চলে গেলেন বাংলা সাহিত্যের খ্যাতিমান কথাসাহিত্যিক সমরেশ মজুমদার। বেশ কিছু দিন ধরেই তিনি অসুস্থ ছিলেন। আজ সোমবার বিকেলে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় একটি বেসরকারি হাসপাতালে মারা যান।
সোমবার পৌনে ৬টা নাগাদ এই কথাসাহিত্যিকের মৃত্যু হয়। খবরটি নিশ্চিত করেছেন সমরেশ মজুমদারের বড় মেয়ে দোয়েল মজুমদার।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, গত ২৫ এপ্রিল মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের কারণে তাকে ভর্তি করানো হয়েছিল সাহিত্য অকাডেমি পুরস্কার জয়ী সাহিত্যিককে। এর পর শ্বাসযন্ত্রের সমস্যা বাড়তে থাকে। আগে থেকেই সমরেশের সিওপিডি সমস্যা ছিল। হাসপাতালে ‘ঘুমের মধ্যে শ্বাসকষ্টের সমস্যা’ (স্লিপ অ্যাপমিয়া) বাড়তে থাকে।
গত ২৯ এপ্রিল সন্ধ্যায় সমরেশ মজুমদারের বড় মেয়ে দোয়েল মজুমদার জানান, গত দুই দিন কেবিনেই রাখা হয়েছিল তার বাবাকে। ওই দিন বিকেলে তাকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে (আইসিইউতে) স্থানান্তরিত করা হয়।
সমরেশ মজুমদারের শ্বাসনালীতে গভীর সংক্রমণ ছিল। গত এক যুগ ধরেই ক্রনিক অবস্ট্রাক্টিভ পালমোনারি ডিজিজের (সিওপিডি) সমস্যায় ভুগছিলেন তিনি।
সমরেশ মজুমদার জন্মগ্রহণ করেন ১৯৪২ সালের ১০ মার্চ। কলকাতার স্কটিশ চার্চ কলেজ থেকে বাংলায় স্নাতক এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় মাস্টার্স সম্পন্ন করেন। কর্মজীবনে তিনি আনন্দবাজার পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেডএর সাথে যুক্ত ছিলেন। গ্রুপ থিয়েটারএর প্রতি তার প্রচণ্ড আসক্তি ছিলো। তার প্রথম গল্প ‘অন্যমাত্রা’ লেখাই হয়েছিলো মঞ্চনাটক হিসাবে, আর সেখান থেকেই তার লেখকজীবনের শুরু। তার লেখা অন্যমাত্রা ছাপা হয়েছিলো দেশ পত্রিকায় ১৯৬৭ সালে।
সমরেশ মজুমদারের প্রথম উপন্যাস ‘দৌড়’ ছাপা হয়েছিলো দেশেই ১৯৭৫ সালে। তার উল্লেখযোগ্য উপন্যাসগুলোর মধ্যে সাতকাহন, তেরো পার্বণ, স্বপ্নের বাজার, উজান, গঙ্গা, ভিক্টোরিয়ার বাগান, আট কুঠুরি নয় দরজা, অনুরাগ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। তার ট্রিলজি ‘উত্তরাধিকার’, ‘কালবেলা’, ‘কালপুরুষ’ বাংলা সাহিত্য জগতে তাকে বিশেষ খ্যাতির অধিকারী করেছে।
সমরেশ মজুমদার ১৯৮২ সালে আনন্দ পুরস্কার, ১৯৮৪ সালে সাহিত্য আকাদেমী পুরস্কার, বঙ্কিম পুরস্কার এবং আইআইএমএস পুরস্কার জয় করেছেন। চিত্রনাট্য লেখক হিসেবে জয় করেছেন বিএফজেএ দিশারী এবং চলচ্চিত্র প্রসার সমিতির অ্যাওয়ার্ড। পশ্চিমবঙ্গের পাশাপাশি বাংলাদেশেও বেশ জনপ্রিয় তিনি।
খুলনা গেজেট/এমএম