জাতীয় পরিচয়পত্র বা এনআইডি অনুবিভাগ জনবলসহ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে স্থানান্তরের জন্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ যে নির্দেশ জারি করেছে তা নির্বাচনের কফিনে সর্বশেষ পেরেক বলে মন্তব্য করেছেন নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার।
বুধবার (২ জুন) নির্বাচন কমিশনে নিজ দপ্তরে তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ মন্তব্য করেন। এসময় তিনি একটি লিখিত বক্তব্য তুলে ধরেন। সরকারি এ সিদ্ধান্তে হতাশা প্রকাশ করে এই কমিশনার যখন কথা বলছিলেন তখন তার চোখ ছিল জলে ভেজা।
তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনের এনআইডির কাজে আমি গর্ববোধ করি। দেশের ভোটারদের তথ্য আমাদের কাছে আছে। কী উদ্দেশ্যে এই আত্মঘাতী ও অযৌক্তিক সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে তা আমার বোধগম্য নয়। এটি সংবিধানের ১১৯ ধারার পরিপন্থী। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন এবং বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন সচিবালয় ও মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্য পরিষদ এতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
মাহবুব তালুকদার বলেন, গত ২৪শে মে মন্ত্রিপরিষদের যুগ্মসচিব স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এনআইডি হস্তান্তরের প্রক্রিয়ায় ‘নির্বাচন কমিশনে’র পরবিবর্তে ‘সরকার’ শব্দটি প্রতিস্থাপনের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। অন্যদিকে এনআইডির বিদ্যমান অবকাঠামো ও জনবল সুরক্ষা সেবা বিভাগে হস্তান্তর করার ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানকে এ ধরনের নির্দেশ প্রদান কতটা যৌক্তিক তা বিবেচ্য। ভোটার তালিকা ও জাতীয় পরিচয়পত্র একটি অপরটির সঙ্গে জড়িত। ফলে নির্ভুল ভোটার তালিকা প্রণয়ন ও জাতীয় পরিচয়পত্রের ডাটাবেজ নির্ভর ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট গ্রহণে জটিলতা সৃষ্টি হবে। এটি করা হলে সংবিধানের ১১৯ ধারা অনুযায়ী নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব পালন সম্ভব হবে না।
তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনের কাছ থেকে এনআইডি স্থানান্তরের নির্দেশ কমিশনের অঙ্গচ্ছেদের নামান্তর। এ বিষয়ে কমিশনকে না জানানো নির্বাচন কমিশনের প্রতি অবজ্ঞা প্রকাশের সামিল। নির্বাচন কমিশনের ইতিহাসে এ যাবৎকালে এমন দুর্দিন আর আসেনি। সংবিধানের ১০৮ ( ৪ ) ধারায় বলা হয়েছে- ‘নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে স্বাধীন থাকিবেন এবং কেবল এই সংবিধান ও আইনের অধীন হইবেন।’ এটি কমিশনের জন্য রক্ষাকবচ হলেও নির্বাচন কমিশনের স্বাধীনতা এখন কোথায়? আমি মনে করি, জাতীয় পরিচয়পত্র অনুবিভাগ অন্যত্র স্থানান্তর সামগ্রিক নির্বাচনী ব্যবস্থাপনার অন্তিমযাত্রার আয়োজন।
খুলনা গেজেট/ এস আই