বিলের ধারে জলা,
ঈগল এসে মাছ ধরে খায়
পাবদা-পুঁটি-মলা।
এই দেখে এক কচ্ছপে কয়,
নিজকে নিজে নিজে-
জলায় থাকি কাদায় মেখে
কষ্ট সয়ে কী যে!
ঈগল বেড়ায় আকাশ জুড়ে
ইচ্ছে যেথায় যায় সে উড়ে
আমি কেবল অন্ধকারে একা,
হয় না ঘুরে বিশ্বটাকে দেখা।
ওড়বো আমি পাখির মতো
ব্যাপার কঠিন নয় কো ততো,
ঘিলুতে কি বুদ্ধি আমার কম?
নয় মোটে একদম।
ঈগল পাখির কাছেই আছে
এর সমাধান ঠিক,
ভাববো না আর অন্য কোনো দিক।
সাঁতার কেটে তাই সে গিয়ে
কয় ঈগলের কাছে,
এই যে ভায়া,শুনবে খানিক?
খুব কি তাড়া আছে?
ও ভাই কচ্ছপ! এসো এসো,
কেমন আছো বলো?
কাছেই তবু হয় না দেখা
গল্প করি চলো।
খুব ভালো নেই -থাকি জলে, কাদায়,
জীবন কাটে অন্ধ-গোলক ধাঁধায়।
তুমি কতো ভালো আছো
উড়তে পারো
ঘুরতে পারো
মনটা তোমার যা চায়,
আমি যেনো বন্দী লোহার খাঁচায়।
আমিও চাই ওড়তে আকাশ নীলে,
তোমার সাথে মিলে।
কচ্ছপের এই কথা শুনে
অবাক ঈগল কয়-
কী করে তা হয়!
তোমার তো ভাই নেই পাখা নেই
ওড়বে কেমন করে?
বুদ্ধিতে না ধরে!
নেই পাখা তো কী হয়েছে!
তোমার নখর দিয়ে,
খামচে ধরে উড়বে আমায় নিয়ে।
মেঘের কাছে পৌঁছে যেতেই
ছাড়বে নিচে আমায়
ইচ্ছে মতো ওড়বো তখন
কে আর নিচে নামায়!
দেখবো নিচে সাগর,পাহাড়,
দেখবো বনভূমি,
একটু দয়া কর যদি তুমি।
বলছি শোনো, বললো ঈগল
আরো কাছে এসে,
পাখা ছাড়া ক্যামনে বলো
থাকবে ভেসে ভেসে!
ঝড়ের বেগে পড়বে নিচে
প্রাণ যাবে বেঘোরে,
কী লাভ তবে এমন ওড়া ওড়ে!
শুনেই রেগে কচ্ছপে কয়,
ওড়তে আমি পারি,
শুধুই তুমি করছো বাড়াবাড়ি।
হিংসে তুমি করছো বুঝি
ওড়বো আমি তাই?
তোমার মতো হিংসুটে আর নাই।
বলছো কী ভাই, কষ্ট পেলাম মনে!
ভাবলে তুমি এমন করে
কখন, কী কুক্ষণে!
তোমার ভালোর জন্যে আমার
এসব ছিলো বলা,
ছিলো না তো মোটেই ছলাকলা।
যার যেখানে জন্ম এবং ঠাঁই
তা যদি কেউ ঘৃণা করে
অন্য কিছু চাই-
জীবনে তা মস্তবড় ভুল,
মিথ্যে নয় একচুল।
ইচ্ছে তোমার পূরণ হবে
ওড়বো মিলে দুয়ে
দিগন্তনীল ছুঁয়ে।
কী যে ভালো লাগছে আমার
আনন্দ না ধরে,
বললো হেসে, কচ্ছপ তাই –
প্রাণটা গেলো ভরে।
বললো ঈগল, ওড়বো এখন
ধরছি তোমার গায়,
নখর দিয়ে ঝুলিয়ে নেবো
আমার দুটি পায়।
ভয় পেয়ো না দেখবে চেয়ে
আকাশ,নীল আর মাটি,
কী অপরূপ খাঁটি!
কী যে বলো ঈগল ভায়া
ভয় পাবো ক্যান ভয়!
সয় না দেরি,ওড়বো চলো,
করবো আকাশ জয়।
চললো ওড়ে পেছন ফেলে
জলাভূমি, ঘাট,
বনবনানী, মাঠ।
কী আনন্দ! দেখছি নিচে,
লাগছে শীতল হাওয়া,
কচ্ছপে কয়,এ যে আমার
অনেক বড় পাওয়া।
কচ্ছপের এই ওড়া দেখে
মাঠে ছেলের দল,
হাসলো এবং করলো কোলাহল।
রেগে গিয়ে তাই সে বলে –
সয় না গায়ে তা যে,
বিচ্ছিরি সব বাজে।
এবার আমায় দাও ছেড়ে দাও
ওড়বো আমি একা,
ইচ্ছে যেথায় যাবো ওড়ে
ফিরলে হবে দেখা।
ছেলেরা সব দেখুক আমি স্বাধীন,
একা একাই ওড়তে পারি,
নাচতে পারি তাধিন।
কথামতো অমনি ঈগল
নখর দিলো খুলে,
পড়লো নিচে অহংকারী
নিজের চরম ভুলে।
ঈগল দেখে বিস্ময়ে
কী ভয়ানক দৃশ্য এ!
আছড়ে পড়ে মাঠের বুকে
চূর্ণ হলো হাড়,
প্রাণ হারানো কচ্ছপ তার
হয়নি ওড়া আর।
(লেখক : শিক্ষার্থী, প্রাণিবিদ্যা বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।)
খুলনা গেজেট/এমএম