যশোরে গত পাঁচ বছর যাবৎ এতিমখানার খাবার খাচ্ছেন জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা খয়রাত হোসেন। দুপুরের খাবার মাদরাসার ছাত্র ও রাতের খাবার মাদরাসার শিক্ষকরা তার বাড়িতে পৌঁছে দেন। সম্প্রতি তার বাড়িতে এতিমখানার খাবার নিয়ে যাওয়ার একটি ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল হয়।
ভিডিওতে দেখা গেছে, একজন শিক্ষার্থী কারবালা মাদ্রাসা ও এতিমখানা থেকে খাবার নিয়ে যাচ্ছে মাদরাসার সভাপতি ও যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি খয়রাত হোসেনের বাড়িতে। এক মিনিট ৪৭ সেকেন্ডের ভিডিওটি সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর) রাত থেকে ছড়িয়ে পড়ে।
ভিডিওতে দেখা যায়, পায়জামা-পাঞ্জাবি পরিহিত ১৩ বছর বয়সী এক কিশোর বাইসাইকেল চালিয়ে যাচ্ছে। এসময় বিভিন্ন বয়সি কয়েকজন তার পথরোধ করে দাঁড় করান। কিশোরের সাইকেলের ঝুলানো টিফিন ক্যারিয়ার খুলে খাবার দেখছেন তারা। এরপর ওই ব্যক্তিরা কিশোরের কাছে জানতে চান এই খাবার কোথায় যাবে, কোথায় থেকে এলো। উত্তরে কিশোর জবাব দেয়, সে যশোর শহরের কারবালা পীর নূর বোরহান শাহ ফোরকানিয়া এতিমখানার ছাত্র। এতিমখানা থেকে খাবার নিয়ে যাচ্ছে মাদরাসার সভাপতি ও আওয়ামী লীগের নেতা খয়রাত হোসেনের বাড়িতে। ওই শিক্ষার্থী জানায়, এভাবেই প্রতিদিন শিক্ষার্থীরা সভাপতির বাড়িতে গত পাঁচ বছর যাবৎ খাবার নিয়ে যায়। ফলে বিষয়টি মুহুর্তে জানাজানি হয়ে যায়। গোটা শহরে চলছে এ নিয়ে আলোচনা ও সমালোচনা।
এ বিষয়ে মাদরাসার সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা একেএম খয়রাত হোসেন বলেন, মাদরাসার জন্য আমি অনেক কিছু করেছি। আমারও মাদরাসা থেকে কিছু পাওয়ার হক রয়েছে। তিনি বলেন, আমি ডায়াবেটিস ও কিডনির রোগী। মাদরাসার খাবার খেলে আমি এতদিন বাঁচতাম না। ফলে আমি কখনো মাদরাসার খাবার খাইনি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, যশোরের ঐতিহ্যবাহী এতিমখানা ও মাদরাসা কারবালা পীর নূর বোরহান শাহ ফোরকানিয়া হাফিজিয়া মাদ্রাসা ও এতিমখানা মিলে দুই শাখায় অর্ধশতাধিক এতিম শিক্ষার্থী পড়াশোনা করে। সমাজকল্যাণ অধিদপ্তরের আংশিক অর্থায়নে ও জেলার বিভিন্ন দানশীল ব্যক্তিদের টাকায় চলে প্রতিষ্ঠানটি। প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনা করার জন্য একটি কার্যনির্বাহী কমিটি রয়েছে। যার সভাপতি যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা একেএম খয়রাত হোসেন।
মাদরাসাটিতে এতিম শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার জন্য তিনজন শিক্ষক দায়িত্ব পালন করেন। অর্ধশতাধিক এতিম শিক্ষার্থীর তিনবেলা খাবারের ব্যবস্থা করে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ। মাঝে মধ্যে শহরের বিভিন্ন ব্যক্তি বিশেষ দিনগুলোতে উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করেন। সেই খাবারই গ্রহণ করেন মাদ্রাসার শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা।
মাদ্রাসা সূত্র ও খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মাদ্রাসাটির সভাপতি আওয়ামী লীগ নেতা একেএম খয়রাত হোসেনের তিনবেলা খাবার এ মাদ্রাসা থেকে যায়। দুপুরে শিক্ষার্থীরা তার বাড়িতে খাবার দিয়ে আসে। আর রাতে মাদ্রাসার শিক্ষকরা সভাপতির বাড়িতে দিয়ে যান। এভাবেই গত পাঁচ বছর ধরে এতিমদের খাবারে ভাগ বসিয়ে আসছেন আওয়ামী লীগের এই নেতা।
সোমবার নাজমুল হোসেন মিলন নামে এক ব্যক্তির ফেসবুক আইডি থেকে সভাপতির বাড়িতে খাবার নিয়ে যাওয়ার ভিডিও পোস্ট করা হয়। ভিডিওটি মঙ্গলবার বিকেল ৩টা পর্যন্ত ৮৫ হাজার মানুষ দেখেছেন।
ইউসুফ নামে একজন সমালোচনা করে ফেসবুকে লিখেছেন, আওয়ামী লীগ নেতা খয়রাত চাচা পাঁচ বছর ধরে সভাপতির দায়িত্বে। একবেলায় যদি তিনি ৬০ টাকার খাবার খান, তাহলে তিনবেলা খেয়েছেন ১৮০ টাকা। সে হিসেবে গত পাঁচ বছরে তিনি ৩ লাখ ২৪ হাজার টাকার খাবার খেয়েছেন। এতিমদের খাবার খেয়ে তিনি তাদের হক মেরেছেন। এই টাকা তাকে এতিমদের ফেরত দিতে হবে।
মাদ্রাসাটির সাংগঠনিক কমিটির এক নেতা জানান, আওয়ামী লীগ নেতা খয়রাত হোসেন যশোরের বিশিষ্ট ও বিত্তশালী ব্যক্তি। তার স্ত্রী মারা গেছেন। তিন মেয়ে উচ্চশিক্ষিত ও প্রতিষ্ঠিত। খয়রাত হোসেনের শহরে মার্কেট ও বাড়ি রয়েছে। তারপরও তিনি এতিম শিশুদের খাবার খাচ্ছেন দীর্ঘদিন ধরে। তার এ ধরনের কর্মকা- নিচু মানসিকতার। অন্যায়ও বটে।
তবে মাদ্রাসার সুপার হাফেজ মো. মহিবউল্লাহ দাবি করেন, সভাপতি যশোরে সবসময় থাকেন না। তার স্ত্রী মারা গেছেন। মেয়েরাও কাছে থাকেন না। যখনই তিনি যশোরে থাকেন, মাঝে মধ্যে মাদ্রাসা থেকে খাবার যায়। ভাইরাল হওয়া খাওয়ারটি এতিম শিশুদের জন্য পাঠিয়েছিলেন এক ব্যক্তি। ভালোমানের খাবার হওয়ায় টিফিন ক্যারিয়ারে সভাপতির জন্য পাঠানো হয়েছিল।
খুলনা গেজেট/কেডি