দলিত জনগোষ্ঠীর মানবাধিকার সংরক্ষণে সরকারকে অবিলম্বে “বৈষম্য বিলোপ আইন” দ্রুত প্রণয়ন করতে হবে; উক্ত আইন বাস্তবায়নে দলিতদের অংশ গ্রহন নিশ্চিত করতে হবে। চাকরি ও সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির ক্ষেত্রে সংবিধানের অনুচ্ছেদ ২৯(৩) অনুযায়ী দলিতদের জন্য কোটা বরাদ্ধ করতে হবে এবং শিক্ষার মান উন্নয়নে শিক্ষা বৃত্তি প্রদানসহ বিশেষ ব্যবস্থা নিতে হবে।
আজ মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টায় বি এম এ মিলনায়তনে দলিত ও জনউদ্যোগ,খুলনার উদ্যোগে এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন বনাম দলিত জনগোষ্ঠীর মানবাধিকার প্রতিষ্টায় বৈষম্য বিলোপ আইনের প্রাসংঙ্গিকতা শীর্ষক আঞ্চলিক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।
প্রধান অতিথি ছিলেন খুলনা -৬ আসনের সংসদ সদস্য মোঃ আকতারুজ্জামান বাবু। বিশেষ অতিথি ছিলেন বিএমএ’র সভাপতি ডাঃ শেখ বাহারুল আলম, জনউদ্যোগ খুলনা নারী সেলের আহবায়ক এ্যাডঃ শামীমা সুলতানা শীলু , সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি হুমায়ুন কবির ববি, সম্মিলিত দৃর্নীতি বিরোধী জোটের আহবায়ক জাহাঙ্গীর আলম ও কালের কন্ঠের সিনিয়র সাংবাদিক নিখিল ভদ্র।
বক্তারা বলেন, দেশের প্রায় ১ কোটি দলিত মানুষের স্বার্থ সুরক্ষায় জাতীয় দলিত কমিশন গঠন করতে হবে। আদমশুমারি বা জাতীয় জরিপে পৃথকভাবে দলিত জনগোষ্ঠীকে গগনা করতে হবে। দলিত জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে সরকারের ঘোষিত ও গৃহীত উদ্যোগের পূর্ণাঙ্গ ও দ্রত বাস্তবায়ন করতে হবে। সরকারের গৃহায়ন কর্মসুচি এ দলিত জনগোষ্ঠীকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। আমাদের বর্তমান আবাসন গুলো মেরামত করতে হবে সেগুলোতে নাগরিক সকল সুুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। দলিত জনগোষ্ঠীর জন্য খাস জমি স্থায়ী বন্দোবস্ত দিতে হবে। বর্তমানে বসবাসরত জায়গায় স্বল্প মুল্যে গৃহ নির্মাণ করে দলিতদের মধ্যে স্থায়ী বরাদ্ধ দিতে হবে। দলিত ও জনউদ্যোগের আঞ্চলিক সেমিনারে বক্তারা এই তোলেন।
আঞ্চলিক সম্মেলনে বক্তারা আরও বলেন, বাংলাদেশে বসবাসরত প্রায় এক কোটি দলিত ও হরিজন জনগোষ্ঠীর মানুষ বাস করে। বাংলাদেশে এই বিংশ শতাব্দীতেও দলিত হরিজন স¤প্রদায় প্রতিনিয়ত অস্পৃশ্যতার শিকার হয়। দারিদ্র্য, প্রান্তিকতার মাত্রা, রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক বৈষম্য, অস্পৃশ্যতা, ঘৃণা, সমাজ বিচ্ছিন্নতা, মর্যাদাহীনতা, পেশাচ্যুতি, রাষ্ট্রীয় পরিষেবা না পাওয়া ইত্যাদি নানাবিধ বঞ্চনার শিকার হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করতে হয়।
জন্মগত ও পেশাগত পরিচয়ের কারনে বৈষম্যের শিকার জাতিগোষ্ঠী যথা ঋষি, কায়পুত্র, জলদাস, হরিজন, বেহারা, জেলে, দাই, ধোপা, নিকারী, শিকারী, হাজাম, কলু ইত্যাদি মানুষেরা তথাকথিত সমাজ ব্যবস্থায় দলিত, নিম্মবর্ণ নামে পরিচিত। আমাদের স্বপ্ন ছিল সদ্য স্বাধীন দেশে আমরা সম্মানের সহিত সকল ধরনের সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক অসাম্য ও অবহেলা থেকে মুক্ত ভাবে জীবন যাপন করতে পারবে। কিন্তু নির্মম হলেও সত্য এই নিম্ম বর্ণের মানুষেরা এখনও সমাজ কর্তৃক নিগৃহীত। তারা এ দেশের নাগরিক হয়েও শুধু মাত্র নিম্মবর্ণে জন্মগ্রহণ করার কারণে অত্যন্ত মানবেতর জীবন যাপন করছে।
সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েই তাদের জীবন যাপন করতে হয়। এই বিচ্ছিন্নতা রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং মানসিক। অন্য জনগোষ্ঠীর সাথে মিশবার, নলকুপ থেকে পানি নেবার, সামাজিক অনুষ্ঠানে যোগ দেবার এবং ন্যায়বিচার ও নিরাপত্তা পাবার অধিকার থেকে তারা বঞ্চিত।
দেশের সার্বিক উন্নয়ন যখন ত্বরান্বিত হচ্ছে এবং বিশ্ব মানচিত্রে বাংলাদেশ এর পতাকাকে সুপ্রতিষ্ঠিত হচ্ছে ঠিক তখনই তাদের ন্যায় দলিত হরিজন জনগোষ্ঠী মৌলিক অধিকার বঞ্চিত হয়ে মানবেতর জীবন যাপনের মধ্য তাদের জীবন ও জীবিকা অতিবাহিত হচ্ছে। সূত্র : প্রেস বিজ্ঞপ্তি।
খুলনা গেজেট/কেএম