খুলনা, বাংলাদেশ | ৫ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২০ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ৫ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ১০৩৪
  যাত্রাবাড়িতে ব্যাটারিচালিত অটো রিকশাচালকদের সড়ক অবরোধ, সংঘর্ষে দুই পুলিশ আহত

‘এমপির মারধরের শিকার’ অধ্যক্ষ লাপাত্তা, তদন্ত কমিটি গঠন

গেজেট ডেস্ক

রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) আসনের সরকার দলীয় সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরীর বিরুদ্ধে এক কলেজ অধ্যক্ষকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে। আরো কয়েকজন কলেজ অধ্যক্ষের সামনে নিজ নির্বাচনী এলাকা গোদাগাড়ীর ওই অধ্যক্ষকে তিনি শারীরিকভাবে নাজেহাল করেন বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে।

মারধরের শিকার সেলিম রেজা রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার রাজাবাড়ী ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ। ৭ জুলাই ওই ঘটনার পর তিনি একাধিক ব্যক্তির কাছে এ ঘটনা বলেছেন। কিন্তু রহস্যজনক কারণে পরে তিনি নিজেকে আড়াল করে রেখেছেন। বুধবার তার বাড়িতে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। এমনকি সাংবাদিকদের ফোনও রিসিভ করছেন না।

সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহী নগরীর নিউমার্কেট সংলগ্ন এমপি ওমর ফারুক চৌধুরীর মালিকানাধীন থিম ওমর প্লাজায় ব্যক্তিগত চেম্বারে ৭ জুলাই রাতে অধ্যক্ষকে মারধর করেন এমপি। এ সময় গোদাগাড়ী উপজেলার বিভিন্ন কলেজের আরও কয়েকজন অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষ উপস্থিত ছিলেন।

সূত্র জানায়, গোদাগাড়ীর মাটিকাটা কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক আব্দুল আউয়াল রাজু ফোন করে বিভিন্ন কলেজের অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষদের ৭ জুলাই রাত ৯টার দিকে থিম ওমর প্লাজায় এমপির চেম্বারে উপস্থিত হতে বলেন। অধ্যক্ষ রাজু এমপির ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত।

ফোন পেয়ে রাজাবাড়ী ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ সেলিম রেজা ছাড়াও আরো আটজন অধ্যক্ষ-উপাধ্যক্ষ এমপির চেম্বারে হাজির হন। সেখানে এমপি অধ্যক্ষ সেলিম রেজার কাছে জানতে চান তার কলেজের কতিপয় শিক্ষক একজন অধ্যক্ষ ও দলীয় নেতার স্ত্রীকে নিয়ে অশ্লীল কথাবার্তা বলেছেন। প্রিন্সিপাল হিসেবে তিনি কী ব্যবস্থা নিয়েছেন।

জবাবে অধ্যক্ষ সেলিম বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে কিছু জানি না। যদি আপনার কাছে প্রমাণ থাকে আমি তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেব।’

এ সময় এমপি তার ফোনের রেকর্ড অন করে একটি অডিও অধ্যক্ষ সেলিমকে শুনতে বলেন। এরই মধ্যে এমপি ফারুক চৌধুরী সেলিম রেজাকে এলোপাতাড়ি মারধর শুরু করেন। এক পর্যায়ে উপস্থিত অধ্যক্ষদের একজন তাকে তাকে এমপির কব্জা থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে চেম্বার থেকে বের হয়ে আসেন। পরে আহত সেলিম রেজাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে কয়েকজন স্বজন ও সহকর্মীরা বাসায় পাঠিয়ে দেন।

অধ্যক্ষ সেলিম রেজাকে মারধরের এ ঘটনার সময় গোদাগাড়ী মহিলা কলেজের উপাধ্যক্ষ শহিদুল করিম শিবলী, কাঁকনহাট ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ মো. সুজাউদ্দিন, পাকড়ি ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুল গাফ্ফার, চব্বিশনগর স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ আহসান হাবিব, প্রেমতলি ডিগ্রি কলেজের উপাধ্যক্ষ আবু নুর মাহমাদুল হাসান হিরো, গোদাগাড়ী ডিগ্রি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ উমরুল হক, মাটিকাটা ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুল আউয়াল রাজু ও উপাধ্যক্ষ মজিবুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।

