খুলনা, বাংলাদেশ | ৮ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২৩ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ২ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৪৫৮

বছরের শুরুতে নতুন বই অনিশ্চিত, এখনো ছাপা হয়নি ৬ কোটি

গেজেট ডেস্ক

নতুন শিক্ষাবর্ষের বই ছাপানোর ক্ষেত্রে প্রাথমিকের চেয়ে মাধ্যমিক পিছিয়ে রয়েছে। আগামী বছর অষ্টম ও নবম শ্রেণির বই যাবে নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী; কিন্তু এই দুই শ্রেণির ছয়টি বইয়ের পাণ্ডুলিপিই এখনো চূড়ান্ত হয়নি। সব শ্রেণি মিলিয়ে এখনো ছাপা বাকি ৬ কোটি বই। সংশ্লিষ্টরা জানান, এবারও ডিসেম্বরের মধ্যে ছাপিয়ে ১ জানুয়ারি শিক্ষার্থীদের হাতে সব বই তুলে দেওয়া সম্ভব হবে না।

জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) তথ্য অনুসারে, এবার প্রাথমিক ও মাধ্যমিক মিলিয়ে ৩৩ কোটির মতো বই ছাপা হবে। শিক্ষক গাইডসহ এ সংখ্যা প্রায় ৩৫ কোটি। প্রাথমিকে এবার ২ কোটি ১৪ লাখের বেশি শিক্ষার্থীর জন্য ৯ কোটি ৩৮ লাখের বেশি এবং মাধ্যমিকের ১ কোটি ৬৭ লাখ শিক্ষার্থীর জন্য ২৩ কোটির বেশি বই ছাপানো হবে। চলতি বছর প্রথম, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির বই নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী ছাপা হয়েছিল। এবার সেখানে যোগ হচ্ছে দ্বিতীয়, তৃতীয়, অষ্টম ও নবম শ্রেণির বই। অন্যান্য শ্রেণির ক্ষেত্রে পুরোনো শিক্ষাক্রমের বই ছাপানো হচ্ছে।

এনসিটিবি সূত্র জানায়, এবার অষ্টম শ্রেণিতে মোট বইয়ের সংখ্যা ৫ কোটি ৩৪ লাখ ৮৪ হাজার ২৭১টি। এর মধ্যে গত বুধবার দুপুর পর্যন্ত এই শ্রেণির ২৩ শতাংশ বই ছাপিয়ে উপজেলা পর্যায়ে পাঠানো হয়েছে। নবম শ্রেণিতে মোট বইয়ের সংখ্যা ৫ কোটি ৬ লাখ ৮৪ হাজার ৫৭৩টি। এর মধ্যে মাত্র ১১ শতাংশের কিছু বেশি বই ছাপিয়ে উপজেলা পর্যায়ে পাঠানো হয়েছে।

অষ্টম ও নবম শ্রেণির তিনটি করে মোট ছয়টি বইয়ের পাণ্ডুলিপি এখনো চূড়ান্ত করতে পারেনি এনসিটিবি। এগুলো হলো ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান, বিজ্ঞান অনুশীলন বই এবং বিজ্ঞান অনুসন্ধানী পাঠ। দুই শ্রেণিতে বইয়ের নাম একই। এত দিন নবম ও দশম শ্রেণির বই একই থাকলেও নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী নবম ও দশম শ্রেণির বই পৃথক।

এনসিটিবির একাধিক কর্মকর্তা জানান, অষ্টম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ের পাণ্ডুলিপি চূড়ান্ত করার কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। অন্য বইগুলোর পাণ্ডুলিপি চূড়ান্ত করতে আরও এক সপ্তাহ লাগতে পারে।

১ জানুয়ারি সব বই পাবে না শিক্ষার্থীরা: নির্বাচন সামনে রেখে এবার আগেভাগেই বই ছাপার প্রস্তুতি নিয়েছিল এনসিটিবি। সে অনুযায়ী, প্রথমে অক্টোবরের মধ্যে, দ্বিতীয় দফায় নভেম্বরের মধ্যে বই ছাপার কাজ শেষ করার কথা বলেছিল সরকারি সংস্থাটি; কিন্তু সেটি সম্ভব হয়নি। এখন তারা বলছেন, জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহের মধ্যে সব বই ছাপা হয়ে উপজেলা পর্যায়ে পৌঁছে যাবে।

এনসিটিবি থেকে জানা গেছে, এবার প্রাথমিকের বেশিরভাগ বই আগেভাগে উপজেলায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিকের বই ছাপানো কিছুটা দেরিতে শুরু হয়েছে। কারণ মাধ্যমিকের বই ক্রয় কমিটি ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে অনুমোদন হয়ে আসতে আসতে ১ মাস সময় বেশি লেগে গেছে। এ ছাড়া, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির বই ব্যাপক পরিমার্জন করতে হয়েছে। যষ্ঠ শ্রেণির একটি বই ছাপাখানায় পাঠিয়েও ফেরত আনতে হয়েছে। পরে সেটি শিক্ষা উপমন্ত্রী দেখে আবার সংশোধন করে দিয়েছেন। পরিমার্জনের পর সেটি ছাপাখানায় পাঠানো হয়েছে। এসব কারণে মাধ্যমিকের বই ছাপানোর কাজে কিছুটা দেরি হয়েছে। নবম শ্রেণির বই ছাপাতে এনসিটিবির সঙ্গে ছাপাখানা মালিকদের চুক্তির শেষ সময় ছিল ৫ ডিসেম্বর। সে অনুযায়ী, শেষ দিনেও অনেক ছাপাখানা চুক্তি করেছে।

