গোয়েন্দা পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদ ও মুচলেকা আদায়ের প্রতিবাদে অনলাইন কনটেন্ট ক্রিয়েটর হিরো আলম এবার নিয়ে এসেছেন প্রতিবাদী গান। সেই গানের শিরোনাম তিনি দিয়েছেন ‘আমার জেল হবে না ফাঁসি হবে’।
বুধবার ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা কার্যালয়ে হিরো আলমকে ডেকে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের রাতেই গানের কথাগুলো লেখা। সেটিতে সুর আরোপ করে দুই দিনের মাথাতেই তা প্রকাশ করলেন হিরো।
সেই জিজ্ঞাসাবাদের পর হিরোর কাছ থেকে ভবিষ্যতে আর রবীন্দ্রসঙ্গীত ও নজরুল গীতি না গাওয়ার মুচলেকা আদায়ের বিষয়টি নিয়ে সবচেয়ে বেশি আলোচনা হয়।
ঈদুল ফিতরের পর হিরো তার চ্যানেলে ‘আমারো পরানো যাহা চায়’ গান প্রকাশের পর তুমুল সমালোচনা হয় তাকে নিয়ে। পরে হিরো প্রথমবারের মতো নিজের গান অনলাইন থেকে সরিয়ে নেন। পাশাপাশি বলেন, তিনি উপলব্ধি করেছেন, রবীন্দ্রসঙ্গীত গাওয়া তার উচিত হয়নি। ভবিষ্যতে তিনি আর গাইবেন না।
হিরো অনুতপ্ত হলেও গোয়েন্দা পুলিশ এ বিষয়ে তার কাছ থেকে মুচলেকা আদায়ের পর প্রশ্ন উঠেছে, কোন ক্ষমতাবলে বাহিনীটি এই কাজ করেছে। এটি তাদের এখতিয়ারে পড়ে কি না, তা নিয়ে তুমুল আলোচনা হচ্ছে।
হিরো এও জানিয়েছেন, তার নাম নিয়েও আপত্তি জানিয়ে পুলিশ আলমের সঙ্গে থাকা ‘হিরো’ শব্দটি ছেটে ফেলতে বলেছে। তবে হিরো যে দমবার পাত্র নন, সেটি গানের ভাষাতেই স্পষ্ট।
গানের কলিগুলো এমন: ‘আমার কী হবে গো, জেল হবে না ফাঁসি হবে/কী অপরাধে আমার সরল মনটা কান্দেরে বন্ধু?’
পরক্ষণেই তিনি আবার গেয়ে উঠেন, সারা জীবন সকল কাজে পাইলাম শুধু বাধা/আমাকে আসামি করল ভাগ্যের গোলকধাঁধারে দয়াল, ভাগ্যের গোলকধাঁধা।’
বগুড়ায় ডিশ লাইনের ব্যবসা দিতে গিয়ে স্থানীয়ভাবে ভিডিও ছেড়ে হিরোর কনটেন্ট তৈরির শুরু। পরে ফেসবুকে ভাইরাল হয়ে তৈরি হয় হাস্যরস। তবে দমে না গিয়ে, সমালোচনা গায়ে না মেখে একের পর এক ভিডিও বানাতে থাকেন তিনি। সেই সঙ্গে শুরু করেন গান।
পরে বাংলা ছাড়াও ইংরেজি, হিন্দি, আরবি, চীনা এবং আফ্রিকান সোয়াহিলি ভাষায় গান তিনি। তৈরি করেন সিনেমা। লেখেন বই। জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও অংশ নেন তিনি।
স্পষ্টতই সমালোচনা, কটাক্ষ গায়ে মাখছেন না হিরো আলম। মফস্বল থেকে উঠে এসে রাজধানীর বুকে তিনি অবস্থান নিয়ে যে বেশ আয় করছেন, সেটি তার জীবনাচরণেও ফুটে উঠে। তিনি গাড়ি কিনেছেন, নিয়েছেন অফিসও।
তার জীবনের এই ঘটনার সঙ্গে গানের এই কলি ‘সারা জীবন সকল কাজে পাইলাম শুধু বাধা’র কোনো সম্পর্ক আছে কি না, জানতে চাওয়া হয় হিরোর কাছে।
জবাবে তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ অবশ্যই সেটা, ওটা নিয়ে মনের দুঃখ একটু প্রকাশ করলাম।’
হিরোর গানে আরও বলা হয়, ‘দুনিয়াতে আইসাও আমি পড়লাম রে কোন ফান্দে, কী অপরাধে আমার সরল মনটা কান্দে?’
৪ মিনিট ২৭ সেকেন্ডের গানে আরও বলা হয়, ‘চোরও নয়, ডাকাতও নয়, নয় কালোবাজারি/এই দুনিয়ায় অপরাধের হয় না কোর্টকাচারি রে দয়াল, হয় না কোর্টকাচারি।’
এই গানের শুটিং করতে হিরো আলম বেছে নিয়েছেন কয়েদিদের পোশাক। পায়ে পরেছেন রূপালী রঙের শেকল।
কারাগারের আবহ তৈরি করতে শিকের পেছন থেকে গানটি রেকর্ড করা হয়েছে। লোহা বা অন্য কোনো কিছু দিয়ে সেই শিকের আবহ তৈরি করতে ব্যবহার করা হয়েছে কালো স্পচটেপ।
একেবারে শেষের কলিতে আছে, ‘আমি একজন অধম দেইখা, পায়ে শিকল বান্ধে, কী অপরাধে আমার সরল মনটা কান্দে?’
হিরো আলম সাংবাদিকদের জানান, তাকে গোয়েন্দা পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদ ও নানা ঘটনাপ্রবাহের প্রতিবাদ তিনি করেছেন এই গানের মাধ্যমে।
তিনি বলেন, ‘অনেকে বলে হিরো আলম গান গাইতে পারে না, অনেকে অনেক রকম কথা বলে। তার সুর ভালো না, তাল ভালো না, এই জন্যে গানটা গেয়ে দেখালাম হিরো আলম চাইলেও পারে অনেক কিছু। কিন্তু প্রমাণ করার মতো সুযোগ তারা দেয় না, ভালো করলে বাহবা দেয় না।’