স্বল্প পুঁজিতে কোরবানীর ঈদে চামড়ার কিনতে প্রস্তুত খুলনার মুষ্টিমেয় ব্যবসায়ী। ট্যানারিতে কোটি কোটি টাকা অনাদায়ী, ব্যাংক ঋণের বোঝা ও স্থান সংকটে দেউলিয়া হয়েছেন অনেকেই। ব্যবসায়ীদের এ দুর্বলতায় মৌসুমী ফঁড়িয়াদের হাত ঘুরে বিদেশে চামড়া পাচারের আশঙ্কা করছেন তারা। এদিকে, খুলনার ফুলতলা ও যশোরের নওয়াপাড়ায় দু’টি কোম্পানি সরাসরি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান থেকে চামড়া কেনার প্রস্তুতি নিয়েছে।
দেখা গেছে, নগরীর শেখপাড়ার চামড়া পট্টিতে এখন কোন চামড়ার স্থায়ী দোকান নেই। পাওয়ার হাউজ মোড়ে ও আশপাশের এলাকায় মৌসুম ফল বিক্রি করছেন কয়েকজন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে দু’জন বললেন, ‘ট্যানারিতে প্রত্যেকেই ২০-২৫ লাখ টাকা করে পাবো। দেয় না। আবার ব্যাংকে কিছু ঋণ আছে, যার সুদ বাড়ছে। এ অবস্থায় পরিবার নিয়ে অত্যন্ত কষ্টে দিন কাটছে। লজ্জায় পরিচয়ও দেই যে চামড়া ব্যবসায়ী ছিলাম।’
তারা জানান, বছরের পর বছর ট্যানারিতে কোটি কোটি টাকা অনাদায়ী, ব্যাংক ঋণের বোঝা ও স্থান সংকটে সম্ভাবনাময় খুলনার চামড়া ব্যবসায়ীরা এখন দেউলিয়া। বিভাগীয় শহর খুলনার শেরে বাংলা রোডে শেখপাড়ার চামড়া পট্টি এখন শুধু কাগুজে নাম, বাস্তবে একটি দোকানও নেই সেখানে। লাভের আশায় একেরপর এক বিনিয়োগ হাত ছাড়া করে স্বল্প পুঁজিতে আম, আমড়া, আনারস, কাঁঠালসহ মৌসুমী ফল বিক্রি করছেন কয়েকজন। সবচেয়ে বড় মৌসুম কোরবানীর ঈদ আসন্ন। এবারও রাস্তার উপরেই চামড়া কিনে প্রক্রিয়াজাত করবেন তারা।
খুলনা জেলা চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সালাম ঢালী বলেন, খুলনায় চামড়ার ব্যবসা আছে কিন্তু ব্যবসায়ী নেই। ব্যবসায়ীরা সব দেউলিয়া হয়ে গেছে। ট্যানারিতে অন্তত ২৫ কোটি টাকা পাওয়া রয়েছে খুলনার ব্যবসায়ীদের। গত কোরবানীতেও চামড়া বাকিতে বিক্রি করেছি, সে টাকাও পাওয়া যায়নি। এভাবে লাভের আশায় বছরের পর বছর পুঁজি হারিয়েছি ব্যবসায়ীরা।
তিনি আরও বলেন, বৃহস্পতিবার দুপুরে চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির পক্ষ থেকে সিটি মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেকের কাছে ব্যবসায়ীদের দুরাবস্থা কথা উল্লেখ করে দরখাস্ত করেছি। ঈদের দিন থেকে একসপ্তাহ শেখপাড়ার সড়কটিতে চামড়া প্রক্রিয়াকরণের অনুমতি পেয়েছি। এবারও বাধ্য হয়ে রাস্তার উপরে চামড়া কিনবো।
এদিকে, ফড়িয়াদের মাধ্যমে ভিন্নদেশী পাইকাররা অর্থলগ্নি করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘পার্শ্ববর্তী দেশে চামড়া পাচার হওয়ার আশঙ্কা প্রবল।’
ব্যবসায়ীদের সূত্রমতে, ঢাকা ও নারায়নগঞ্জসহ বিভিন্ন অঞ্চলের ট্যানারিতে খুলনার চামড়া ব্যবসায়ীদের বকেয়া রয়েছে অন্তত ২৫ কোটি টাকা। এতো টাকা বকেয়া থাকায় অর্থ সংকটে ব্যবসায়ীরা। তাই বাধ্য হয়ে অনেকে পেশা বদলাচ্ছেন। আর যারা টিকে আছেন তারাও আসন্ন কোরবানির মৌসুমে চামড়া কেনা ও প্রক্রিয়াজাতকরণ নিয়ে উদ্বিগ্ন তারা।
জেলা চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মোঃ আমানউল্লাহ্ অসুস্থ্য। তার আমান লেদার কমপ্লেক্সের ম্যানেজার ও চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির কোষাধ্যক্ষ সাইদুর রহমান সাইদ বললেন, খুলনার অর্ধশত চামড়া ব্যবসায়ী দেউলিয়া। পেশা পরিবর্তন করে মৌসুম ফল বিক্রি, কাঁচা তরকারির ব্যবসা ও কেউ ইজিবাইক চালাচ্ছেন। অথচ খুলনার চামড়া ব্যবসা ছিল অত্যন্ত সম্ভাবনাময়।
অপর একটি সূত্র জানিয়েছেন, চামড়া বেচাকেনা বিঘ্ন ঘটলে চোরাই পথে ভারতে পাচার হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাছাড়া দামও কমতে পারে। মৌসুমি ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে ভারতে কাঁচা চামড়া পাচার করতে এখনি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে অর্থলগ্নি করেছে বলে জানিয়েছে ব্যবসায়ীদের সূত্রটি।
আবার, ফুলতলার সুপার এস লেদার লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ ফিরোজ ভূঁইয়া বলেন, খুলনা বিভাগের সব চামড়া কেনার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছি। যাতে খুলনার মাদ্রাসা, লিল্লাহ্ বোর্ডি ও হেফজখানাসহ দ্বীনি প্রতিষ্ঠানগুলো ঠিকে থাকে। বাজারদর অনুযায়ী চামড়া কেনার প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন তিনি।
খুলনা গেজেট/এআইএন