জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন বিএনপির সাতজন সংসদ সদস্য। রোববার জাতীয় সংসদ সচিবালয়ে সশরীরে পাঁচজন উপস্থিত হয়ে এবং দুইজনের পক্ষে এই পদত্যাগপত্র জমা দেওয়া হয়। স্পিকার তাঁদের মধ্যে ছয়জনের পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেছেন।
তবে বিদেশে থাকা চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য হারুন অর রশীদের পদত্যাগপত্র গ্রহণ করা হয়নি বলে জানিয়েছেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী।
এ বিষয়ে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, হারুনুর রশীদ পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছেন ই-মেইলে, তার সই স্ক্যান করে বসানো হয়েছে। এটা গ্রহণ করা হবে না। তাকে আবার পদত্যাগপত্র পাঠাতে হবে।
এর আগে রোববার বেলা ১১টার দিকে জাতীয় সংসদ সচিবালয়ে গিয়ে পদত্যাগপত্র জমা দেন বিএনপির সংসদ সদস্যরা। সশরীরে পদত্যাগপত্র দেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনের মো. আমিনুল ইসলাম, বগুড়া-৪ আসনের মো. মোশাররফ হোসেন, বগুড়া–৬ আসনের গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ, ঠাকুরগাঁও-৩ আসনের জাহিদুর রহমান এবং সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য রুমিন ফারহানা।
তবে বিদেশে থাকায় চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য হারুন অর রশীদ এবং অসুস্থতার কারণে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের সংসদ সদস্য আবদুস সাত্তার সশরীরে উপস্থিত ছিলেন না। তবে তাদের পক্ষে স্পিকারের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেন ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা।
সংবিধানের সংশ্লিষ্ট ধারা উল্লেখ তরে স্পিকার বলেন, পদত্যাগপত্র সশরীরে এসে জমা দিতে হবে এমন কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। যে পাঁচজন পদত্যাগপত্র নিয়ে এসেছেন তাঁদের আসন শূন্য হয়ে গেছে। বাকি দুটি আবেদনের সই যাচাই করা হবে এবং তারাই পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছেন কি না, সংসদ সচিবালয় তা খোঁজ নেবে। তবে হারুনুর রশীদ পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছেন ইমেইলে, তাঁর সই স্ক্যান করে বসানো হয়েছে। এটা গ্রহণ করা হবে না, তাঁকে আবার পদত্যাগপত্র দিতে হবে। তিনি জানান, সংশ্লিষ্ট আসনগুলো শূন্য ঘোষণা করে সংসদ সচিবালয় প্রজ্ঞাপন জারি করবে।
আইন অনুযায়ী ই-মেইলে পদত্যাগপত্র পাঠালে তা আমলযোগ্য হওয়ার সুযোগ নেই। কার্যপ্রণালি বিধি অনুযায়ী, নিজের হাতে লিখিতভাবে পদত্যাগপত্র জমা দিতে হবে।
সংসদের আইন শাখার কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সংসদের কার্যপ্রণালি বিধিতে (বিধি ১৭৭) বলা আছে, সংসদ থেকে কোনো সদস্য পদত্যাগ করতে চাইলে স্পিকারকে সম্বোধন করে নিজের হাতে লিখিত আবেদনে জানাবেন- তিনি পদত্যাগ করতে চান। পদত্যাগের জন্য সংশ্নিষ্ট এমপি কোনো কারণ দেখাতে পারবেন না। এই বিধির শর্তাংশে বলা আছে, কোনো সদস্য যদি কোনো কারণ উল্লেখ করেন, অপ্রাসঙ্গিক কোনো বিষয়ের অবতারণা করেন, তাহলে স্পিকার নিজের বিবেচনামতে ওই শব্দ বাদ দিতে পারবেন এবং তা সংসদের বৈঠকে পড়ে শোনাবেন।
একইভাবে ‘সংবিধানের ৬৭(২) অনুচ্ছেদে বলা আছে, ‘কোন সংসদ সদস্য স্পিকারের নিকট স্বাক্ষরযুক্ত পত্রযোগে স্বীয় পদত্যাগ করিতে পারিবেন এবং স্পিকার কিংবা স্পিকারের পদ শূন্য থাকিলে বা অন্য কোন কারণে স্পিকার স্বীয় দায়িত্ব পালনে অসমর্থ হইলে ডেপুটি স্পিকার যখন উক্ত পত্র প্রাপ্ত হন, তখন হইতে উক্ত সদস্যের আসন শূন্য হইবে।’
২০০৯ সালের দশম সংসদ থেকে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী তানজিম আহমেদ সোহেল তাজ যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করে তাঁর সহকারীর মাধ্যমে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছিলেন। দীর্ঘদিন স্পিকারের দপ্তর তা গ্রহণ করেননি। ওই সময়ের স্পিকার (বর্তমান রাষ্ট্রপতি) আবদুল হামিদ জানিয়েছিলেন, সোহেল তাজ সশরীরে এসে পদত্যাগপত্র জমা দিলে তা গ্রহণ করা হবে। পরে তিনি নিজে এসে পদত্যাগপত্র জমা দেন।
দেশের সংসদীয় রাজনীতির ইতিহাসে এর আগে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে ১৯৯৪ সালের ২৮ ডিসেম্বর পঞ্চম জাতীয় সংসদের ১৪৭ বিরোধী দলীয় সদস্য একযোগে পদত্যাগ করেন। এদিন আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি, জামায়াতে ইসলামী ও এনডিপির সদস্যরা স্পিকারের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেন।
তৎকালীন স্পিকার শেখ রাজ্জাক আলী পদত্যাগপত্র গ্রহণে অস্বীকৃতি জানিয়ে রুলিং দেন। বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে তিনি পদত্যাগপত্র অগ্রহণযোগ্য বলে আখ্যায়িত করেন। তবে পরে টানা ৯০ দিন সংসদের বৈঠকে অনুপস্থিতির কারণে তাঁদের আসনগুলো শূন্য ঘোষণা করা হয়েছিল।
এদিকে, নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর জানিয়েছেন, বিএনপির এমপিরা পদত্যাগ করায় তাদের আসনগুলো শূন্য ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ হলে বিধি অনুযায়ী সেখানে উপনির্বাচনের ব্যবস্থা করবে নির্বাচন কমিশন।