কেশবপুরে মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের জন্মস্থান সাগরদাঁড়ির কপোতাক্ষ নদের উপর নির্মিত চলাচলের জন্য একমাত্র বাঁশের সাঁকোটি ভেঙ্গে পড়ায় দু’পারের মানুষ পড়েছে চরম বিপাকে। যার কারণে প্রায় এক মাস ধরে নদের দু’পারের মানুষ, বিভিন্ন স্থান থেকে আসা পর্যটক ও দর্শনার্থীরা ঝুঁকি নিয়ে নৌকায় পারাপার হতে বাধ্য হচ্ছেন। কিন্তু এখনো পর্যন্ত বাঁশের সাঁকোটি পুনঃসংস্কার করতে কোন পদক্ষেপ না নেওয়ায় কপোতাক্ষ নদের দু’পারের মানুষের মনে এক ধরনের ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
এলাকাবাসী জানায়, সম্প্রতি সাগরদাঁড়ির কপোতাক্ষ নদে অস্বাভাবিক স্রোত বেড়ে গেলে উজান থেকে নেমে আসা কচুরিপানার চাপে সাঁকোটি ভেঙ্গে যাওয়ায় মানুষের চলাচলে ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে। নদের ওপারে সাতক্ষীরা জেলার শার্শা, সরুলিয়া, সেনেরগাতি, ধানদিয়া, কেশনগর, পাঁচপাড়াসহ ৮ থেকে ১০টি গ্রামের মানুষ সপ্তাহের শনি, সোম ও বুধবার সাগরদাঁড়ির হাটে আসেন মালামাল বেচাকেনার জন্য।
এছাড়া সাগরদাঁড়িতে রয়েছে কলেজ, মাধ্যমিক ও প্রাথমিক বিদ্যালয়। এ সমস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ওপার থেকে ছাত্র-ছাত্রী, অভিভাবকসহ শিক্ষকরাও যাতায়াত করতেন ওই সাঁকো দিয়েই। সাগরদাঁড়ি বাজার কমিটির উদ্যোগে প্রায় এক লাখ টাকা খরচ করে সাঁকোটি তৈরি করেন যাতায়াতের জন্য।
সরেজমিন সাগরদাঁড়ির কপোতাক্ষ নদ পারে গিয়ে দেখা যায়, ঝুঁকি নিয়ে নৌকায় দু’পারের মানুষ পারাপার হচ্ছেন।
সাগরদাঁড়ি বাজার কমিটির সভাপতি ও ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য সুভাষ চন্দ্র দেবনাথ বলেন, ‘গত বছর প্রায় এক লাখ টাকা ব্যয় করে সাঁকোটি পুনঃসংস্কার করা হয়। কপোতাক্ষ নদে অস্বাভাবিক স্রোতের কারণে উজান থেকে নেমে আসা কচুরিপানার চাপে সাঁকোটি ভেঙ্গে গিয়ে মানুষের ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে। হাটে মালামাল আনতে নদের ওপারের মানুষ ঝুঁকি নিয়েই নৌকায় পারাপার হচ্ছে। প্রায় এক মাস আগে সাঁকোটি ভেঙ্গে গেলেও অর্থ কষ্টে মেরামতে বিলম্ব হচ্ছে। বিষয়টি সাগরদাঁড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানসহ উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।’
ওই ইউনিয়নের বাসিন্দা কলেজ পড়ুয়া ছাত্র আব্দুল্লাহ আল মামুন জানায়, বিভিন্ন স্থান থেকে পর্যটক ও দর্শনার্থীরা মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের জন্মভূমিতে বেড়াতে আসেন। এ সময় তাঁরা নদের দু’পারের সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য সাঁকো ব্যবহার করতো। কিন্তু ওই বাঁশের সাঁকোটি ভেঙ্গে পড়ার কারণে এ সকল পর্যটক ও দর্শনার্থীরা ঝুঁকি নিয়েই নৌকা পারাপার হচ্ছে। কোন অঘটন ঘটলে আমাদের ভাবমূর্তি নষ্ট হবে। তাই অতি দ্রুত পুনঃসংস্কারের জোর দাবি জানাচ্ছি।’
নদের ওপারে শার্শা গ্রামের বাসিন্দা কেশবপুর সরকারি পাইলট উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক রমেশ চন্দ্র জানান, বাঁশের সাঁকোটি ভেঙ্গে যাওয়ার কারণে ঝুঁকি নিয়েই নৌকায় পারাপার হতে হচ্ছে। বাজার কমিটির সাধারণ স¤পাদক রাজ্জাক আহমেদ বলেন, দীর্ঘ বছর ধরে এলাকার মানুষ সাগরদাঁড়িতে কপোতাক্ষ নদের উপর একটি ব্রিজ নির্মাণ দাবি করে আসছেন। ব্রিজ নির্মাণ হলে মানুষের আর যাতায়াতে ভোগান্তিতে পড়তে হতো না।
এ ব্যাপারে সাগরদাঁড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুস্তাফিজুল ইসলাম মুক্ত বলেন, ‘সাগরদাঁড়ির কপোতাক্ষ নদে অস্বাভাবিক স্রোত বেড়ে উজান থেকে নেমে আসা কচুরিপানার চাপে ভেঙ্গে যাওয়া বাঁশের সাঁকোটি দ্রুত মেরামতের উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।’
খুলনা গেজেট/এনএম