মোংলা বন্দরে উষ্ণ অভ্যর্থ্যনায় খুুশি বিদেশি পর্যটকরা। শনিবার (৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে মোংলা বন্দরের ৭ নং জেটিতে ভেড়ে বিলাসবহুল পাঁচ তারাকা মানের “গঙ্গা বিলাস নামের নৌযানটি।
এর আগে তাদের অভ্যর্থ্যনা জানাতে সেখানে উপস্থিত ছিলেন নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহামুদ চৌধুরী, ভারতীয় হাই কমিশনার প্রনয় ভার্মা, নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব মো: মোস্তফা কামাল, মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল মীর এরশাদ আলী, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীন নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান কমোডোর গোলাম সাদেক, বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আজিজুর রহমানসহ পদস্থ কর্মকর্তারা জাহাজের পর্যটকদের ফুল দিয়ে অভ্যার্থনা জানান।
পরে আগত অতিথিদের সম্মানে এক আলোচনা সভার আয়োজন করে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ।
আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন, নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহামুদ চৌধুরী, ভারতীয় হাই কমিশনার প্রনয় ভার্মা ও মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল মীর এরশাদ আলী। পরে অতিথিদের সম্মানে গঙ্গা বিলাসে আদলে তৈরি করা বিশলাকৃতির এক কেক কাটেন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহামুদ চৌধুরী।
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের ফুলের শুভেচ্ছা, দেশীয় ফল ও পিঠায় আপ্যায়ন এবং কেককাটার অনুষ্ঠান আনন্দ প্রকাশ করেছেন বিদেশী পর্যটকরা। এক কথায় অভিভূত হয়েছেন সুইডেন, ইন্ডিয়া ও জার্মানের পর্যটকরা।
প্রমোদতরীটি ১৩ জানুয়ারি ভারতের বেনারস রাজ্য থেকে ছেড়ে আসে। জাহাজটি ৫১ দিনে সফর শেষ করবে। জাহাজটি ভারতের পাঁচটি রাজ্য ও গঙ্গা, যমুনা, মেঘনা ও ব্রহ্মপুত্রসহ ২৭ টি নদ-নদী পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে এসেছে। বাংলাদেশে ১৪ দিন থাকার কথা রয়েছে। এই সময়ে বাংলাদেশের বিশ্ব ঐতিহ্য ষাটগম্বুজ মসজিদ পরিদর্শণ করবেন। পরবর্তীতে নৌপথে বরিশাল হয়ে, ঢাকার মেঘনা ঘাটে অবস্থান করে সোনারগাঁও ও ঢাকায় ভ্রমণ করবেন। বিভিন্ন দর্শনীয় ও ঐতিহাসিক গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ঘুরে কুড়িগ্রামের চিলমারী হয়ে ভারতে প্রবেশ করবেন বলে জানিয়েছেন অভ্যন্তরীন নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষের পরিচালক (ট্রাফিক) মো: রফিকুল ইসলাম।
তিনি বলেন, নৌযানটি বাংলাদেশী সীমানায় প্রবেশের পর থেকে অভ্যন্তরীন নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষসহ সরকারের বিভিন্ন সংস্থা তাদের নিরাপত্তা প্রদানের জন্য কাজ করেছে। সবকিছু মিলিয়ে তাদের সফর সুন্দর হয়েছে। এই সফরের মাধ্যমে বাংলাদেশের নৌপথের উপর নির্ভরশীলতা বৃদ্ধি পাবে বলে জানান তিনি।
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল মীর এরশাদ আলী বলেন, সম্প্রতি মোংলা বন্দরের মাধ্যমে ভারতের সঙ্গে পণ্য ও যাত্রী পরিবহন শুরু হয়েছে। এ কার্যক্রমের মাধ্যমে ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্ব ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরও জোরদার হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা বলেন, ‘গঙ্গা বিলাস রিভার ক্রুজের মাধ্যমে ভারত ও বাংলাদেশের জনগণকে জানার এক অনন্য প্রচেষ্টা। প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে যাওয়ার সময় বাংলাদেশের ঐতিহাসিক গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলো দেখা যাবে। এই স্থানগুলোকে বিশ্ব পর্যটন মানচিত্রে নিয়ে আসবে এবং পর্যটনের ওপর নির্ভরশীল স্থানীয় অর্থনীতিকে উপকৃত করবে বলে জানান তিনি।
তিনি আরও বলেন, ‘তবে এটা শুধু দুই দেশের পর্যটনের সম্ভাবনা উন্মোচন করার উপায় নয়, মানুষের মধ্যে সংযোগ স্থাপনের একটি নতুন উপায়ও। এছাড়া যে নদীগুলো ঐতিহ্যগতভাবে ভারত ও বাংলাদেশকে যুক্ত করেছে গঙ্গা বিলাস সেই সংযোগকে পুনরুজ্জীবিত করতে সক্ষম হবে।’
নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহামুদ চৌধুরী বলেন, ভারত বাংলাদেশের মধ্যে বন্ধুত্ব অনেক পুরোনো। এটি একটি বিশ্বস্ত বন্ধুত্বের নিদর্শণ। গঙ্গা বিলাসের এই ভ্রমণ, দুই দেশের বন্ধুত্বকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যাবে। এটি ছড়িয়ে পড়বে পশ্চিমা দেশগুলোতে। কারণ এই প্রমোদতরীতে যারা রয়েছেন তারা সবাই বিদেশী। এছাড়া এই ভ্রমনের মধ্য দিয়ে দুই দেশের বন্ধুত্বের গল্প ছড়িয়ে পরবে দেশের প্রতটি এলাকা। সেই সাথে বাংলাদেশে পর্যটন শিল্পের বিকাশে অগ্রনী ভূমিকা পালন করবে এই নৌ ভ্রমন। যা দুই দেশের অর্থনৈতিক সম্পর্ককে আরও বেশি সূদৃঢ় করবে বলে জানান মন্ত্রী।
খুলনা গেজেট/ এসজেড