সাতক্ষীরার আগরদাড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বিএনপি নেতা আনারুল ইসলামকে অপহরনের পর গুলি করে হত্যার অভিযোগে সাতক্ষীরার সাবেক পুলিশ সুপার চৌধুরী মঞ্জুরুল কবীর, তৎকালিন সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) কাজী মনিরুজ্জামান, সাতক্ষীরা সদর থানার তৎকালিন ওসি মোঃ ইনামুল হক জেলা আওয়ামীগের সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলামসহ ১৮ জনের বিরুদ্ধ আদালতে একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে।
নিহতের ভাই সাতক্ষীরা সদর উপজেলার কাশেমপুর গ্রামের মৃত আব্দুর রহমান সানার ছেলে জিয়ারুল ইসলাম (৪০) বাদী হয়ে বুধবার (২১ আগষ্ট) জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলী-১ নং আদালতে এই মামলাটি দায়ের করেন।
আদালতের বিচারক সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নয়ন বড়াল মামলাটি এজাহার হিসেবে গণ্য করার জন্য সাতক্ষীরা সদর থানার ওসিকে নির্দেশ দিয়েছেন। ২০১৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর ভোর রাতে সাতক্ষীরা সদরের শিকড়ী এলাকায় আনারুলকে গুলি করে হত্যার অভিযোগে এ মামলাটি দায়ের করেন তিনি।
নিহত আনারুল ইসলাম সাতক্ষীরা সদর উপজেলার কাশেমপুর গ্রামের মৃত আব্দুর রহমান সানার ছেলে ও আগরদাড়ি ইউনিয়নের নির্বাচিত চেয়ারম্যান ছিলেন।
মামলার আসামীরা হলেন, সাতক্ষীরার সাবেক পুলিশ সুপার চৌধুরী মঞ্জুরুল কবীর, সাবেক পুলিশ সুপার ও ত্যকালিন সিনিয়র সহকারি পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) কাজী মনিরুজ্জামান, সদর থানার সাবেক অফিসার ইনচার্জ মোঃ ইনামুল হক, এসআই হেকমত আলী, দেবহাটার সখিপুর গ্রামের মৃত রিয়াজউদ্দিীনের ছেলে সাবেক জিপি গাজী লুঃফর রহমান, জেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি সদরের কাশেমপুর গ্রামের মৃত নজির উদ্দীন সরদারের ছেলে আব্দুল মান্নান ও তার ভাই আব্দুল হান্নান, একই গ্রামের মৃত কালাচাঁদ সরদারের ছেলে আ’লীগ নেতা হবিবার রহমান ও মাহাবুবুর রহমান, ইন্দিরা গ্রামের মৃত মোহর আলী মােড়লের ছেলে মোঃ হাশেম আলী, কাশেমপুর গ্রামের মৃত আবুল কাশেমের ছেলে তহিদুল ইসলাম, জেলা আওয়ামীগের সাধারণ সম্পাদক মোঃ নজরুল ইসলাম, সদর উপজেলা আ’লীগের সাবেক সভাপতি শওকত হোসেন, সহ সভাপতি কুশখালী গ্রামের গোলাম মোস্তফার ছেলে গোলাম মোর্শেদ, রসুলপুর গ্রামের মৃত কোমর উদ্দীন সরদারের ছেলে জেলা আ’লীগের সহসভাপতি আবু আহম্মদ, কাশেমপুর গ্রামের মৃত আব্দুস সাত্তারের ছেলে মোঃ রবিউল ইসলাম, মৃত নুর ইসলাম গাজীর ছেলে ইয়াহিয়া গাজী, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান সাল্যে গ্রামের মৃত আব্দুল গফ্ফারের ছেলে জেলা আ’লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোঃ আসাদুজ্জামান বাবুসহ অজ্ঞাতনামা আরো ৪/৫ জন।
মামলার বিবরণে জানা যায়, বিগত ২০১৩ সালের ৩০ ডিসেম্বর সকাল ৯টার দিকে আরজীতে বর্নিত সকল আসামীসহ অজ্ঞাতনামা ৪/৫ জন আসামী দুইটি মাইক্রোবাসে বাদীর ভাই ভিকটিম আগরদাড়ী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আনারুল ইসলামের কাশেমপুর গ্রামের বাড়ীতে এসে জোরপূর্বক তাকে মাইক্রোবাসে উঠিয়ে সাতক্ষীরা সদর থানায় নিয়ে যায়। সেখানে তাকে নির্যাতন করে দুই হাত এবং দুটি পা পিটিয়ে ভেঙ্গে ফেলে। পরবর্তীতে গভীর রাতে থানা থেকে চোখ বেঁধে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার শিকড়ী ফাকা মাঠে নিয়ে যায় এবং সেখানে গিয়ে ১নং আসামী সাবেক এসপি মঞ্জুরুল কবীর ও ২ নং আসামী সাবেক সহকারী পুলিশ সুপার মনিরুজ্জামানসহ তার সাথে থানা অন্যান্য সদস্যরা গুলি করে। ভিকটিম চেয়ারম্যান আনারুল ইসলামকে বুকে, বুকের ডান দিকে দু’টি, বুকের বাম দিকে দু’টি এবং ঘাড়ে ও মাথায় একটি করে গুলি করে হত্যা করে। ১-৩ নং আসামী অন্যান্য আসামীদের ইন্ধনে প্ররোচনায় ও সক্রিয় সহযোগীতায় বন্দুক যুদ্ধের নামে নাটক সাজিয়ে আনাররুল ইসলামকে নির্যাতনের পর গুলি করে হত্যা করে। পরে ৩১ ডিসেম্বর দুপুর ১২টার দিকে নিহতের স্বজনরা সদর হাসপাতাল গিয়ে ময়না তদন্ত শেষে আসামীদের কাছ থেকে ভিকটিম আনারুল ইসলামের মৃতদেহ গ্রহণ করে।
বাদী পক্ষের আইনজীবি এড. রবিউল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, মামলাটি বাদীসহ তার আত্মীয়-স্বজন দাখিল করার জন্য সাতক্ষীরা সদর থানায় কয়েক দফা গিয়েও মামলা গ্রহণ না করায় এবং পুলিশসহ আসামীগনের হুমকির কারণে এতদিন মামলা করতে বিলম্ব হয়েছে। তিনি আরো জানান, এমামলা দায়েরের সময় তার সহযোগি হিসেবে এড. এবিএম আনিসুজ্জামান, এড, এবিএম সেলিম উপস্থিত ছিলেন।