খুলনা, বাংলাদেশ | ৯ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২৪ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ১০ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৮৮৬

একজন আদর্শ মুমিনের ঈদের দিন

মুফতি সাআদ আহমাদ

প্রিয় নবীজি সা. তখন মদিনায় এসেছেন মাত্র। এ সমাজের সব কিছুর সাথে এখনো তিনি পরিচিত নন। হঠাৎ একদিন নবীজি লক্ষ করলেন, মদিনার আজকের সকালটা একটু অন্যরকম। একটু বাড়তি সাজ-সজ্জা। একটু অনিয়ন্ত্রিত উৎসব আমেজ।

নবীজি সা. একজনকে ডেকে জিজ্ঞাসা করলেন, কি ব্যাপার? কি হচ্ছে আজকে? লোকটি সরল মনে জবাব দিল, ইয়া রসুলাল্লাহ! আমরা জাহেলি যুগ থেকেই এই দিনে এমন উৎসব করে আসছি।

তখন নবীজী বললেন, এ দুটি দিনের পরিবর্তে আল্লাহ তোমাদেরকে উত্তম দুটি দিন দান করেছেন। সে দুটি দিন হল, ইয়াওমুল আযহা ও ইয়াওমুল ফিতর (অর্থাৎ ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা)। সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ১১৩৪

সেদিন থেকেই ঈদের সূচনা। নিন্মে একজন আদর্শ মুমিনের ঈদ উদযাপনের চিত্র কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে তুলে ধরা হলো।

সদাকাতুল ফিতর আদায় করা

রোযার মাধ্যমে রোযাদার কিছুটা হলেও উপলব্ধি করতে পেরেছে সারাবছর অনাহারে থাকা অন্ন-বস্ত্রহীন ভাইদের কষ্ট। আজ রমযান শেষে ঈদের দিন সেই ভাইদের মুখেও যেন ফুটে ওঠে আনন্দের রেখা। সাথে সাথে নিজেও যেন পুত-পবিত্র হতে পারে রোযা রাখতে গিয়ে যে ত্রুটি-বিচ্যুতি হয়েছে সেগুলো থেকে। সেজন্য বিত্তবানদের উপর ওয়াজিব করা হয়েছে সদাকাতুল ফিতর। হযরত ইবনে আব্বাস রা. বলেন-
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সদাকাতুল ফিতর ওয়াজিব করেছেন রোযাদারকে অর্থহীন ও অশ্লীল কথা কাজ থেকে পবিত্র করার জন্য এবং মিসকীনদের খাবারের ব্যবস্থা হিসাবে। যে (ঈদের) নামাযের পূর্বে তা আদায় করবে তা গ্রহণযোগ্য হবে। আর যে নামাযের পর আদায় করবে তা সাধারণ সদাকা হিসাবে বিবেচিত হবে। সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ১৬০৯

সুতরাং এটি ঈদের খুশি সকলের তরে ব্যাপক করার স্বার্থে ইসলামের একটি নান্দনিক আয়োজন। তাই ঈদগাহে যাওয়ার পূর্বেই সদাকাতুল ফিতর আদায় করা মুস্তাহাব।

ঈদগাহে যাওয়ার পূর্বে মিষ্টিমুখ করা

যেহেতু ঈদের দিন রোযা রাখা নিষেধ তাই এর প্রকাশ হিসাবে মুস্তাহাব হল ঈদগাহে যাওয়ার পূর্বে কয়েকটি খেজুর খেয়ে যাওয়া এবং এক্ষেত্রে বেজোড় সংখ্যার প্রতি লক্ষ রাখা। খেজুরের ব্যবস্থা না থাকলে অন্য কোনো মিষ্টান্ন গ্রহণ করা। হযরত আনাস রা. বলেন-

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদুল ফিতরে খেজুর না খেয়ে বের হতেন না। এবং তিনি বেজোড় সংখ্যক খেজুর খেতেন। সহীহ বুখারী, হাদীস ৯৫৩

এটা হল ঈদুল ফিতরের ক্ষেত্রে। আর ঈদুল আযহার ক্ষেত্রে মুস্তাহাব হল না খেয়ে ঈদগাহে যাওয়া এবং কুরবানীর গোশত দিয়ে সর্বপ্রথম আহার গ্রহণ করা।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদুল ফিতরে কিছু খেয়ে বের হতেন আর ঈদুল আযহায় নামায পড়ে খেতেন। জামে তিরমিযী, হাদীস ৫৪২

আরেক বর্ণনায় এসেছে- নবীজী ঈদুল ফিতরে না খেয়ে বের হতেন না আর ঈদুল আযহার দিন ঈদগাহ হতে ফেরার পূর্বে কিছু খেতেন না। ঈদগাহ থেকে ফিরে পশু জবাই করার পর নিজ কুরবানীর পশুর গোশত থেকে খেতেন। মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ২২৯৮৪; সুনানে দারাকুতনী, হাদীস ১৭১৫; সুনানে সুগরা, বাইহাকী, হাদীস ৬৮৯

