জ্ঞানবাপী মসজিদের সিল করা তহখানায় হিন্দুদের পুজো করার অনুমতি দিল আদালত। বুধবার বারাণসীর জেলা আদালত এই নির্দেশ দিয়েছে। একই সঙ্গে সাত দিনের মধ্যে পুজোর শুরুর ব্যবস্থা করতে বলেছে বারাণসীর জেলা প্রশাসনকে।
তহখানা হল মসজিদের নীচের ভূগর্ভস্থ ঘর বা পাতালঘর। জ্ঞানবাপী মসজিদের নীচে এমন চারটি তহখানা রয়েছে। এর মধ্যেই দক্ষিণ দিকের তহখানাটিতে এখনও ব্যাস পরিবারের মালিকানাধীন। তাই তহখানাটির নাম ‘ব্যাস কি তহখানা’। আদালত হিন্দুপক্ষকে এই ‘ব্যাস কি তহখানা’তেই পুজো করার অনুমতি দিয়েছে।
হিন্দু পক্ষের তরফে বুধবার আদালতে হাজির ছিলেন আইনজীবী বিষ্ণুশঙ্কর জৈন। তিনিই জানান, আদালতের রায়ের কথা। জৈন বলেন, ‘ব্যাস কা তহখানা’য় হিন্দুদের প্রার্থনা করার যাবতীয় আয়োজন করতে হবে জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে। সাত দিনের মধ্যেই ওই তহখানার অধিকার নিজের হাতে নেবেন তিনি। এর মধ্যেই পুজোর আয়োজনও করতে হবে তাঁকে। সেই সঙ্গে তহখানার অন্দরের নিরাপত্তা এবং যাতে সেখানে কোনও কিছু বদলানো না হয়, সে দিকেও নজর দিতে হবে তাঁকেই।
যেহেতু ওই তহখানা ব্যাস পরিবারের অধীন, তাই তারা চেয়েছিল তহখানায় প্রবেশ করে পুজো করার অনুমতি দেওয়া হোক তাদেরই পরিবারের সদস্যকে। আদালতের তরফে অবশ্য পুরোহিতের ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছে মসজিদ লাগোয়া কাশীর বিশ্বনাথ মন্দিরের অছি পর্ষদকে।
গত ২৫ জানুয়ারি হিন্দু পক্ষের তরফে ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ বিভাগের (আর্কিয়োলজিক্যল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া বা এএসআই) একটি সমীক্ষা রিপোর্ট প্রকাশ্যে এনে বলা হয়েছিল, জ্ঞানবাপী মসজিদের বর্তমান কাঠামোর আগে ওই চত্বরেই বড় হিন্দু মন্দিরের উপস্থিতির প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে। এর পাশাপাশি মসজিদের নতুন এবং পুরনো কাঠামোতে দেবনাগরী লিপিও পাওয়া গিয়েছে। যেখানে উল্লেখ রয়েছে হিন্দু দেবদেবীর নাম। এই রিপোর্টের পরই জ্ঞানবাপী মসজিদের ‘সিল’ করা এলাকা খুলে দেওয়ার আর্জি জানিয়েছিল হিন্দু পক্ষ। এ ব্যাপারে সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্টেরও দ্বারস্থ হয়েছিল তারা। এর মধ্যেই জ্ঞানবাপী মামলায় বিশেষ নির্দেশ দিল বারাণসীর জেলা আদালত।
হিন্দু পক্ষের তরফে ওই নির্দেশকে স্বাগত জানিয়ে আইনজীবী জৈন বলেছেন, ‘‘এই নির্দেশ ঐতিহাসিক। আমি বলব, ১৯৮৩ সালে অযোধ্যায় রামমন্দির-বাবরি মসজিদ চত্বরের দরজার তালা খোলার যে নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারপতি কৃষ্ণমোহন পাণ্ডে, এই নির্দেশও ততটাই তাৎপর্যপূর্ণ।’’ উল্লেখ্য, বিচারপতি পাণ্ডের নির্দেশেই প্রথম অযোধ্যার রামমন্দিরে হিন্দুদের উপাসনার জন্য খুলে দেওয়া হয়েছিল দরজা।
অন্যদিকে, জ্ঞানবাপী মামলার অন্য পক্ষ অঞ্জুমান ইন্তেজামিয়া মসজিদ কমিটির কৌঁসুলী আখালাখ আহমেদ জানিয়েছেন, তিনি এই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে উচ্চতর আদালতে আবেদন করবেন। এ ব্যাপারে মসজিদ কমিটির একটি আবেদনের শুনানির দিন ৮ ফেব্রুয়ারি নির্ধারণ করেছে আদালত।
প্রসঙ্গত, সোমবারই জ্ঞানবাপী মসজিদের ওজুখানার ‘সিল’ খুলে দেওয়ার আর্জি জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে আর্জি করেছিল হিন্দু পক্ষ। তাদের দাবি ছিল, ওখানকার জলাধারে যে ‘শিবলিঙ্গ’ (মতান্তরে ফোয়ারা)-এর অস্তিত্ব পাওয়া গিয়েছিল, তার ক্ষতি না করে ওজুখানার একটি বিস্তারিত সমীক্ষা চালাতে বলা হোক এএসআইকে। ২০২২ সালে ওজুখানার ফোয়ারাটিকে শিবলিঙ্গ বলে দাবি করার পরই ২০২২ সালে বারাণসীর নিম্ন আদালত সেটিকে ‘সিল’ করার নির্দেশ দেয়। তারপর থেকে বন্ধই রয়েছে ওজুখানা। আনন্দবাজার