দিল্লি ক্যান্সার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শুক্রবার না ফেরার দেশে চলে গেলেন খুলনা -১ আসনের সাবেক এমপি শেখ আবুল হোসেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না রাজিউন)।
আগের রাতেই দিল্লিতে অবস্থানরত মেয়ে তানির সাথে আমার ফোনে কথা হয়। তানি জানিয়েছিল, আব্বা ক্লিনিক্যালি ডেড। ডাক্তারের ডিক্লিয়ারের অপেক্ষায় আছি আমরা। শুনে কিছুই বলতে পারিনি। কয়েক ঘন্টা পরেই জানলাম, জীবন মৃত্যুর লড়াইয়ে হেরে গেলেন সদা হাসিখুশি, সদালাপী শেখ আবুল হোসেন, যিনি দাদা হিসেবেই এলাকায় পরিচিত ছিলেন।
৮০ র দশক থেকে তার সাথে আলাপ, পরিচয়, ঘনিষ্ঠতা। এমনও হয়েছে, তাদের পুরানো হাজিবাড়ি কিংবা নিরালার বাসায় দিনভর আড্ডা দিয়েছি তার সাথে। প্রচন্ড আড্ডাবাজ ও অতিথিপরায়ণ ছিলেন। নিজেও খেতেন, মানুষকেও খাওয়াতেন। তাকে এক কাপ চা পর্যন্ত কখনোই সিংগেল খেতে দেখিনি, সকালের নাস্তা কিংবা দুপুরে বা রাতের খাবারও তিনি দলবল বা সাথের লোকজন নিয়ে খেতেন।
পুরা রোজার মাস রীতিমতো রুম ভর্তি লোকজন নিয়ে ইফতার করতেন। সহজেই মানুষকে আপন করে নিতেন, মানুষের উপকার করতেন। মাছ মারার প্রচন্ড নেশা ছিলো, বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় মাছ মারায় অংশ নিতেন। খুব সহজ, সরল, সাদা মনের মানুষ ছিলেন, মানুষকে সম্মান করতেন।
৮৮ তে বছর দেড়েক সময়ের জন্য স্বতন্ত্রভাবে এমপি হলেও মৃত্যুর আগ মুহূর্ত পর্যন্ত তিনি এমপি হিসাবেই পরিচিত ছিলেন। এমপি হবার আগে তিনি নিজ এলাকায় কমিশনারও ছিলেন। ঢাকা আসলেই ফোন দিতেন তাকে সময় দেয়ার জন্য, আপন ছোট ভাই জাতীয় পার্টির খুলনা মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক প্রয়াত শেখ আবুল কাশেম ভাইকে অত্যাধিক ভালোবাসতেন। মুলত দুর্বৃত্তদের গুলিতে কাশেম ভাই, ক্রসফায়ারে আপন ভাইপো ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর লিটু, অসুস্থ হয়ে নিজের ছেলে বাবু মারা যাবার পর তিনি মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েন এবং নিজেকে রাজনীতি থেকে গুটিয়ে নেন।
এর আগে বিভিন্ন সময়ে জাতীয় পার্টি খুলনা জেলা ও নগরের সভাপতি, কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন, ব্যক্তিগতভাবে সাবেক রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হোসাইন মোহাম্মদ এরশাদ সাহেব নিজেও তাকে পছন্দ করতেন। খুলনা আসলে এরশাদ সাহেব তার বাসায় বেশ কয়েকবার এসেছেন। খুলনার হাজিবাড়ির তিনি মুরব্বি ছিলেন। বিএনপি আওয়ামী লীগ কিংবা খুলনার অন্যান্য রাজনৈতিক ও ইসলামিক দলের নেতাদের সাথে তার ব্যক্তিগত সুসম্পর্ক বরাবরই ছিলো। শিশু থেকে বৃদ্ধ পর্যন্ত সবার সাথেই তিনি মিশতেন। হাজারও স্মৃতি তাকে নিয়ে, পরপারে ভালো থাকবেন দাদা, আল্লাহ আপনাকে বেহেশত নসিব করুন।
খুলনা গেজেট/এসজেড