‘এ্যাহোন এট্টু মাথা গুজার ঠাই হইছে। জীবনে যে কতো কষ্ট করিছি তা বলে কয়ে শেষ হবে নানে। পরের বাড়ি কাজ করে আমাগে সংসার চলে। কেউ কাজ না কললি খাতি দে না থাকতিও দে না। খালি শুনতাম সরকারি টাহা আসে, ঘর আসে, চাল আসে। আমিতো পাবো নানে তাই চুপ করে থাকতাম। কিন্তু কি কবো আমাগো প্রধানমন্ত্রী সে নাকি জাগে ঘর নেই তাগে খালি খালি ঘর দিচ্ছে। পরে আমাগেও এটটা টিনির ঘর টাহা ছাড়া দিছে। সাথে জমিও আছে। আমি জীবনে আর কিছু চাইনা।” কথাগুলো দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বলছিলেন রামপাল উপজেলার গৌরম্ভা ইউনিয়নের হতদরিদ্র হানিফ শেখের স্ত্রী রত্মা বেগম। দুই ছেলে মেয়ে আর স্বামী নিয়ে এখন সুখেই দিন কাটাচ্ছেন দিনমজুর হানিফ শেখ।
কাজ করতে গিয়ে বহু বছর আগে হানিফের চোখে লোহার রড ঢুকে একেবারেই নষ্ট হয়ে যায় তার বামচোখ। অসহায়ত্বের বোঝা নিয়ে হেরে জাননি তিনি বরং দিনমজুরি কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন হানিফ। প্রধানমন্ত্রীর উপহার সেমিপাকা ঘর পেয়ে স্ত্রী ও সন্তান নিয়ে বসবাস করে শান্তিতেই দিন কাটাচ্ছেন তারা।
তাদের মতো হতদরিদ্র মোঃ হামিদ হাওলাদার বলেন, ‘আমরা আগে থাকতাম আমার শোউর বাড়ি। মানুষ কতো অপমান কত্ত, গালি দিতো কিন্তু কিছুই করার ছিলো না আমাগে। কনে জাবো, কি করবো। ছোট ছোট দুই মেয়ে নিয়ে তাই অপমান আর গালি শুনে থাকতাম শোউরবাড়ি। এ্যাহোন আমাগে দিন ফিরে গেইছে। অনেক ভালো আছি। কাজ করি, খাই আর পরিবার নিয়ে সুমায় কাটাই।’ ভুক্তভোগী হতদরিদ্র হুমায়ুন শেখের স্ত্রী আরর্জিনা বেগম, জরিনা বেগম, মোঃ আব্দুর রউফ ইজারদার, তামিদুল শেখ ও মোঃ হানিফ শেখ একই কথা বলেন তারা।
বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার গৌরম্ভা ইউনিয়নে মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে রামপাল উপজেলায় আশ্রয়ন-২ প্রকল্পের আওতায় গৃহহীন ও ভূমিহীনদের মাঝে সেমিপাকা ঘর নির্মাণ করা ২ শতাংশ জমির উপর নির্মিত বাড়িটিতে রয়েছে দুটি কক্ষ, একটি বারান্দা, রান্নার জায়গা ও একটি টয়লেট। প্রতিটি বাড়ি নির্মাণ ব্যয় হয়েছে ১ লাখ ৭৫ হাজার টাকা।
এবিষয়ে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোঃ মতিউর রহমান বলেন, মুজিব বর্ষের অঙ্গীকার কেউ থাকবেনা গৃহহীন আর। প্রধানমন্ত্রীর সেই অঙ্গীকার হিসাবে বাগেরহাটের রামপালে প্রকৃত যাচাই বাছাইয়ের মাধ্যমে হতদরিদ্র ও ভূমিহীনদের মাঝে আধাপাকা নির্মিত এই ঘরগুলো আমরা প্রকৃত ভূমিহীনদের মাঝে বিতরণ করেছি। ভুক্তভোগীরা ঘর পেয়ে খুশি। তারা বর্তমানে নির্মিত সেই ঘরে বসবাস করছেন। তবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আপনাদের মাধ্যমে জানাতে চাই যেহেতু বাগেরহাট তথা রামপাল উপজেলা ঘুর্ণিঝড় প্রবণ এলাকা তাই ঘরের কাঠামা আরো একটু উন্নত করে দূর্যোগ সহনশীল করলে হয়তো আরো একটু ভালো ও মজবুত হতো। এছাড়া আমি সর্বদাই প্রাপ্তি ঘর মালিকদের সাথে তাদের খোঁজখবর নিচ্ছি। ঈদ উপহার সিসাবে প্রতিটি পরিবারকে আমরা দশ কেজি করে চাউল দিয়েছি। নির্মিত ওই ঘরের পাশে নতুন করে ১ লক্ষ ৯০ হাজার টাকা ব্যয় আরো ১৫ টি এবং দুটি ইউনিয়নে মোট ৪০ টি আধাপাকা ঘর নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ কবির হোসেন বলেন, প্রধানমন্ত্রীর অঙ্গীকার হিসাবে বাগেরহাটের রামপাল উপজেলায় হতদরিদ্র ও ভূমিহীনদের মাঝে আধাপাকা ঘরগুলো আমরা ইতিমধ্যে ভুক্তভোগীদের মাঝে হস্তান্তর করেছি। তারা এখন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া ওই ঘরেই বসবাস করছেন। তাছাড়া উপজেলার বাঁশতলী ইউনিয়নের বড়দিয়া গ্রামে ১৫ টি, মল্লিকেরবেড় ইউনিয়নের বেতিবুনিয়া গ্রামে ১০ টি ও গৌরম্ভা ইউনিয়নে আরো ১৫ টি আধাপাকা ঘর নির্মাণ করছি। আশাকরি আর কিছু দিনের মধ্যেই ঘরগুলির নির্মাণ কাজ শেষ হবে এবং ২০ জুন প্রধানমন্ত্রী এই ঘরগুলো উদ্বোধন করবেন। পাশাপাশি প্রাপ্ত ঘর মালিকদের সাথে উপজেলার প্রশাসন তাদের দেখ ভাল ও খোঁজ খবর প্রতিনিয়তই করছে।
খুলনা গেজেট/এমএইচবি