খুলনা, বাংলাদেশ | ১৪ পৌষ, ১৪৩১ | ২৯ ডিসেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে এক জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ১০৪
  বগুড়ায় ট্রাকচাপায় বাবা-মেয়েসহ নিহত ৩
  আগামী বিজয় দিবসের আগে জুলাই গণহত্যার বিচার সম্পন্ন করা হবে : আসিফ নজরুল

‘ওই সময় মনে হচ্ছিল আমিও আবরার ফাহাদের মতো মরে যাব’

গেজেট ডেস্ক 

যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) শাহরিন রহমান প্রলয় (২৪) নামের এক শিক্ষার্থীকে হলের কক্ষে রাতভর শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। মঙ্গলবার (৪ জুন) রাতে যবিপ্রবির শহীদ মসিয়ূর রহমান হলের ৩০৬ নম্বর কক্ষে এ ঘটনা ঘটে। বুধবার (৫ জুন) বিকেলে আহত শিক্ষার্থী শাহরিন রহমানকে যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আহত শাহরিন রহমান শারীরিক শিক্ষা ও ক্রীড়া বিজ্ঞান (পিইএসএস) বিভাগের শিক্ষার্থী।

ভুক্তভোগী ওই শিক্ষার্থীর অভিযোগ, কিছুদিন আগে তাকে মেরে মাথা ফাটিয়ে দেওয়ার ঘটনায় অভিযোগ দেওয়ায় পুনরায় তার ওপর যবিপ্রবির শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সোহেল রানাসহ ১০-১৫ জন বিশ্ববিদ্যালয়ের বহিষ্কৃত ছাত্র ও ছাত্রলীগ নেতারা পরিকল্পিতভাবে শারীরিক নির্যাতন চালিয়েছে।

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী শাহরিন রহমান প্রলয় গণমাধ্যমকে বলেন, গত সোমবার কথা-কাটাকাটির জেরে আমাকে মাথা ফাটিয়ে দেওয়ায় ঘটনায় বিচার চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ দিয়েছিলাম। এর জেরে মঙ্গলবার দিবাগত রাত ২টার দিকে আমার বন্ধু আমিনুল ইসলাম ও সিয়াম আমাকে ঘুম থেকে ডেকে তুলে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সোহেল রানা ভাইয়ের নির্দেশে তার ৩০৬ নম্বর কক্ষে ডেকে নিয়ে যায়। ওই কক্ষে প্রবেশ করার সাথে সাথেই প্রায় ১০-১৫ জন আমার উপর অতর্কিত হামলা করে।

এসময় এলোপাতাড়ি কিল ঘুষি মারলে রুমের মেঝেতে লুটিয়ে পড়ি। তখন তারা আমাকে পা দিয়ে লাথি দিতে থাকে। তারা আমাকে বলতে থাকে কেন প্রক্টরের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছিস? আমার মোবাইল কেড়ে নিয়ে আমার ব্যক্তিগত তথ্য হাতিয়ে নেয়। এক পর্যায়ে তারা আমাকে মোটা রড দিয়ে আমার সারা শরীরে রাতভর পেটাতে শুরু করে। ভোর ৫টা পর্যন্ত চলে দফায় দফায় এমন নির্যাতন। ওই সময় আমার মনে হচ্ছিল আমিও মনে হয় আবরার ফাহাদের মতো মরে যাব।

মারধরের ঘটনায় আশিকুজ্জামান লিমন, ইসাদ, রায়হান রহমান রাব্বি, বেলাল হোসেন, শেখ বিপুল, রাইসুল হক রানাসহ আরও কয়েকজন অভিযুক্ত করেন ওই শিক্ষার্থী।

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী শাহরিন আরও বলেন, প্রাণে বাঁচতে আমি শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি সোহেল রানা ভাইয়ের পা জড়িয়ে ধরে বাঁচার আকুতি জানাই। এসময় ভাই বলেন, কালকের মধ্যে অভিযোগ তুলে নিবি, না হলে তোকে গুলি করে মারবো। ভোর হওয়ার সাথে সাথে ব্যাগ গুছিয়ে বাড়ি চলে যাবি। ক্যাম্পাসে যেন তোকে আর না দেখি। এরপর যেন কাউকে জানাতে না পারি সেজন্য আমার বন্ধু আমিনুল ইসলাম আমার ফোনটি নিয়ে রেখে দেয়।

এদিকে এ ঘটনা জানাজানি হয়ে পড়লে চাপে পড়ে দুপুরের দিকে শাহরিনকে তার গ্রামের বাড়ি কালীগঞ্জে পৌঁছে দেয় তার সহপাঠীরা। এ ব্যাপারে যবিপ্রবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সোহেল রানাকে একাধিকবার মোবাইল ফোনে কল দিলেও তার ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।

এদিকে বুধবার রাতে যবিপ্রবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন যশোর জেনারেল হাসপাতালে আহত শাহরিন রহমান প্রলয়কে দেখতে আসেন। এ সময় তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে শাহরিনের সব চিকিৎসা খরচ বহন করার কথা জানান। উপাচার্য সাংবাদিকদের বলেন, ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী আমার কাছে মৌখিকভাবে অভিযোগ জানিয়েছে। তাকে এতই ভীতসন্ত্রস্ত মনে হচ্ছিল যে কথা বলতে পারছিল না। সে জানিয়েছে তাকে আবরার ফাহাদের মতো মারা হয়েছে। এ ঘটনায় যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

তিনি আরও বলেন, যারা এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত তারা প্রত্যেকেই আগেও এ ধরনের কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিল। আমি প্রশাসনকে অবগত করেছি। এ সব বহিষ্কৃতরা কীভাবে হলের মধ্যে থাকতে পারে এ বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে দ্রুত এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তাদেরকে আমি বের করতে অক্ষম, কিন্তু আমি দ্রুত সক্ষম হব।

প্রসঙ্গত, সোমবার (৩ মে) ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থী শাহরিন রহমানের মাথা ফাটিয়ে দেওয়ার ঘটনায় একই বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী শাহীনুরের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বরাবর অভিযোগ দেন শাহরিন।

খুলনা গেজেট/এএজে




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!