খুলনা, বাংলাদেশ | ৩০ কার্তিক, ১৪৩১ | ১৫ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  খুলনার বড় বাজারের পাটের বস্তার গোডাউনে আগুন, নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিস
  আজারবাইজানে কপ-২৯ জলবায়ু সম্মেলন শেষে দেশে ফিরেছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস
সরেজমিনে আসামিদের বিবরণ

এক মিনিটে ৩ গুলিতেই ঝাঁঝরা হয় সিনহার শরীর

গেজেট ডেস্ক

অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খানকে হত্যা করা হয় এক মিনিটেই। টেকনাফ বাহারছড়ার পুলিশ ফাঁড়ির আইসি ইন্সপেক্টর লিয়াকত এক মিনিটে ৪টি গুলি করে। ৩টি গুলিতে ঝাঁঝরা হয় সিনহার শরীর। এমন তথ্যই শুরু থেকে ওঠে এসেছে নানাভাবেই।

এই তথ্যের সাথে অনেকটা মিলও পাওয়া গেছে চলমান তদন্তে গত ঈদুল আজহার রাতে (৩১ জুলাই রাত ১০টার দিকে) এমন কী ঘটনা ঘটেছিল যার কারণে সিনহাকে এক মিনিটের মধ্যে গুলি করা হল? এই প্রশ্নের উত্তর জানতে শুক্রবার দুপুর সোয়া ১ টার দিকে ঘটনাস্থলে যায় র‌্যাবের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের একটি দল। এ সময় তাদের সঙ্গে ছিলেন মামলা তদন্তকারী কর্মকর্তা সিনিয়র সহকারি পুলিশ সুপার মো. খায়রুল ইসলামসহ রিমান্ডে থাকা বরখাস্ত হওয়া ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, ইন্সপেক্টর লিয়াকত আলী ও এসআই নন্দ দুলাল রক্ষিত।

ঘটনাস্থলে পৌঁছে যেখানে অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহাকে গুলি করা হয়েছিল সেখানে রেকি করেন মামলা তদন্তকারী কর্মকর্তা। পরে ঘটনাস্থলেই হত্যাকান্ডের ঘটনাটি হুবহু উপস্থাপন করে দেখানোর মাধ্যমে প্রকৃত চিত্র দেখেছেন র‌্যাব কর্মকর্তারা।

শুক্রবার দুপুরে র‌্যাবের টিম ঘটনাস্থলে পৌঁছার পূর্বেই টেকনাফের বাহারছড়া এপিবিএন চেকপোস্টের সেই ঘটনাস্থলে ৩১ জুলাই রাতে ঘটনার দিন যেরকম ছিল, সেভাবেই সাজানো হয়েছিল চেকপোস্ট অঙ্গন। ঘটনার সময় মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদের ব্যবহৃত গাড়িটির মতো একটি প্রাইভেট কার রাখা হয়েছিল ঘটনাস্থলে। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মাত্র দুই মিনিটের মধ্যেই সেদিন ঘটনাটি কিভাবে সংঘটিত হয়েছিল- তা হুবহু দেখিয়েছেন হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িত আসামিরা। তাদের ঘটনার বিবরণ খুব সূক্ষভাবে প্রত্যক্ষ করেছেন র‌্যাবের মামলা তদন্তকারী কর্মকর্তাসহ উপস্থিত উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

মাত্র এক মিনিটে কিভাবে সিনহা হত্যাকান্ড সংঘটিত হয়েছিল, মূলত তারই একটি মহড়া এবং নানাভাবে বিশ্লেষণ চলে ঘটনাস্থলে। এর মাধ্যমে র‌্যাবের মামলা তদন্তকারী কর্মকর্তারা ঘটনার প্রতিটি সেকেন্ডকে নিয়ে বিশ্লেষণ করে দেখেন।

মামলা তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) র‌্যাব-১৫ এর সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মোহাম্মদ খায়রুল ইসলাম আসামিদের কাছ থেকে ঘটনার প্রকৃত চিত্র সম্পর্কে তথ্য নেন। রিমান্ডে থাকা বরখাস্তকৃত টেকনাফ মডেল থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, ইন্সপেক্টর লিয়াকত আলী ও এসআই নন্দ দুলাল রক্ষিত ওইদিনের ঘটনার বর্ণনা দেন র‌্যাবকে।

তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি বিশস্ত সূত্র নিশ্চিত করে যে, বরখাস্ত ইন্সপেক্টর লিয়াকতের বক্তব্য মতে, ঘটনার দিন রাতে ৪০ সেকেন্ড অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহার শরীরে ৪টি গুলি করেন লিয়াকত। তার মধ্যে তিনটি গুলি তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে লাগলেও একটি গুলি তার মিসফায়ার হয়। ৩টি গুলি শরীরে ঢুকে আবার বের হয়ে যায়। যে কারণে সিনহার শরীরে ৬টি ছিদ্র হয়। আর গুলির কোষা লেগে আঘাত হয় সিনহার গলায় ও বিভিন্ন স্থানে।

শুক্রবার দুপুর ১২টার কিছু সময় পরে র‌্যাব-১৫ কার্যালয় থেকে রিমান্ডে থাকা মূল ৩ আসামিকে নিয়ে ঘটনাস্থলে রাওনা দেন র‌্যাবের একটি বহর। পরে সোয়া ১টার দিকে বহরটি পৌঁছে ঘটনাস্থলে। তারপর একে একে তিন আসামি, যার যার ভূমিকা নিয়ে উপস্থাপন করেন এবং হত্যাকান্ডের বর্ণনা দেন। এভাবে চলে প্রায় কয়েক ঘন্টার জিজ্ঞাসাবাদ। তদন্ত শেষে একপর্যায়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন র‌্যাবের অতিরিক্ত মহা পরিচালক কর্নেল তোফায়েল মোস্তফা সরওয়ার।

তিনি বলেন, এমন কী ঘটনা ঘটেছিল সিনহাকে এক থেকে দেড় মিনিটের মধ্যে গুলি করা হল। এই প্রশ্নের উত্তর জানতে বরখাস্তকৃত ওসি প্রদীপসহ সিনহা হত্যা মামলার প্রধান ৩ আসামিকে মেরিন ড্রাইভের ঘটনাস্থলে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে আসা হয়েছে। ঘটনাস্থলেই হত্যাকান্ডের ঘটনাটি আসামিরা হুবহু উপস্থাপন করে দেখিয়েছেন। তাতে ঘটনার প্রকৃত চিত্র দেখছেন তদন্তকারী কর্মকর্তা।

র‌্যাবের অতিরিক্ত মহা পরিচালক কর্নেল তোফায়েল বলেন, অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা হত্যাকান্ডের বিষয়ে অনেক তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ হয়েছে। মামলা তদন্ড কর্মকর্তা নানাভাবে বিশ্লেষণ করে ঘটনার যাচাই করছেন। এই ঘটনায় নির্দোষ কেউ যাতে জড়িয়ে না যায়, আর কোন দোষী ব্যক্তি যাতে ছাড় না পায়, সব বিবেচনা করেই এই স্পর্শকাতর মামলাটির তদন্ড চলছে। কোনো সত্য যাতে গোপন না থাকে। সেজন্য প্রতি সেকেন্ডকে বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। সূত্র : যুগান্তর।

 

খুলনা গেজেট / এমএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!