পিছনে ফেলে আসা দিনের এতো ছিলো কদর –
পিতা মাতার মতো শিক্ষকের প্রতি এতো ছিলো; অকৃত্রিম
ভালোবাসা, ভক্তি-শ্রদ্ধা সমাদর।
আগে ছিলো, আত্মীয়স্বজন, মেহমানের সেবা-যত্নের
মানসিকতা – সহমর্মিতা – সোহাগ-আদর।
দেখেছি, সদা শৈশবে, কৈশোরে দাদা-দাদী, নানা-নানীর
দয়া-মায়া, কান্নাভরা মমতা, স্নেহমায়ার আবেগভরা অন্তর।
ছিলোনা তেমন বেতনভাতা, চাকরির যোগ্যতা মাফিক
প্রাপ্যতা, মাসিক অর্থভাতা! চার আনা বা আট আনায়
মিলতো এক দিস্তা সাদা-কাগজ, খাতা, বই কেনা, দাম সস্তা,
– মলাট কতো সুন্দর।
এমন দিন ছিলো, গৃহস্থালী সামগ্রী ছিল, মাটির।
তৈরী, মাটির পাত্র, থালাবাসন, সানকি, ঢাকনা, বদনা,
পাতিল, পেয়ালা, বাটি, হাড়ি। মটকার ছিল প্রচলন।
মামারবাড়ী, শ্বশুরবাড়ী যাতায়াতের ছিলো বাহন –
দু’চাকার গরুর গাড়ী, ঘোড়ার গাড়ী, টমটম। সোয়ারি
ও পালকি। ডিঙ্গি নৌকায় নদীপাড়ের, বাজার করা নিত্য
ভ্রমণ। ছিলনা রিক্সা, বাস, পাকারাস্তা এমন।
ছিলনা লঞ্চ, স্টীমার। কলাগাছ আর বাঁশের, ভোরা,
– কাঠের ভেলায়, নদী-পারাপার। সাতরিয়ে যাওয়া
– আসা বাড়ী ফেরা। দিবা নিশি –
ব্যস্থতা সর্বক্ষণ। কর্মক্লান্তি থাকতো না এমন।
এমন দিন ছিলো, ডাকপিয়নের ঝুলির দিকে চিঠির
জন্য তাকিয়ে থাকতে হতো। চিঠি প্রাপ্তির অপেক্ষায় সর্বক্ষণ।
– অনেক সময় পেরিয়ে যেতো! হেটে যেতে –
হতো বিদ্যালয় বহুদূর। বর্ষায় কর্দমাক্ত, কাঁচামাটির
রাস্তায় পিচ্ছিল পথে তিন মাইল হেটে যাওয়া দৈনিক
এক সংগ্রামী প্রচেষ্টা নিরন্তর। কতো আকাঙ্ক্ষা
পড়াশুনার, জ্ঞান অন্বেষার আগ্রহ অনন্তর।
সেকেলে লণ্ঠন, কুপি বাতি, হারিকেনের আলোয় ঘরে
বসে, স্কুলের পড়া মুখস্থ করতে হতো রাত জেগে
রজনী দ্বিপ্রহর ক্ষণ।
এমন দিন ছিলো, হেন্ডেল কলমে নিব দিয়ে দোয়াতের
কালিতে কাগজে, ঝাঁই এর কালিতে কলাপাতায়
কভু হাতের খড়ি – ‘বর্ণমালা’ লিখন। ছিলনা
বলপেনের প্রচলন। ঝড়ে অন্ধকারে মোমবাতি
জ্বালিয়ে পরীক্ষা দিতে হতো তখন। ছিলনা বিদ্যুৎ
গ্রামে এমন ।
মায়ের মুখ থেকে শুনতাম, ‘বর্ষার ঝর ঝর’ কবিতা
বর্ণবোধের – ‘কর পণ নর গণ’। পংক্তিমালা কতো
– সংকল্প প্রাণের আকুলতা। বড় আশা-বুকের অনল।
মায়ের হাসিতে কতো বাসনা-সুখ-নিরন্তর
– অশ্রু সজল নয়নে – মাতৃ পিতৃ স্নেহের এত আদর।
গ্রামের পথে, ভোরে বকুল ফুলের গন্ধমাখা
শুভ্রতা অপরূপ। মৃদু বাতাস প্রবাহ নির্মল।