গোসল করে ঈদগাহে যাওয়া

ঈদের দিন গোসল করে ঈদগাহে যাওয়া মুস্তাহাব। সাহাবায়ে কেরাম গোসল করে ঈদগাহে গমন করতেন। হযরত নাফে রাহ. বলেন-

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. ঈদুল ফিতরে ঈদগাহে যাওয়ার পূর্বে গোসল করে নিতেন। মুয়াত্তা মালেক, হাদীস ৪৮৮

 

উত্তম পোশাক পরিধান করা

সামর্থ্য মোতাবেক ঈদের দিন উত্তম পোশাক পরিধান করা এবং বৈধ সাজগোজ গ্রহণ করা মুস্তাহাব। সাহাবায়ে কেরাম এমনটি করতেন। নাফে রাহ. বলেন
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. দুই ঈদে উত্তম পোশাক পরতেন। সুনানে কুবরা, বাইহাকী, হাদীস ৬১৪৩; ফাতহুল বারী ৬/৬৮, ৮/৪১৪

হযরত জাবের রা. বলেন- নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের (উন্নত) একটি জুব্বা ছিল যা তিনি দুই ঈদে এবং জুমআর দিন পরতেন। সহীহ ইবনে খুযাইমা, হাদীস ১৭৬৬

ইবনুল কায়্যিম রাহ. বলেন, নবীজীর একটি উত্তম পোশাক ছিল, তিনি দুই ঈদে এবং জুমায় তা পরিধান করতেন। যাদুল মাআদ ১/৪২৫

অতএব ঈদের দিন সাধ্যানুযায়ী উত্তম পোশাক পরা মুস্তাহাব। তবে উত্তম পোশাক অর্থ নতুন পোশাক নয়। তাই ঈদের জন্য নতুন পোশাক কেনার বাহানায় রমযানের মূল্যবান সময় নষ্ট করা মোটেও সমীচীন নয়।

ঈদের দিন তাকবীর বলা

ঈদের দিনের একটি বিশেষ আমল হল বেশি বেশি তাকবীর বলা। তাকবীর হল-
“আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার ওয়ালিল্লাহিল হামদ।

ঈদগাহে যাওয়ার সময় বিশেষ গুরুত্বের সাথে তাকবীর বলবে। নাফে রাহ. বলেন-
ইবনে উমর রা. ঈদুল আযহা ও ঈদুল ফিতরের সকালে সশব্দে তাকবীর বলতে বলতে ঈদগাহে যেতেন এবং ইমাম আসা পর্যন্ত তাকবীর বলতে থাকতেন। সুনানে দারাকুতনী, হাদীস ১৭১৬; সুনানে কুবরা, বাইহাকী, হাদীস ৬১২৯

এক পথে যাওয়া আরেক পথে ফেরা

সম্ভব হলে ঈদগাহে যাওয়ার সময় এক পথে যাওয়া আর ফেরার সময় ভিন্ন পথে আসা। নবীজী এমনটি করতেন।
হযরত জাবের রা. বলেন- নবীজী ঈদের দিন এক পথ দিয়ে ঈদগাহে যেতেন আর ভিন্ন পথ দিয়ে ফিরতেন। সহীহ বুখারী, হাদীস ৯৮৬

পায়ে হেঁটে ঈদগাহে যাওয়া

যতটুকু সম্ভব পাঁয়ে হেঁটে ঈদগাহে যাওয়া মুস্তাহাব। হযরত ইবনে উমর রা. বলেন- রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদগাহে পায়ে হেঁটে যেতেন এবং পায়ে হেঁটে ফিরতেন। সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস ১২৯৫, ১২৯৪

একে-অপরকে শুভেচ্ছা জানিয়ে দুআ করা

ঈদের দিন সাহাবায়ে কেরাম দুআসুলভ বাক্যে সৌজন্য বিনিময় করতেন। হাফেয ইবনে হাজার রাহ. উল্লেখ করেন, তাবেয়ী জুবাইর ইবনে নুফাইর বলেন- রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীগণ ঈদের দিন পরস্পর সাক্ষাতে বলতেন-
“তাক্বাব্বালাল্লাহু মিন্না ওয়া মিনকুম”
(আল্লাহ আমাদের আমলগুলো কবুল করুন এবং তোমারও।) ফাতহুল বারী ২/৪৪৬

এরকম সৌজন্য বিনিময়ের মাধ্যমে উত্তম আচরণ প্রকাশিত হয় এবং মুসলিম ভ্রাতৃত্ব সুদৃঢ় হয়।

মহান আল্লাহ আমাদের সকলকে উল্লেখিত নির্দেশনা মোতাবেক ঈদ উদযাপনের তৌফিক দান করুন। আমিন।

(লেখক : শিক্ষক, ইমদাদুল উলুম রশিদিয়া মাদরাসা, ফুলবাড়িগেট, খুলনা)

 

খুলনা গেজেট/এনএম




খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!