খুলনা, বাংলাদেশ | ১৩ পৌষ, ১৪৩১ | ২৮ ডিসেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  আগামী বিজয় দিবসের আগে জুলাই গণহত্যার বিচার সম্পন্ন করা হবে : আসিফ নজরুল
  সচিবালয়ের নিরাপত্তার স্বার্থে সাংবাদিকদের প্রবেশাধিকার সীমিত : প্রেস উইং
  কুড়িগ্রামে বিএনপির দুপক্ষের সংঘর্ষ, যুবদল নেতা নিহত

কবরের মতো কক্ষে দুই মাস আটকে রেখেছিল: বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন

গেজেট ডেস্ক

কবরের মতো কামরায় ৬১ দিন রাখা হয়েছিল বলে জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। আজ রোববার দুপুর ২টায় ঢাকায় হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান তিনি। দীর্ঘ ৯ বছর পর দেশে ফিরে অপহরণ ও নির্যাতনের দুর্বিষহ দিনের বর্ণনা দেন।

সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘যারা তুলে নিয়েছিল, তাঁরা আমাকে একটি কবরের মতো কামরায় ৬১ দিন বন্দী রেখেছিল। এই সময়ে একটু সময়ের জন্যও তাঁরা আমাকে বের করেনি।’

সালাহউদ্দিন আহমদ আরও বলেন, ‘আমাকে একটি গোপন জায়গায় নিয়ে যায়। সেই জায়গাটা একটা কবরের মতো, একটা কামরা। আমার মনে হয়েছিল, এটা কোনো বাড়ির নিচতলা হবে। জায়গাটা ৫ ফুট বাই ১০ ফুট হবে। শুধু প্রস্রাব-পায়খানা করার জন্য একটা ছিদ্র ছিল এক কিনারে, সেখানে একটা পানির ট্যাব ছিল। কক্ষে একটা লোহার দরজা ছিল। নিচ থেকে খাবার দেওয়ার একটা জায়গা ছিল, বাইরে একটা স্ট্যান্ড ফ্যান ছিল, মাথার ওপরে একটা হাই পাওয়ার লাইট ছিল, এতটুকুই। এখানে তাঁরা আমাকে ৬১ দিন রাখে। একদিনের জন্যও বের করেনি।’

তিনি অপহরণের ঘটনা বর্ণনা দিয়ে বলেন, ‘২০১৫ সালের ১০ মার্চ রাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে তাঁরা আসে। তাঁদের মধ্যে কেউ সাদাপোশাকে, কেউ অস্ত্রধারী ছিল। তখন আমি উত্তরাতে আমার একজন বন্ধুর বাসায় ছিলাম, সেখান থেকেই তাঁরা আমাকে চোখে কাপড় বেঁধে, হাতে হ্যান্ডকাফ পরিয়ে নিয়ে যায়। এরপর গোপন জায়গায় নিয়ে যায়।’

তিনি বলেন, ‘তাঁরা যেদিন আমাকে ওই কক্ষ থেকে বের করে, সেদিনও চোখ বেঁধে বের করে। গাড়িতে তোলে। ৬-৭ ঘণ্টা তাঁরা আমাকে গাড়িতে তুলে চালাল। এরপর এক জায়গায় নিয়ে নামায়, তখন অন্ধকার। এরপর পায়ে হেঁটে কিছু দূর, তারপর আবার গাড়িতে। এরপর একটি মাঠে ছেড়ে দেওয়া হয়। তখন ভোর। লোকজন হাঁটতে বের হয়েছে, তাঁদের সহযোগিতা চাইলাম। পুলিশ ডাকতে বললাম, তারপর আমি জানতে পারলাম এটা ভারতের শিলং।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, ‘এছাড়া যা ঘটেছে, তা আমি এই মুহূর্তে বলতে চাই না। কারণ যা ঘটেছে, তা উচ্চমহলের নির্দেশেই ঘটেছে। এ জন্য তাঁদের জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মহলে কোনো না কোনো দিন জবাবদিহি করতেই হবে।’

২০১৫ সালের ১০ মার্চ ঢাকা থেকে নিখোঁজ হন বিএনপির নেতা সালাহউদ্দিন। ওই বছরের ১১ মে ভারতে অনুপ্রবেশের দায়ে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করে শিলংয়ের পুলিশ। ২০১৮ সালের ২৬ অক্টোবর অনুপ্রবেশের মামলা থেকে তাঁকে খালাস দেন ভারতের একটি আদালত। তবে আদালতের রায়ে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল করলে থেমে যায় সালাহউদ্দিনের দেশে ফেরা।

প্রায় সাত বছর বিচার চলার পর গত বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি এই মামলার রায় ঘোষণা করা হয়। তিনি বেকসুর খালাস পান। কিন্তু পাসপোর্ট না থাকায় সালাহউদ্দিন দেশে ফিরতে পারছিলেন না। পরে ট্রাভেল পারমিটের জন্য গুয়াহাটিতে বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে আবেদন করেন। ট্রাভেল পাসও পান তিনি। তবে তাঁর আর দেশে ফেরা হয়নি। তিনি প্রায় ৯ বছর ভারতে অবস্থান করেন।

সালাহউদ্দিন আহমদ ১৯৯১ সালে বিএনপির তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার এপিএস ছিলেন। ২০০১ সালে কক্সবাজার থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। তাঁকে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময়ে যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী করা হয়েছিল। মেঘালয়ে যখন আটক হন, তখন তিনি বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ছিলেন। ভারতের জেলে থাকাকালে বিএনপি তাঁকে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য করে।

 

খুলনা গেজেট/এইচ




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!