শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়া। বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবক্তা জিয়া। দেশ গঠনে জিয়া। সর্বপোরি মরহুম জিয়াউর রহমানকে নিয়ে ছোট্ট পরিসরে লেখা সম্ভব নয়। তবু কিছু লিখবো। ৩০ মে দেশ হারিয়েছে তার সূর্য সন্তানকে। আমরা হারিয়েছি দেশ গড়ার কারিগরকে।
স্বাধীনতার ঘোষণা নিয়ে আলোচনায় না যেয়ে শুধু এটুকু বলা যায়, আমরা বাংলাদেশীরা এবং আমাদের দেশ যখন ক্রান্তিলগ্নে পৌঁছায় তখন শহীদ জিয়া এবং পরবর্তীতে বেগম জিয়ার হাত ধরে সেই সময় অতিক্রম করেছে।
দেশ যখন টালমাটাল অবস্থায়, অপশাসন, লুটপাট, অর্থনৈতিক অবস্থা সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত, রাজনৈতিকভাবে দিকভ্রান্ত, স্বপ্ন ও আশা আকাঙ্খা হারিয়ে সমগ্র জাতি যখন ম্রিয়মাণ, ঠিক সেই সময়ে জনগণের অংশ গ্রহণের মাধ্যমে সংঘঠিত এক জনপ্রিয় সামরিক অভ্যুত্থান জিয়াউর রহমানকে জাতীয় রাজনীতির মূল কেন্দ্রে নিয়ে আসে।
জিয়া তখন চাইলেই সকল ক্ষমতা নিজের হাতে নিতে পারতেন। কিন্তু তিনি তা করেননি। তিনি রাষ্ট্রপতি সায়েমের অধীনে উপ-প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক হিসেবে কাজ শুরু করেন। তিনি জনগনকে পুনরায় ঐক্যবদ্ধ করার কাজ শুরু করেন। দেশে বহুদলীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়াও শুরু করেন। তিনি উৎপাদনের অর্থনীতিতে মনোনিবেশ করেন।
তিনি বহুদলীয় গণতন্ত্র পুন: প্রতিষ্ঠা করে জনগণের গনতান্ত্রিক মৌলিক অধিকার আবারও ফিরিয়ে দেন। জিয়া সংবাদপত্র ও গণমাধ্যমের ওপর থেকে সকল রকম বিধি নিষেধ ও কালাকানুন তুলে নিয়ে সকল মত ও পথকে উন্মুক্ত করেন। দেশে গণমাধ্যমে নতুন যুগের সূচনা হয়। তিনি বিচার বিভাগকে শৃঙ্খলামুক্ত করেন।
তাঁর সময় বহুদলীয় গণতন্ত্রের মাধ্যমে দেশে সংসদ ও রাষ্ট্রপতি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তার দীপ্তময় শাসনের শুরুতেই পার্বত্য অঞ্চল থেকে সমভূমি পর্যন্ত দেশের সকল মানুষের মধ্যে একটি জাতীয় ঐক্য সুসংহতির জন্য এবং একটি জাতিকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য তিনি জাতির নতুন পরিচয় তুলে ধরেন বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ। ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে যারা বাংলাদেশে বাস করেন, তারা বাংলাদেশি হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন।
শহীদ জিয়া বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি প্রতিষ্ঠা করে দেশ গড়ার জন্য ১৯ দফা কর্মসূচী ঘোষণা করেন। এই ১৯ দফা কর্মসূচী অতি অল্প সময়ের মধ্যে দেশে এক নতুন দিগন্তের সূচনা করে। ১৯৭৪ সালে যে দেশে খাদ্যের অভাব দেখা দিয়েছিল সেখানে শহীদ জিয়ার নেতৃত্বে দেশ চাল উৎপাদনে নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করে। কিছু চাল রপ্তানিও করা হয়।
শহীদ জিয়া অক্লান্ত পরিশ্রম, ও দেশের সকল প্রান্তে ছুটে বেড়ানো সর্বপোরি তার গতিময় নেতৃত্বের কারণে কৃষি, শিল্প, বাণিজ্য, শিক্ষা, চিকিৎসা ও সাংস্কৃতিকসহ জাতীয় জীবনকে সকল দিকে পরিবর্তনের জোয়ার অনুভূত হয়।
আমাদের খনিজ সম্পদ উন্নয়ন থেকে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, মানব সম্পদ উন্নয়ন থেকে পানি সম্পদ উন্নয়ন, এবং কেন্দ্রীয় সরকার থেকে শুরু করে গ্রাম সরকার জাতীয় জীবনের এমন কোন দিক নেই যে শহীদ জিয়া দৃষ্টি পড়েনি। মাত্র ৫ বছরের শাসনকালে তিনি তার বাস্তবমুখী ও সচেতন দৃষ্টি, কর্ম, দেশপ্রেম, সততা ও গতিশীল নের্তৃত্বের কারণে নিজেকে একজন আদর্শ রাষ্ট্র প্রধান হিসেবে বিশ্বের বুকে তুলে ধরতে পেরেছিলেন।
একটি ছোট ও উন্নয়নশীল দেশের রাষ্ট্রপ্রধান হয়েও সাউথ এশিয়া তথা এশিয়ার মতো বিশাল পরিসরে নিজেকে মধ্যমনি করে তুলতে পেরেছিলেন। শাহাদাত বার্ষিকীতে আমি তার আত্মার মাগফেরাত ও জান্নাত কামনা করে শেষ করছি।
(লেখক : গণমাধ্যম ও সমাজকর্মী )
খুলনা গেজেট/ আ হ আ