রাজধানীর অদূরে সাভারের আশুলিয়ায় দুই বান্ধবীকে দলবদ্ধ ধর্ষণ করে ভিডিও ধারণ এবং তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগে প্রিন্স কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য চার ধর্ষককে আটক করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় অভিযুক্ত আরও নয় কিশোর পলাতক রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
বুধবার (৭ অক্টোবর) ভোরে আশুলিয়ার ভাদাইল ও নয়ারহাট এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদেরকে আটক করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন আশুলিয়া থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আসওয়াদুর রহমান। এর প্রায় এক মাস আগে একই বাসার ভাড়াটিয়া দুই কিশোরের সঙ্গে বেড়াতে গিয়ে ওই গ্যাংয়ের সদস্যদের কাছে দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছিল দুই বান্ধবী।
আটককৃতরা হলো- কিশোর গ্যাং দলনেতা সারুফ, ডায়মন আলামিন, জাকির ও পান রাকিব।
এদের মধ্যে পান রাকিব ভাদাইল এলাকায় মাঝে মধ্যে শাক বিক্রি করে বলে জানা গেছে এবং বাকি দুজন শিক্ষার্থী। তবে তাদের বিস্তারিত পরিচয় জানা যায়নি। গ্যাংয়ের অন্যান্য সদস্যরা হলো- জিদান, রেদওয়ানসহ আরও কয়েকজন।
মূলত কিশোর গ্যাংয়ের নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্বের জের ধরেই ভিডিও ফাঁস করে দেওয়া হয় বলে ধারণা পুলিশের। সেই ঘটনার সূত্র ধরে পুলিশ অভিযান চালিয়ে চারজনকে আটক করে।
ভুক্তভোগীর সঙ্গে বেড়াতে যাওয়া কিশোর ইসরাফিল জানায়, আশুলিয়ার ভাদাইল এলাকায় ভাড়া বাসায় থেকে চুল কারখানায় কাজ করতো ভুক্তভোগীরা। প্রায় ৩৫ দিন আগে একই বাসার ভাড়াটিয়া দুই কিশোরের সঙ্গে দুই বান্ধবী ভাদাইলের গুলিয়ারচক এলাকায় বেড়াতে যায়। এ সময় তাদের চারপাশ দিয়ে ঘিরে ফেলে প্রিন্স কিশোর গ্যাংয়ের ১২ থেকে ১৪ জন সদস্য। পরে ভুক্তভোগীর সঙ্গে বেড়াতে যাওয়া দুই কিশোরকে জিজ্ঞাসাবাদ করে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা। একপর্যায়ে তাদেরকে মারধর করে এক জায়গায় আটকে রেখে দুই বান্ধবীকে দলবদ্ধভাবে ধর্ষণ করে এবং ভিডিও ধারণ করে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা। পরবর্তীতে ভিডিও ফাঁস হলে ভুক্তভোগী দুই বান্ধবী গ্রামে চলে যেতে বাধ্য হয় বলে জানায় ইসরাফিল।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঘটনার প্রায় এক মাস পর কিশোর গ্যাংয়ের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে ধারণ করা ভিডিও ফাঁস হয়ে যায়। ভিডিও ফাঁস হওয়ার পর গ্যাংয়ের প্রধান সারুফের বাবা আকবর আলী প্রিন্স কিশোর গ্যাংয়ের অন্যান্য সদস্যসহ অভিযুক্তদের পরিবারের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা নিয়ে স্থানীয় মাতবর মাধ্যমে ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করলেও শেষ রক্ষা হয়নি। এদিকে তাদের হুমকিতে ভয়ে এক কিশোরী নিজ গ্রামে চলে যায়। পুলিশ বিষয়টি জানতে পেয়ে ধারণকৃত ভিডিও ফুটেজ থেকে শনাক্ত করে অভিযান চালিয়ে চার ধর্ষককে আটক করেছে।
এ বিষয়ে ধর্ষক জাকিরের বাবা আনসার আলী জানান, সারুফের বাবা আকরাম আলী মাধ্যমে জানতে পারি আমার ছেলে জাকিরসহ কয়েকজন ধর্ষণের ঘটনায় জড়িত। বিষয়টি ধামাচাপা দিতে আমি সাড়ে আট হাজার টাকা দিই।
এ ব্যাপারে এসআই আসওয়াদুর রহমান জানান, দলবদ্ধ ধর্ষণের ভিডিও ফাঁস হওয়ার ঘটনায় অভিযোগ না পেলেও তদন্তে নামে আশুলিয়া থানা পুলিশ। বুধবার ভোররাতে অভিযান চালিয়ে চার গ্যাং সদস্যকে আটক করা হয়েছে। বাকিদের আটকের জন্য অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
খুলনা গেজেট / এমএম