খুলনা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক বলেছেন, ১৯৭১ সালে ২৫ মার্চ পাকিস্তানী স্বৈরচারবাহিনী এদেশে যে গণহত্য চালিয়েছিলো তা বিশ্বে নজিরবিহীন। পূর্ব পরিকল্পিত এই হত্যাযজ্ঞে একরাতে যত মানুষ প্রাণ হারিয়েছিলো তা অন্য যে কোন গণহত্যার সংখ্যার চেয়ে বেশি। নৃশংস এই হত্যাকান্ডের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি তাই এখন সময়ের দাবি।
শুক্রবার (২৫ মার্চ) রাতে গণহত্যা দিবস উপলক্ষ্যে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি একথা বলেন। খুলনা জেলা প্রশাসন সার্কিট হাউস ময়দানে এই আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
সিটি মেয়র বলেন, বঙ্গবন্ধু জানতেন পাকিস্তানী সামরিক বাহিনী অত্যন্ত নৃশংস, তাই তিনি ৭ই মার্চ সরাসরি স্বাধীনতার ঘোষণা দেননি। তারপরও স্বৈরশাসক ২৫ মার্চ রাতে নিরীহ বাঙালির ওপর ঝাপিয়ে পড়ে। কারণ তারা জানতো বঙ্গবন্ধুর আহবানে সাড়া দিয়ে বাঙালি যেভাবে জেগে উঠেছে তাতে তাদের আর দাবায়ে রাখা যাবে না। তিনি নতুন প্রজন্মের কাছে এসকল ইতিহাস তুলে ধরার আহবান জানান।
খুলনার জেলা প্রশাসক মোঃ মনিরুজ্জামান তালুকদারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন কেএমপি’র অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার এসএম ফজলুর রহমান, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ হারুনুর রশীদ, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাহবুব হাসান, বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ আলমগীর কবীর ও সরদার মাহাবুবার রহমান। এতে মুখ্য আলোচক ছিলেন উমেশচন্দ্র পাবলিক লাইব্রেরির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আনোয়ারুল কাদির। স্বাগত জানান অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এলএ) মোঃ মারুফুল আলম।
নানা আয়োজনের মধ্যদিয়ে খুলনায় গণহত্যা দিবস পালিত হয়। খুলনা আঞ্চলিক তথ্য অফিস (পিআইডি) সার্কিট হাউজ ময়দানে দুই দিনব্যাপী গণহত্যার ওপর দুর্লভ আলোকচিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে। স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসাসহ সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিশিষ্ট ব্যক্তি, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কন্ঠে গণহত্যার ওপর স্মৃতিচারণ ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। বাদযোহর বিভিন্ন মসজিদে নিহতদের স্মরণে বিশেষ মোনাজাত এবং মন্দির, গির্জা, প্যাগোডাসহ অন্যান্য উপাসনালয়ে বিশেষ প্রার্থনা করা হয়।
কুয়েট : খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ এর গণহত্যা দিবস স্মরণে ক্যাম্পাসে আলোর মিছিল বের করা হয়। শুক্রবার সন্ধ্যা পৌনে ৭টায় স্টুডেন্ট ওয়েলফেয়ার সামনে থেকে আলোর মিছিল বের করা হয়। মিছিলের নেতৃত্বে দেন বিশ^বিদ্যালয়ের মাননীয় ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. কাজী সাজ্জাদ হোসেন। মিছিলে বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষক,কর্মকর্তা,কর্মচারী ও শিক্ষার্থীবৃন্দ অংশগ্রহন করেন। পরে মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে ক্যাম্পাসস্থ ‘দুর্বার বাংলা’ পাদদেশে মোমবাতি প্রজ্জ্বলনের মধ্য দিয়ে শেষ হয়। পরে বিশ^বিদ্যালয়ের অডিটোরিয়ামে দিবসটির সাথে সঙ্গতি রেখে মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক চলচ্চিত্র প্রদর্শনী করা হয়।
খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় : ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবসে সকল শহীদদের বিনম্র শ্রদ্ধায় স্মরণ করেছে খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। স্বাস্থ্যবিধি মেনে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মোঃ শহীদুর রহমান খান এর নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী ক্যাম্পাসে সন্ধ্যায় মোমবাতি প্রজ্বলন করা হয়। মোমবাতি প্রজ্বলনের সময় উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ডাঃ খন্দকার মাজহারুল আনোয়ার (শাহাজান), শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. মোঃ তসলিম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক ড. এম এ হান্নান, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সংগঠন নীল দলের পক্ষ থেকে সভাপতি ডাঃ মোঃ আশিকুল আলম ও সাধারণ সম্পাদক ড. মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম, বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা, শিক্ষার্থী ও কর্মচারীবৃন্দ।