খুলনা, বাংলাদেশ | ১১ পৌষ, ১৪৩১ | ২৬ ডিসেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  ময়মনসিংহে ট্রাক-অটোরিকশার সংঘর্ষে একই পরিবারের ৪ জন নিহত
  নিখোঁজের ৪২ ঘণ্টা পর কাপ্তাইয়ের কর্ণফুলী নদী থেকে দুই পর্যটকের মরদেহ উদ্ধার

এবারও কালো টাকা সাদা করার বিশেষ সুযোগ

গেজেট ডেস্ক

আগামী অর্থবছরে সরকার কালো টাকা সাদা করার বিশেষ সুযোগ দিতে যাচ্ছে। দেশের প্রচলিত আইনে যাই থাকুক না কেন, কোনো করদাতা স্থাবর সম্পত্তি যেমন- ফ্ল্যাট ও জমির জন্য নির্দিষ্ট করহার এবং নগদসহ অন্যান্য সম্পদের ওপর ১৫ শতাংশ কর পরিশোধ করলে কোনো কর্তৃপক্ষ কোনো প্রকারের প্রশ্ন উত্থাপন করতে পারবে না।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, আগামী বাজেটে ১৫ শতাংশ কর দিয়ে আয়কর রিটার্নে অপ্রদর্শিত নগদ অর্থ, ব্যাংক আমানত প্রদর্শনের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। মূলত কালো টাকাকে অর্থনীতির মূলধারায় আনতে এ উদ্যোগ থাকছে। সরকারের অন্য কোনো সংস্থা এ বিষয়ে প্রশ্ন করতে পারবে না। বর্তমানে ব্যক্তি করদাতাদের সর্বোচ্চ করহার ২৫ শতাংশ, যা আগামী অর্থবছরে ৩০ শতাংশ করার পরিকল্পনা করছে এনবিআর।

আয়কর আইন অনুযায়ী যে কোনো করদাতা সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ করের সঙ্গে ১০ শতাংশ জরিমানা দিয়ে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ পান। তবে এর বাইরে প্লট বা ফ্ল্যাট কেনার ক্ষেত্রে এলাকাভেদে নির্দিষ্ট আয়তনের ওপর ভিত্তি করে নির্ধারিত কর পরিশোধ করেও টাকা সাদা করার সুযোগ রয়েছে। তবে এসব ক্ষেত্রে সরকারের সংশ্লিষ্ট যে কোনো সংস্থা চাইলে পরে ওই টাকার উৎস সম্পর্কে প্রশ্ন করতে পারবে। এ ছাড়া অর্থনৈতিক অঞ্চল বা হাইটেক পার্কে মাত্র ১০ শতাংশ কর দিয়ে অপ্রদর্শিত আয় বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা যা বলছেন

সাবেক অর্থ সচিব ও সাবেক কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল (সিএজি) মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরী সমকালকে বলেন, এর আগেও বারবার এ ধরনের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সে সুযোগে খুব বেশি সাড়া পাওয়া যায়নি। উল্টো বিতর্কিত এ উদ্যোগের ফলে যারা নিয়মিত কর দেন, তারা নিরুৎসাহিত হন।

গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, এমন সুযোগ দেওয়া ঠিক হবে না। কারণ সাধারণ করদাতাদের ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ হারে কর দিতে হচ্ছে। আর যারা কর ফাঁকি দিয়েছে কিংবা চুরি করা অর্থ নিয়ে আসবে, তাদের যদি মাত্র ১৫ শতাংশ কর দিতে হয়, তাহলে নিয়মিত করদাতাদের ওপর অন্যায্য সিদ্ধান্ত হবে।

কালো টাকার ইতিহাস

এনবিআরের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, স্বাধীনতার পর থেকে নানাভাবেই কালো টাকা বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়া হয়। ১৯৭১-৭৫ সাল পর্যন্ত দুই কোটি ২৫ লাখ টাকা সাদা করা হয়। সেখান থেকে তৎকালীন সময়ে সরকার মাত্র ১৯ লাখ টাকা আয়কর পায়। ১৯৭৬-৮০ সাল পর্যন্ত ৫০ কোটি ৭৬ লাখ টাকা সাদা করা হয়। এতে সরকার কর পায় ৮১ লাখ টাকা। ১৯৮১-৯০ পর্যন্ত ৪৫ কোটি টাকা সাদা হয়, যাতে আয়কর পায় চার কোটি ৫৯ লাখ টাকা।

১৯৯১-৯৬ পর্যন্ত ১৫০ কোটি টাকা সাদা হয় এবং আয়কর আদায় হয় ১৫ কোটি টাকা। এরপর ধারাবাহিকভাবে কালো টাকা সাদা হওয়ার পরিমাণ কিছুটা বাড়তে থাকে। ১৯৯৭-২০০০ পর্যন্ত তিন বছরে ৯৫০ কোটি টাকা সাদা হয় এবং আয়কর আদায় হয় ১৪১ কোটি টাকা। পরের ৭ বছর অর্থাৎ ২০০১-০৭ পর্যন্ত ৮২৭ কোটি টাকা, ২০০৭-০৯ পর্যন্ত এক হাজার ৬৮২ কোটি টাকা, ২০০৯-১৩ পর্যন্ত এক হাজার ৮০৫ কোটি টাকা এবং ২০১৩-২০ পর্যন্ত ১১ হাজার ১০৭ কোটি কালো টাকা মূল ধারার অর্থনীতিতে প্রবেশ করে। এ থেকে সরকার রাজস্ব পায় যথাক্রমে ১০২ কোটি, ৯১১ কোটি, ২৩০ কোটি ও এক হাজার ৭৩ কোটি টাকা।

 

খুলনা গেজেট/এইচ




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!