বাংলাদেশের মানুষকে প্রতিনিয়ত অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে।
দিবসটি উদযাপনে খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ও সংস্থার পক্ষ থেকে আজ জাতীয় পর্যায়ে বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। জন্মবার্ষিকীর অনুষ্ঠান হবে রবীন্দ্র স্মৃতিবিজড়িত কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার শিলাইদহের কুঠিবাড়িতে।
এছাড়া ঢাকা, সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর, নওগাঁর পতিসর এবং খুলনার দক্ষিণডিহি ও পিঠাভোগে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পৃষ্ঠপোষকতায় ও স্থানীয় প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় যথাযোগ্য মর্যাদায় কবিগুরুর জন্মবার্ষিকী উদযাপন করা হবে। এ উপলক্ষ্যে রবীন্দ্রমেলা, রবীন্দ্রবিষয়ক আলোচনা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করবে স্থানীয় প্রশাসন।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একাধারে কবি, ঔপন্যাসিক, নাট্যকার, সংগীতজ্ঞ, প্রাবন্ধিক, দার্শনিক, ভাষাবিদ, চিত্রশিল্পী ও গল্পকার। আট বছর বয়সে তিনি কবিতা লেখা শুরু করেন। বাঙালি সমাজে তার রচিত সংগীতের জনপ্রিয়তা এত বছর পরেও তুলনাহীনভাবে বাড়ছে। তিনি ২ হাজার গান রচনা করেন। অধিকাংশ গানে সুরারোপ করেন। কবির লেখা ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি’ গানটি বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত। ভারতের জাতীয় সংগীতটিও কবির লেখা। কবির মৃত্যুর পর বিশ্বভারতী থেকে ৩৬ খণ্ডে ‘রবীন্দ্র রচনাবলী’ প্রকাশ পেয়েছে।
এছাড়া ১৯ খণ্ডে রয়েছে ‘রবীন্দ্র চিঠিপত্র’। বাংলাদেশ থেকেও পাঠক সমাবেশ ও ঐতিহ্য ‘রবীন্দ্র রচনাবলী’ প্রকাশ করেছে। ১৯২৮ থেকে ১৯৩৯ পর্যন্ত কবির আঁকা চিত্রকর্মের সংখ্যা আড়াই হাজারেরও বেশি। এর মধ্যে ১ হাজার ৫৭৪টি চিত্রকর্ম শান্তিনিকেতনের রবীন্দ্রভবনে সংরক্ষিত আছে। কবির প্রথম চিত্র প্রদর্শনী দক্ষিণ ফ্রান্সের শিল্পীদের উদ্যোগে ১৯২৬ সালে প্যারিসের পিগাল আর্ট গ্যালারিতে অনুষ্ঠিত হয়।
তার পিতার নাম দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর। মাতা সারদা সুন্দরী দেবী। রবীন্দ্রনাথের পূর্বপুরুষেরা খুলনা জেলার রূপসা উপজেলার পিঠাভোগে বাস করতেন। বর্ণাঢ্য কর্মজীবনের অধিকারী দীর্ঘ রোগভোগের পর বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলা ১৩৪৮ সালের ২২শে শ্রাবণ (ইংরেজি ৭ আগস্ট ১৯৪১) কলকাতায় পৈতৃক বাসভবনে মৃত্যুবরণ করেন।
এদিকে ৮ মে বিকেল সাড়ে চারটায় খুলনার ফুলতলা উপজেলার দক্ষিণডিহি রবীন্দ্র কমপ্লেক্সে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৩ তম জন্মবার্ষিকীর বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। এতে মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী সিমিন হোসেন (রিমি) অংশ নেবেন।
এছাড়া বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৩ তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ শিশু একাডেমি খুলনা জেলা কার্যালয়ের আয়োজনে মঙ্গলবার বিকালে নিজস্ব কার্যালয়ে আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন খুলনা সরকারি ব্রজলাল কলেজের বাংলা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ড. মোঃ আনিস-আর-রেজা। জেলা শিশু বিষয়ক কর্মকর্তা মো: সাদ্দাম হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন জেলা শিশু বিষয়ক কর্মকর্তা (পিআরএল) মোঃ আবুল আলম।
অতিথিরা বলেন, এই অনুষ্ঠানে শিশুদের অংশগ্রহণ আমাদের সামনে পথ চলার নিদের্শনা দেয়। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাঙালির চেতনা, মেধা ও মননে চিরভাস্বর। শুধু সাহিত্যই নয়, প্রতিটি শাখায় ছিলো তাঁর পদচারণা। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শিশুদের নিয়ে বিশেষ চিন্তা ছিলো। তিনি শিশুদের নিয়ে বেশি লেখালেখি করতেন। রবীন্দ্রনাথ অসংখ্য গান, কবিতা রচনা করেন।
অনুষ্ঠানে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় বিজয়ী শিক্ষার্থীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করা হয়।
খুলনা গেজেট/কেডি