‘একদিন বড় প্লেয়ার হব, জাতীয় দলের হয়ে খেলব। সেই ভাবনা থেকেই ছোটবেলায় খেলাকে বেছে নিয়েছিলাম। কিন্তু দুর্ভাগ্য, আর্থিক অসচ্ছলতা আর পায়ের আঘাতের কারণে আমি এখন রিকশাচালক।’ কথাগুলো বলতে বলতে কেঁদে ফেললেন খুলনার সাবেক ফুটবলার খন্দকার সিরাজুল ইসলাম।
এক সময় বল পায়ে খেলার মাঠে দাপিয়ে বেড়িয়েছেন যিনি, সেই পা দিয়ে এখন চালাচ্ছেন রিকশা। আর্থিক অসচ্ছলতা তাকে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে দেয়নি। জাতীয় দলের হয়ে খেলার স্বপ্ন পূরণ হয়নি তার। এখন জীবনের শেষ প্রান্তে এসে খুলনা শহরের অলিগলিতে রিকশা চালিয়ে রুটি রুজির ব্যবস্থা করতে হচ্ছে সাবেক এই ফুটবলারকে।
সিরাজুল ইসলাম বলেন, ১৯৭৮ সালে এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছি। তখন খেলার প্রতি ঝোঁক বেশি ছিল। খেলা আর আর্থিক অনটনের কারণে বেশিদূর লেখাপড়া করতে পারিনি। ফুটবল খেলেছি বেশ কিছু ক্লাবে। খুলনা প্রথম বিভাগ ফুটবল লীগ, দাদা ম্যাচ, শিপইয়ার্ড, মুসলিম স্পোটিং ক্লাব, খুলনা আবাহনী, ঢাকা ফরাশগঞ্জ, মুক্তিযোদ্ধা ক্লাব, প্লাটিনাম ও পিডব্লিউডি ক্লাবের হয়ে খেলেছি। আমি খুলনা থেকে ঢাকায় আইজি টিমে ফুটবল খেলে চ্যাম্পিয়ন হয়ে এসেছি।
তারপর পিডব্লিউডিতে সেকেন্ডিভিশন খেলে আসছি, শেষ ফরাশগঞ্জ গিয়েছিলাম খেলতে। তখন পায়ে ব্যথা পেয়ে আমি বাড়িতে চলে আসি। আমার খেলার প্রতি খুবই আগ্রহ ছিল। আর্থিক সংকটের কারণে বাধ্য হয়ে আমাকে রিকশা চালাতে হচ্ছে। আর্থিক খুব অসুবিধা যাচ্ছে, তাই একটি চাকরির আশায় আছি। বিভিন্ন এনজিও বা ক্রীড়া সংস্থার মাধ্যমে চাকরির সুযোগ হয় তাহলে আমার বাকী জীবনটা ভালোভাবে কেটে যাবে।
শৈশবের স্মৃতি তুলে ধরে সাবেক এই ফুটবলার বলেন, যখন পঞ্চম ষষ্ঠ শ্রেণীতে পড়ি তখন থেকেই ফুটবলের প্রতি আলাদা একটি টান ছিল। আমি মাঠে খেলা দেখতে যেতাম। অনেক সময় খুলনা জেলা স্টেডিয়ামের নিচে ফাঁকা জায়গা দিয়ে ঢুকে খেলা দেখতাম। এরপরই তিনি কেঁদে ফেলেন।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, তখন আমার মনে আশা ছিল আমি প্লেয়ার হব। কিন্তু দুর্ভাগ্য আমার, আর্থিক অস্বচ্ছলতার কারণে আমি খেলা থেকে বঞ্চিত হয়েছি। পায়ে ব্যথার পর আর খেলাধুলা করতে পারিনি। আমারও মনে ইচ্ছা ছিল জাতীয় দলে একদিন খেলব। এই মন নিয়েই আমি খেলাকে বেছে নিয়েছিলাম। কিন্তু আমার আর্থিক অস্বচ্ছলতার কারণে আমি বাধ্য হয়েছি খেলা ছেড়ে দিয়ে অন্য পেশা বেছে নিতে। এখন আমি রিকশা চালাচ্ছি। এই বয়সে আর রিকশা চালাতে পারছি না, তবুও জীবিকার তাগিদে রিকশা নিয়ে ছুটতে হচ্ছে।
সাবেক এই ফুটবলারের দুর্দিনে পাশে দাঁড়িয়েছেন খুলনার নারী ক্রিকেট দলের কোচ ইমতিয়াজ হোসেন পিলু। তিনি বলেন, সিরাজুল ইসলাম ভালো খেলতেন। তিনি বিভিন্ন ক্লাবের হয়ে সুনামের সঙ্গে খেলেছেন। স্টেডিয়ামে আমরা তার খেলা দেখেছি। প্রথম শ্রেণীর সিনিয়র ডিভিশনে নামকরা টিমের হয়ে খেলেছেন। তার খেলার মান ভালো ছিল। আমরা খেলা দেখে মাঠে বসে হাতে তালিও দিয়েছি। পরবর্তীতে সংসার জীবনে এসে তিনি খুব কষ্টের মধ্যে আছেন। এখন তিনি রিকশা চালান। এটাই খারাপ লাগে।
তিনি আরও বলেন, যার খেলা এক সময়ে মাঠে বসে দেখেছি, তিনি এখন রিকশাচালক। ওই সময়ে ফুটবল খেলে আর্থিক অর্জন তেমন ছিল না। তিনি এখন ভালোভাবে জীবন-যাপন করতে পারছেন না। তার এক ছেলে, এক মেয়ে রয়েছে। স্ত্রীর তিন কাঠা জমি রয়েছে সেখানেই তিনি বসবাস করছেন। এখন কেউ যদি তাকে সাহায্য করে তাহলে তিনি ভালোভাবে চলতে পারতেন।
তিনি বলেন, অনেক নামকরা ফুটবলার রয়েছে। তার জন্য স্থায়ীভাবে কোনো ব্যবস্থা করা হলে ভালো হয়। এই বয়সে সরকারি চাকরি সম্ভব নয়। ব্যবসা বা বেসরকারি চাকরির ব্যবস্থা করা বা খেলাধুলার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট যারা রয়েছে তারা যদি পাশে দাঁড়ায় তাহলে বাকী জীবনটা সুন্দরভাবে কাটবে।