খুলনা, বাংলাদেশ | ৭ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২২ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  মার্কিন শ্রম প্রতিনিধি দল ঢাকা আসছে আজ

এবার অটোপ্রমোশন চান মেডিকেল শিক্ষার্থীরা

গেজেট ডেস্ক

বাংলাদেশে করোনাভাইরাস মহামারির কারণে গত পাঁচ মাস ধরে অনিশ্চয়তার মধ্যে আছেন মেডিকেলের এমবিবিএস শিক্ষার্থীরা।গত মে মাসে তাদের প্রফেশনাল বা ফাইনাল পরীক্ষা হবার কথা ছিল।কিন্তু এখন পর্যন্ত প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় পর্যায়ের প্রফেশনাল পরীক্ষা না হওয়ায় তারা দীর্ঘ সেশন জটে আটকে পড়ার আশঙ্কা করছেন। ফলে একটা সময়ে ইন্টার্ন চিকিৎসকের সংকট দেখা দেবে বলেও মনে করছেন এই শিক্ষার্থীরা।

এছাড়া যারা প্রাইভেট মেডিকেল কলেজে পড়ছেন, তাদের মাসের পর মাস বেতন ও হোস্টেল ফি বাবদ টাকা দিতে হচ্ছে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এদিকে, ডিসেম্বরে এই প্রফেশনাল পরীক্ষা হতে পারে বলে শিক্ষার্থীদের জানানো হলেও মহামারির মধ্যে পরীক্ষায় অংশ নিতে তারা রাজী হননি।তারা বিকল্প উপায়ে মূল্যায়ন করে প্রমোশন দেয়ার দাবি জানিয়েছেন।

মেডিকেল শিক্ষার্থী নম্রতা মৌমিতা বলছিলেন যে, মেডিকেলের এই ফাইনাল পরীক্ষা হাসপাতালে হয়ে থাকে। অনেক শিক্ষার্থীকে হলে উঠে পরীক্ষা দিতে হয়। এতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে করোনা ভাইরাস সংক্রমণ হতে পারে বলে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করছেন।

মিস নম্রতা বলেন, “হলে এতো শিক্ষার্থী গাদাগাদি করে থাকে। তারা একই রুমে ৭/৮ জন করে থাকে, একই টয়লেট ব্যবহার করে, একই ডাইনিংয়ে খায়। এছাড়া হাসপাতালে কতো মানুষের যাতায়াত। এখানে স্বাস্থ্যবিধি মানা সম্ভব না। এই অবস্থায় যদি আমরা পরীক্ষা দিতে বসি তা হলে আমাদের মধ্যে ব্যাপকভাবে করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়বে। আমরা সেটা চাই না।”এই অবস্থায় শিক্ষার্থীরা বিকল্প উপায়ে মূল্যায়ন করে তাদেরকে প্রমোশন দেয়ার দাবি জানিয়েছেন।

মেডিকেলে প্রায় প্রতিদিনই একটি নির্দিষ্ট বিষয়ের উপর ‘আইটেম’ পরীক্ষা হয়, এমন অনেকগুলো আইটেম পাস করার পর সেগুলোর ওপর ‘কার্ড’ পরীক্ষা হয়।কয়েকটি কার্ড মিলে ‘টার্ম’ পরীক্ষা নেয়া হয়। এই পরীক্ষাগুলোয় কেউ ৬০ শতাংশের কম নম্বর পেলে তাকে পুনরায় পরীক্ষা দিতে হয়।শিক্ষার্থীরা এই ধাপগুলো অতিক্রম করেই প্রফেশনাল পরীক্ষা দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন।

এখন তারা চাইছেন পূর্ববর্তী সেই পরীক্ষাগুলো মূল্যায়ন করেই তাদের অটো প্রমোশন দিতে।না হলে সেশন জটে পড়ে এক সময় ইন্টার্ন সংকট দেখা দিতে পারে বলেও তারা আশঙ্কা করছেন।

কিন্তু এমবিবিএস এর সাথে যেহেতু মানুষের স্বাস্থ্য জড়িত সেক্ষেত্রে পরীক্ষা ছাড়া শুধু মূল্যায়নের ভিত্তিতে প্রমোশন দেয়া স্বাস্থ্যখাতেরও পর ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে বলে মনে করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য নজরুল ইসলাম।

তিনি বলেন, “এমবিবিএস বা মেডিকেলে মানুষের স্বাস্থ্য নিয়ে পড়াশোনা হয়। এই ডিগ্রীগুলোর প্রতিটি ধাপ খুবই গুরুত্বপূর্ণ কারণ প্রতিটি ধাপে নতুন কিছু শেখানো হয় যেটা পরবর্তীতে বাস্তব জীবনে কাজে আসে। এখন কাউকে যদি পরীক্ষা ছাড়াই ডাক্তারের লাইসেন্স দেয়া হয় এবং তার যদি জ্ঞানে ঘাটতি থাকে তাহলে তার জন্য রোগীদের ভুগতে হবে।”

মে মাসে প্রফেশনাল পরীক্ষা হওয়ার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত কোন সিদ্ধান্ত হয়নি।সরকার অন্যান্য পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের অটো প্রমোশন দিলেও মেডিকেল শিক্ষার্থীদের ব্যাপারে শিক্ষা মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, বিএমডিসি বা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এখনও কোন আনুষ্ঠানিক কোন সিদ্ধান্তে আসেনি। এমন অবস্থায় শিক্ষার্থীরা দাবি জানিয়েছেন করোনা ভাইরাসের মধ্যে প্রফেশনাল পরীক্ষা না নিয়ে, অটো প্রমোশন দিয়ে দ্রুত পরবর্তী ইয়ারের ক্লাস শুরু করতে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ মেডিকেল ও ডেন্টাল কাউন্সিল-বিএমডিসির প্রেসিডেন্ট ডা. শহীদুল্লাহ জানিয়েছেন, তারা এমন কোন সিদ্ধান্ত নেবেন না যা স্বাস্থ্যখাতকে হুমকির মুখে ফেলতে পারে।শিক্ষার্থীদের একটি অংশ এমন দাবি তুলেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “মেডিকেলের প্রফেশনাল পরীক্ষা কোন এইচএসসি, জেডিসি পরীক্ষা না। এই শিক্ষা মানুষের জীবন নিয়ে কাজ করে। বিশ্বব্যাপী পরীক্ষার মাধ্যমেই সেই জ্ঞান যাচাই করা হয়। পরীক্ষা না নিয়ে বিকল্প মূল্যায়নের সিদ্ধান্ত কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য না। কারণ আমরা এমন ডাক্তার বানাতে চাই না যারা রোগীর উপকারের চাইতে অপকার করবে।”

বিশেষজ্ঞরাও মেডিকেল পরীক্ষা অনুষ্ঠানের পক্ষেই তাদের মত দিয়েছেন। তবে শিক্ষার্থীরা করোনা ভাইরাস সংক্রমণের যে আশঙ্কা করছেন সেটা দূর করতে কর্তৃপক্ষকে তার সব ধরণের স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করার ওপর জোর দেন। খবর : বিবিসি।

খুলনা গেজেট/এনএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!