খুলনা, বাংলাদেশ | ৬ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২১ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  ডেঙ্গুতে একদিনের ৯ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ১ হাজার ২১৪
খুলনা কলেক্টর্স শো

এক ছাদের নীচে জ্ঞানের আঁধার সাথে ইতিহাসের দর্শন

নিজস্ব প্রতিবেদক

জমে উঠেছে সৌখিন সংগ্রাহকেদের দুর্লভ সামগ্রীর প্রদর্শনী ‘কালেক্টরস শো’। নগরীর সোনাডাঙ্গা আবাসিক এলাকার এনজিও ফোরাম মিলনায়তনের নিচতলা, দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলার প্রদর্শন করা এসব সামগ্রী। ৩১ জন সংগ্রাহকের প্রদর্শনীতে স্থান পেয়েছে শত বছর ঐতিহ্য, ইতিহাস, দেশ বিদেশের পরিচিতি। যেন ইতিহাসের দর্শন থেকে জ্ঞানের ভাণ্ডার খুলে দেওয়া হয়েছে এক ছাদের নীচে।

বৃহস্পতিবার (২৬ জানুয়ারি) থেকে শুরু হওয়া প্রদর্শনী চলবে শনিবার (২৮ জানুয়ারি) রাত ৮টা পর্যন্ত। বৃহস্পতিবার সকালে প্রধান অতিথি হিসেবে প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মাহমুদ হোসেন।

প্রদর্শনীতে স্থান পেয়েছে হাজার বছরের দুর্লভ মুদ্রা, প্রাচীন ব্যবহার্য সামগ্রী, তৈজসপত্র, তালা-চাবি, কুপি বাতি, ধাতব মেডেল, ডাক টিকিট, দিয়াশলাইসহ বিভিন্ন এন্টিক সামগ্রী, অধুনালুপ্ত মসলিন শাড়ি, মুঘল আমলে ব্যবহৃত ঢাল ও আঙুলের বর্ম, ১৭শ’ শতাব্দিতে রৌপ্য ও তামার সংমিশ্রণে হাতে তৈরি প্লেট, সোভিয়েত ইউনিয়নের নৌসেনা বাহিনীর সাবমেরিনে ব্যবহৃত চাবি দেওয়া ঘড়ি, ১৯ শতকে কামার কর্তৃক ব্যবহৃত হস্তচালিত হাওয়ার যন্ত্র।  ব্রিটিশ আমলের পায়ের ঘুঙ্গুর, ইংল্যান্ডে ১৯৩০-৫০ সাল পর্যন্ত বিক্রি হওয়া রৌপ্য নির্মিত মোমদানি, ১৯ শতকে জমিদার বাড়িতে ব্যবহৃত গুপ্তি, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মানিতে ব্যবহৃত বিষ মিশ্রিত বেয়নেট। প্রদর্শনীতে আছে কাঠ ও লোহা দিয়ে তৈরি স্যান্ডেল, শতবর্ষ প্রাচীন লাড্ডু গোপাল মূর্তি, পিতলের আয়রন, বেদেদের বাঁশি, প্রাচীন বাটখারা, বাংলাদেশ সৃষ্টির পর থেকে প্রচলিত মুদ্রা ও ব্যাংক নোট।