ঘটনাটি ৭ জুলাই রাতের হলেও তা বুধবার বিভিন্নভাবে প্রকাশ হয়ে পড়ে।

বুধবার সকালে হোয়াটসঅ্যাপে অধ্যক্ষ সেলিম রেজার সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি ফোনে কিছু বলতে চাননি। কথা বলার জন্য তিনি বাসায় যেতে বলেন। দুপুর ১২টার দিকে রায়পাড়ার বাড়িতে গিয়ে প্রায় এক ঘণ্টা ধরে ডাকাডাকি করলেও তিনি বা বাড়ির কেউ বেরিয়ে আসেননি। কেউ বাড়ির দরজা খোলেননি। এরপর থেকে বহুবার ফোন করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

রাজশাহী জেলা কলেজ শিক্ষক সমিতির সভাপতি শফিকুর রহমান বাদশার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘ঘটনা শোনার পর সেলিম রেজার সঙ্গে ফোনে কথা বলেছি। ওইদিনের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে সেলিম রেজা আমাকে জানিয়েছেন এমপি নিজেই তাকে এলোপাতাড়ি পিটিয়েছেন। অন্য শিক্ষকদের সামনে তাকে কিল-ঘুষি ছাড়াও হকিস্টিক দিয়ে পিটিয়েছেন। কিন্তু ভয়ে কেউ মুখ খোলেনি। এ বিষয়ে আমি তাকে লিখিতভাবে অভিযোগ দিতে বলেছি।’

এই শিক্ষক নেতা বলেন, ‘এটি খুবই দুঃখজনক ঘটনা। তবে সেলিম রেজাকে এখন ফোনে পাওয়া যাচ্ছে না। বাড়িতেও নাকি নেই। আমি লোক পাঠিয়েছিলাম। তাকে একটি লিখিত অভিযোগ দেয়ার জন্য বলছি। লিখিত অভিযোগ পেলে শিক্ষক সমিতি তা নিয়ে মাঠে নামবে। তাছাড়া এমনিতেও শিক্ষক সমিতি বৃহস্পতিবার জরুরি মিটিং করে এ বিষয়ে করণীয় ঠিক করবে।’

এদিকে ৭ জুলাই রাতে ওই ঘটনার সময় উপস্থিত শিক্ষকরাও এ নিয়ে মুখ খুলতে চাননি। তারা এ বিষয়ে কোনো কথা বলতে নারাজ। কয়েকজন ফোন ধরলেও কথা বলতে চাননি। কয়েকজন ফোনই ধরেননি।

গোদাগাড়ী ডিগ্রি কলেজের উপাধ্যক্ষ ইমরুল হক সাংবাদিক পরিচয় শোনার পর জানান, তার এক আত্মীয় মারা গেছেন। এখন লাশের সামনে বসে আছেন। ১৬ তারিখে তিনি কথা বলতে পারবেন।

এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে বুধবার সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরীর নম্বরে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। মোবাইল ফোনে এসএমএস পাঠিয়েও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের তদন্ত কমিটি গঠন

রাজাবাড়ী ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ সেলিম রেজাকে মারধরের ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করেছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। তিন সদস্যের এই কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মোল্লা মাহফুজ আল-হোসেনকে।

বুধবার জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালক (জনসংযোগ দপ্তর) আতাউর রহমানের সই করা সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, অধ্যক্ষ সেলিম রেজাকে মারধরের ঘটনা জানার পরই জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. মশিউর রহমান তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশ দেন। কমিটিকে যত দ্রুত সম্ভব সরেজমিনে গিয়ে ঘটনা সবিস্তার জেনে প্রতিবেদন জমা দেয়ার নির্দেশনা দেন তিনি।




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!