মোল্লা প্রিন্টিং প্রেস অ্যান্ড পাবলিকেশনের স্বত্বধিকারী মিন্টু মোল্লা বলেন, আমরা নবম শ্রেণির বই ছাপানোর চুক্তি করেছি চলতি সপ্তাহে। এর মধ্যে ৫০ লাখ বই ছাপানোর পর সেগুলো উপজেলায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। আশা করছি ডিসেম্বরের মধ্যে ৯০ ভাগ বই পৌঁছে দিতে পারব।

বাংলাদেশ মুদ্রণ শিল্প সমিতির সাবেক সভাপতি তোফায়েল খান বলেন, বড় বইয়ের ফর্মা (পৃষ্ঠা) বেশি। সে কারণে ছাপাতে দেরি হয়। এ জন্য এনসিটিবি যে সময় বলেছে তার মধ্যে বই পাঠানো সম্ভব হবে না। এনসিটিবি ৬টি বইয়ের পাণ্ডুলিপি চূড়ান্ত করলে বোঝা যাবে কতদিনের মধ্যে সব পাঠানো যাবে। যদি সেটি দ্রুত করা হয়, তবে জানুয়ারির শুরুতেই সব বই পাঠানো সম্ভব হবে।

মুদ্রণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক জহুরুল ইসলাম বলেন, কাগজের কিছু সংকট এখনো রয়ে গেছে। এ ছাড়া, সবেমাত্র নবম শ্রেণির বই ছাপাখানায় গিয়েছে। সবচেয়ে বড় বিষয় ৬টি বইয়ের পাণ্ডুলিপি এখনো তৈরি হয়নি। এগুলো ছাপাখানায় গেলে বোঝা যাবে শতভাগ কাজ শেষ করতে কত সময় লাগবে।

এনসিটিবি চেয়ারম্যান অধ্যাপক ফরহাদুল ইসলাম  বলেন, প্রাথমিকে বেশিরভাগ বই উপজেলা পর্যায়ে চলে গেছে। কিছু বই এখনো বাকি রয়ে গেছে। এটি যেতেও খুব বেশি সময় লাগবে না। মাধ্যমিকে আমরা কিছুটা পিছিয়ে পড়েছি। এখনো ৬ কোটি বই ছাপা বাকি রয়েছে। সংকট বলতে এটুকুই যে, সব বই উপজেলা পর্যায়ে যেতে জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। তিনি বলেন, এবার বইয়ের মান তথা কাগজের উজ্জ্বলতা কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। যে কারণে বেশ কয়েকটি প্রেস খারাপ কাগজ দেওয়ার চেষ্টা করেছিল। আমরা তাদের প্রতিহত করেছি। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরও দুয়েকটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবে। আর মাধ্যমিকে গত বছর যেমন ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, এবারও তাই হবে।

১ জানুয়ারি হচ্ছে না বই উৎসব?:

নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তপশিল অনুযায়ী, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটগ্রহণ হবে ৭ জানুয়ারি। এ কারণে ১ জানুয়ারি বই উৎসব হওয়া নিয়েও শঙ্কা দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির এক ঘোষণায় এই শঙ্কা আরও ঘনীভূত হয়েছে। গত ২৮ নভেম্বর স্কুলে ভর্তির লটারির ফলাফল প্রকাশের অনুষ্ঠানে দীপু মনি বলেন, ‘বই উৎসব নিয়ে এখন আমাদের ভাবতে হচ্ছে। যেহেতু ৭ জানুয়ারি নির্বাচন। নির্বাচনের পরের সময়টা আসলে কেমন থাকবে, সেটাও আমাদের বিবেচনায় নিতে হবে। অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ভোটকেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার হয়। এ কারণে এবার বই উৎসবটা ঠিক ১ তারিখে করব নাকি নির্বাচনের পরে ১০ থেকে ১১ তারিখ করব, সেটা নিয়ে একটু সিদ্ধান্ত নেওয়ার চেষ্টা করছি।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এনসিটিবির একজন কর্মকর্তা বলেন, যদি ১ জানুয়ারি সারা দেশে উৎসব করে বই দিতে হয়, তাহলে হয়তো প্রথম দিনে সব শিক্ষার্থীর হাতে সব বই দেওয়া যাবে না। দু-একটি বই দিতে কয়েক দিন দেরি হতে পারে।

মুদ্রণ শিল্প সমিতির সাবেক সভাপতি তোফায়েল খান বলেন, এনসিটিবি এবার বই উৎসব করতে চান না। কারণ, ১ জানুয়ারি উৎসব করলে শতভাগ বই পাওয়া যাবে না।

এনসিটিবি চেয়ারম্যান অধ্যাপক ফরহাদুল ইসলাম বলেন, এবারও বই উৎসব হবে। তবে সেটি নির্বাচনের আগে না পরে সেটি এখনও আমাদের জানানো হয়নি। আমরা ১ জানুয়ারি উৎসব আয়োজন করতে প্রস্তুত আছি। তিনি বলেন, ২০১৪ সালে বিশেষ ব্যবস্থাপনায় আমরা উপজেলা পর্যায়ে বই পাঠিয়েছি। এবারও রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে পুলিশের সহযোগিতায় এরই মধ্যে বেশিরভাগ বই এলাকায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। বেশিরভাগ বই গিয়েছে হরতাল-অবরোধ না থাকা দিনগুলোয়। রাজনৈতিক কর্মসূচির দিনে আমরা ট্রাক বা ট্রেনে করে পুলিশি নিরাপত্তা দিয়ে বই পাঠিয়ে দিব।




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!