খুলনা, বাংলাদেশ | ১৫ আষাঢ়, ১৪৩১ | ২৯ জুন, ২০২৪

Breaking News

  চট্টগ্রামে সীতাকুণ্ডে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বাস খাদে, উদ্ধারে কাজ করছে ফায়ার সার্ভিস
  প্যারাগুয়েকে ৪-১ গোলে উড়িয়ে দিলো ব্রাজিল

এবারের ঈদ খুশির বার্তা নিয়ে আসেনি সবার ঘরে!

নিজস্ব প্রতিবেদক

ঈদ অর্থ খুশি, ঈদ মানে আনন্দ। কিন্তু এবারের ঈদুল আযহা কি সকলের জন্য আনন্দের বার্তা নিয়ে এসেছে? এমন প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে খুলনা গেজেটের সামনে উঠে এসেছে ভিন্ন চিত্র।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের মতে, এক মাসের মধ্যে তিন দফায় দেশের ৩১টি জেলা বন্যা কবলিত হয়েছে; ক্ষতিগ্রস্ত অন্তত ৪০লাখ মানুষ। চলমান বন্যায় দেশের অন্তত ৩১ শতাংশ নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।

এদিকে, খুলনা অঞ্চলের উপকুলীয় এলাকায় বেঁড়িবাধ টেকসই সুরক্ষা হয়নি; সেখানের বিপুল সংখ্যক মানুষ এখনো নোনাপানিতে নিমজ্জিত। কয়রা উপজেলার অধিকাংশ এলাকার মানুষ এখনো সরকারি- বেসরকারি সংস্থার ত্রাণ নির্ভর। তাদের কাছে এবারের ঈদ সুখকর নয় বলে জানিয়েছেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এসএম শফিকুল ইসলাম।
তিনি বলেন, উপজেলা সদর, দক্ষিণ ও উত্তর বেদকাশির অবস্থা অত্যন্ত নাজুক। দীর্ঘদিন এ অঞ্চলের মানুষের আয়-উপার্জন নেই, অধিকাংশ মানুষ ত্রাণ নির্ভর। টেকসই বেঁড়িবাধ না হওয়ায় এখনো নোনা পানিবন্দী। এদের ঈদ হলো, টেকসই বেঁড়িবাঁধ।

সাতক্ষীরার শ্যামনগরের গাবুরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাসুদুল আলম বলেন, সরকারিভাবে সুন্দরবনে মাছ শিকার বন্ধ আছে ১ জুলাই থেকে আগস্ট পর্যন্ত। সরকারিভাবে এই জেলে বাওয়ালীদের জন্য ৮৬ কেজি করে চাল বরাদ্দ হয়েছে। যাদের জেলের কার্ড আছে তারাই কেবল চাল পেয়েছেন।’
তিনি আরও বলেন, করোনায় মানুষের কাজ নেই। কিছু সরকারি-বেসকারি সাহায্য পেয়েছে। মোবাইল নম্বর ভুল হওয়ায় কিছু বাকি আছে। তারপরও আমার ইউনিয়নে মানুষ বর্তমান সময় খুব কষ্টে দিন কাটাচ্ছে। ঈদুল আজহা সবাই পালন করলেও এই এলাকার মানুষের মনে ঈদ আনন্দ নেই।

 

অন্যদিকে, গত ১৬ জুলাই নগরীর ইস্টার্ণগেটে সন্ত্রাসী শেখ জাকারিয়া বাহিনীর গুলিতে তিন ও গণপিটুনিতে একজন নিহতের পর এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। সন্ত্রাসী জাকারিয়াকে অবিলম্বে গ্রেফতার ও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের দাবিতে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত বিক্ষোভ মিছিল করেছে ঐক্যবদ্ধ এলাকাবাসী।

এছাড়া শহরের কর্মহীন বিপুল সংখ্যক নিম্ন আয়ের মানুষেরা ভালো নেই। আর্থিক দৈন্যতায় ভুগছে বস্তিবাসী। খুলনা জেলা প্রশাসন, সিটি করপোরেশন, আ’লীগ, বিএনপি ও কয়েকটি স্বেচ্চাসেবী সংগঠন প্রতিনিয়তই ত্রাণ সহায়তা দিয়েছে এ জনগোষ্ঠিকে। তাদের কাছে এবারের ঈদ কেমনভাবে এসেছে?

শুক্রবারও (৩১জুলাই) শহরের গোসতের দোকানগুলোতে ভীড় ছিল চোখে পড়ার মতো। সন্ধ্যার পর ভীড় আরও বেড়ে যায়। ময়লাপোতা মোড়ের মিট মার্কেটে কথা হয় একাধিক ক্রেতার সাথে। তারা জানান, প্রতি বছর কোরবানী দেন। কিন্তু এবার আর্থিক সংকটের কারণে কোরবানী দিতে পারছেন না। বাসায় ছোট বাচ্চা ও বয়স্ক মুরব্বী রয়েছেন; অন্তত তাদের জন্য তো একটু গোসতের ব্যবস্থা করতে হয়, নাকি? লোক লজ্জায় কারো কাছে বলতেও পারছেন না, যে এবার কোরবানী দিচ্ছেন না তারা। এ অবস্থায় বাড়ীতে

নতুনবাজার চর বস্তির করিমন, শরবানু ও রহিমা বেগমের সমস্বরে একই উত্তর। তারা জানান, মাছ কোম্পানীগুলো বন্ধ থাকায় তারা দুই বেলা ঠিক মতো খেতেও পারে না। ঈদের জন্য বাড়তি বাজার করার সমার্থ্য নেই তাদের। তারা বলেন, ‘লোকে কিছু সেমাই চিনি দিয়েছে, তাই খাবো। বিকেলে গোসত কুড়াতে বের হবো। যদি কিছু পাওয়া যায়।’

রিকশা চালক মোঃ আইয়ুব আলী বললেন, ‘কয়মাস একেবারে বসতি। আয়-ইনকাম নেই। তাই গ্রামে (দাকোপ) ঈদ করতে যাইনি, দুটো পয়সার আশায়। কিন্তু ভাড়া তো সেরকম হচ্ছে না।’

স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন খুলনা ব্লাড ব্যাংক ও ফুড ব্যাংকের পরিচালক মোঃ সালেহউদ্দিন বলেন, ‘গত চারটি মাস সাধ্যমতো মানুষের পাশে দাড়িয়েছি। কিন্তু তারপরও মনে হয়, মানুষের জন্য কিছুই করতে পারিনি। চারিদিকে শুধু নেই, আর নেই। কাকে রেখে, কাকে দিবো। এ অবস্থার মধ্যে ঈদ সকলের জন্য আনন্দের হবে না, এটাই স্বাভাবিক। বিপুল জনগোষ্ঠির দু’বেলা দু’মুঠো খাবারের ব্যবস্থা করতে পারছে না।’

খুলনা গেজেট/এআইএন




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!