প্রদর্শনীতে আনা হয়েছে পিতলের হুক্কা, পাথরের হুক্কা, মাটির হুক্কা, হরেক রকম ও বাহারি সব ম্যাচবক্স, বিভিন্ন প্রকারের মেডেল, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর ব্যবহৃত গহনা, প্রাচীন আমলের কেটলি, পানের বাটা, গহনার বাক্স, ১৯-২০ শতকের জাহাজের চাবি, পুরাতন খুলনা জেলার ১৯৬১ সালের ম্যাপ, বিজ্ঞানীদের ছবি সম্বলিত পেপার মানি, গোল্ড কয়েন। বঙ্গবন্ধু কর্ণারে রাখা হয়েছে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের ব্যবাহার্য সামগ্রীর রেপ্টিলকা। রয়েছে বঙ্গবন্ধুর ছবি সম্বলিত অর্ধশতাধিক ডাক টিকিট, রাজাকারদের স্যালারি শিট, মহান মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য কৃতিত্বের জন্য প্রদানকৃত খেতাব ও মেডেল, মহান মুক্তিযুদ্ধে ও যুদ্ধ পরবর্তী রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালনের জন্য প্রদানকৃত সামরিক খেতাব ও মেডেল। রানী এলিজাবেথের ছবি সম্বলিত ব্যাংক নোট, পলিমার ব্যাংক নোট, প্রাচীন-অস্বাভাবিক অদ্ভুত ও রঙিন মুদ্রা, বিভিন্ন দেশের ছিদ্র যুক্ত স্মারক মুদ্রা, অত্র অঞ্চলের ইউরোপীয় শাসনামলের ব্যাংক নোট, খাড়াভাবে মুদ্রিত বিভিন্ন দেশের ব্যাংক নোট, সিরিয়াল নম্বরের সকল ডিজিট একই সংখ্যার ব্যাংক নোট, বাংলাদেশের বিশেষ সিরিয়াল নম্বরের ব্যাংক নোট, বাংলাদেশের ত্রুটিযুক্ত বিভিন্ন প্রকার ব্যাংক নোট। আছে ১৯৪৭ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত পাকিস্তান শাসনামলের ব্যাংক নোট, ভারতীয় রাজতন্ত্রীয় প্রদেশের মুদ্রা, বাংলার সুলতানি শাসনামলের মুদ্রা, দিল্লীর সুলতানি শাসনামলের মুদ্রা, মোঘল শাসনামলের মুদ্রা, ভারতীয় স্বাধীন রাজ্যের মুদ্রা, বিলুপ্ত দেশের মুদ্রা, ইকমিক কুকার (প্রেসার কুকারের আদিরূপ)।

বাপ-দাদা উভয়েই ছিলেন ডাকবিভাগের চাকুরিজীবী। তাই ছোটবেলায়ই ছিল ডাকটিকেটের দুর্বলতা। দিনে দিনে সেই নেশা ছড়িয়েছে বিরল বই, স্মারক, সিনেমার টিকেট, রাজনৈতিক প্রমাণ্য সংগ্রহে। গড়েছেন হাজারো বইয়ের লাইব্রেরী। তিন সংগ্রাহক এম এম হাসান। গ্রামের বাড়ি ফরিদপুরের বোয়ালমারী হলেও থাকেন খুলনায়। তিনি বলেন, বাবা এবিএম সবুর আমার অনুপ্রেরণা। সংগ্রহে খুব আনন্দ পাই। নতুন প্রজন্ম পড়াশোনা বিমুখ। গ্রামে একটি লাইব্রেরী করেছি। আমি বিশ্বাস করি এখান থেকেই আলোকিত মানুষ আসবে। তারা আমাদের স্বপ্ন পূরণ করবে।

খুলনা কালেক্টস সোসাইটির সভাপতি মো. রবিউল ইসলাম নিজেই  ক্রটিযুক্ত, একই নম্বরের সিরিয়ালের নোট, ছাপা বিচ্ছুতি, মোগল আমল থেকে বর্তমান পর্যন্ত দেশবিদেশের বিরল, অধুনালুপ্ত ব্যাংক নোট-কয়েন, প্রচলিত-অপ্রচলিত মুদ্রা, ডাক টিকেট সংগ্রাহক। তিনি বলেন, ‘আমাদের শখের সংগ্রহগুলোকে সকলের মাঝে ছড়িয়ে দিতে চাই। প্রদর্শন দর্শনার্থীদের সাথে সংগ্রাহকদের একটু সেতুবন্ধন তৈরী করে দেয়। খুলনায় এর আগের প্রদর্শনীতেও নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ এসেছেন। এবারও তাঁর ব্যতিক্রম হবে না। ’

খুলনা গেজেট/কেডি




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!