কিছু কিছু মানুষ আছেন যারা নিরবে নিভৃতে কাজ করে যান, মানুষের জন্য, সমাজের জন্য। উচ্চবিত্ত পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেও সাধারণ মানুষের মত জীবন যাপন করেন। এমন একজন মানবিক মানুষ খুলনার সৈয়দ জাহিদ হোসেন। পরোপকারী ও প্রচারবিমূখ এই মানুষটিকে দেখা যায় কখনো খেলার মাঠে, কখনো গরীব দুঃখীদের মাঝে, কখনো ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে, আবার কখনো শিক্ষাঙ্গনে।
খুলনা মহানগরীর ছোট বয়রা এলাকায় রাহাত ভবনে ১৯৪৯ সালে সৈয়দ জাহিদ হোসেন জন্ম গ্রহণ করেন। বাবা সৈয়দ আলী হোসেন, আর মা তৈয়মুন নেছা। বাবা আলী হোসেনের হাত ধরে জাহিদ হোসেন ব্যবসায় প্রবেশ করেন। মা গৃহিণী হলেও কবিতা লেখার হাত ছিল। মামা জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বাংলাদেশ তথা উপমহাদেশে একজন বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবি। জাহিদ হোসেনের দাদা মীর রাহাত হোসেন খুলনার বিশিষ্ট সমাজসেবক। তিনি খুলনার পৌরসভার (অধুনালুপ্ত) ৫ নং ওয়ার্ডের ৩৬ বছর কমিশনার ছিলেন। দাদা ও বাবাকে কাছ থেকে দেখেছেন সমাজ সেবা করতে, আর সেই অনুপ্রেরণায় নিজেও আস্তে আস্তে সমাজ সেবায় জড়িয়ে পড়েন।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনস্থ খুলনা আযম খান কমার্স কলেজ হতে এম কম ডিগ্রি লাভ করার পর ব্যবসায় মনোনিবেশ করেন। স্বাধীনতা উত্তর তার ব্যবসার বিকাশ ঘটতে থাকে।
ছাত্র জীবনে তিনি ছিলেন একজন সফল ক্রিকেটার। তাকে ক্রিকেটে সকলে অল রাউন্ডার হিসেবে জানতেন। ব্যাটিং ও বোলিংয়ে সমান পারদর্শী ছিলেন। পরবর্তীতে একজন সফল ক্রীড়া সংগঠক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন। তিনি খুলনা বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড এর ( বিসিবি)পরিচালক ও খুলনা জেলা ক্রীড়া সংস্থার সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। তিনি একইভাবে খুলনার বিভিন্ন ক্লাবের খেলাধুলার উন্নয়নে দান করেন। তিনি বিসিবির সফল পরিচালক ছিলেন। তার সময় ২০০৬ সালে খুলনা আবু নাসের ক্রিকেট স্টেডিয়াম প্রথম আইসিসি ভেনু’র মর্যাদা লাভ করে। ঐ বছর খুলনাবাসী খুলনায় আন্তর্জাতিক খেলা দেখার সুযোগ পায়। এছাড়াও আরো কয়েকটি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ও বিপিএল খুলনায় অনুষ্ঠিত হয়। তিনি খুলনা ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন এবং বর্তমানে খুলনা মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন।
গেল দু’বছর করোনার সময় এককভাবে খুলনায় সর্বোচ্চ পর্যায়ে দান করেন নিরবে নিভৃতে ।
তিনি খুলনার টাউন জামে মসজিদ, খুলনা আলীয়া মাদ্রাসা সহ বহু ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িত থেকে এর উন্নয়নে যেমন কাজ করছেন। তেমনই অনেক প্রতিষ্ঠানকে অকাতরে সহযোগিতা করে যাচ্ছেন। যার মধ্যে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও রয়েছে।
সৈয়দ জাহিদ হোসেনের সহধর্মিনী রওশন আরা বেগম। তার দুই সন্তানও সমাজে প্রতিষ্ঠিত। বড় ছেলে সৈয়দ আশিক হোসেন ব্যবসায়ী। আর ছোট ছেলে প্রকৌশলী সৈয়দ ওয়াসিফ হোসেন পিতার ব্যবসা দেখার পাশাপাশি নিজেও ব্যবসা করেন।
সমাজসেবক এই মানুষটি নৌ-পরিবহন, সি এন্ড এফ ও শিপিং এজেন্ট ব্যবসার সঙ্গে জড়িত।
কিন্তু তাকে দেখে মনে হবে আর দশটা সাধারণ মানুষের মত তার জীবন যাপন।