লন্ডনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে বৈঠকে সংস্কারের অগ্রগতি সাপেক্ষে আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে বলে যে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে, তা ঐকমত্য কমিশনের প্রতিবেদন সাপেক্ষে বাস্তবায়ন করা হবে। কমিশন সংস্কার নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্যের অগ্রগতি জানালে, সরকার নির্বাচনে সম্ভাব্য সময় ঘোষণা করবে।
বৃহস্পতিবার ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ ও বিশেষ সহকারী মনির হায়দারের সঙ্গে বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এসব কথা বলেছেন। বৈঠক সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। মনির হায়দার প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনায় অনুষ্ঠিত বৈঠকের বিষয়ে ঐকমত্য কমিশন ও প্রেস উইং থেকে আনুষ্ঠানিক বক্তব্য দেওয়া হয়নি। ড. ইউনূস ঐকমত্য কমিশনের সভাপতি। সংবিধান, নির্বাচন, বিচার বিভাগ, জনপ্রশাসন এবং দুদক সংস্কারে কমিশনের ১৬৬ সুপারিশে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্য প্রতিষ্ঠায় সংলাপ চলছে। ঐকমত্যের ভিত্তিতে হবে জুলাই সনদ। এতে বলা থাকবে, কীভাবে সংস্কার করা হবে। এতে সই থাকবে দলগুলোর।
প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের একটি সূত্র জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত বৈঠক হয়। আলী রীয়াজ সংস্কার এবং সংলাপের অগ্রগতি তুলে ধরেন।
গত ১৩ জুন লন্ডনে ড. ইউনূসের সঙ্গে তারেক রহমানের বৈঠকের যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, ‘সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা গেলে ২০২৬ সালের রমজান শুরু হওয়ার আগের সপ্তাহেও নির্বাচন আয়োজন করা যেতে পারে।’
প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় সূত্র জানিয়েছে, প্রধান উপদেষ্টা বৃহস্পতিবারের বৈঠকে বলেছেন, ‘লন্ডন ঘোষণার বাস্তবায়ন হবে ঐকমত্য কমিশনের প্রতিবেদনে। সংলাপে দলগুলো সংস্কারের সুপারিশে কতটা একমত হয়েছে, এ বিষয়ে প্রতিবেদন দেবে কমিশন। কী কী সুপারিশে ঐকমত্য হয়েছে, তা জানার পর নির্বাচনের দিনক্ষণ জানানো হবে। এর পর নির্বাচন কমিশন ত্রয়োদশ সংসদের ভোটের রোডম্যাপ ঘোষণা করবে।’
দ্বিতীয় ধাপে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ১১ দিন সংলাপ হয়েছে। সাংবিধানিক নিয়োগে প্রধানমন্ত্রীর একচ্ছত্র ক্ষমতা খর্ব করার লক্ষ্যে নিয়োগ কমিটি করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে বিএনপি রাজি হয়নি। বৃহস্পতিবারের বৈঠক সূত্র জানিয়েছে, প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোয় নিয়োগ কীভাবে হবে, তা সংবিধানে নিশ্চিত করতে হবে। তা না হলে, ভবিষ্যতে যে যার মতো করে নিয়োগ দেবে। এমন করে সংস্কার করতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে কেউ তা ছুড়ে ফেলতে না পারে।
দ্বিকক্ষের সংসদ গঠনে রাজনৈতিক দলগুলো একমত হলেও, উচ্চকক্ষের সদস্যরা কীভাবে নির্বাচিত হবেন, এ বিষয়ে ঐকমত্য হয়নি। বিএনপি চায়, নিম্নকক্ষের আসনের অনুপাতে উচ্চকক্ষের আসন বণ্টন হবে। জামায়াতে ইসলামী, এনসিপিসহ অধিকাংশ দল চায় সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রাপ্ত ভোটের অনুপাতে হবে আসন বণ্টন।
বৃহস্পতিবারের বৈঠকে এ বিষয়েও কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, সংস্কারের সংলাপ বাংলাদেশ টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচার করায়, তিনি তা দেখেন এবং নজর রাখেন। কোন দল কী বলছে, শোনেন। অত্যন্ত সুখের বিষয় রাজনৈতিক নেতারা একসঙ্গে সৌহার্দ্যপূর্ণ আলোচনা করছেন।
বৈঠক সূত্র জানিয়েছে, নারী আসনে সরাসরি নির্বাচন কীভাবে হবে– তা নিশ্চিত করতে বলেছেন প্রধান উপদেষ্টা।
গত বুধবার ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বৈঠক করেছে নির্বাচন কমিশন। এ বৈঠক নিয়েও জানতে চান সরকার প্রধান।
খুলনা গেজেট/এইচ