আগামী সপ্তাহের সোম-মঙ্গলবারের মধ্যে পরিকল্পনা ও তারিখসহ এইচএসসি পরীক্ষার বিষয়ে ঘোষণা আসবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি।বুধবার দুপুরে অনলাইনে জুম মিটিংয়ে শিক্ষা বিটের সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে একথা বলেন শিক্ষামন্ত্রী। এছাড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের চলমান ছুটিও আরেক দফা বাড়ানো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘আগামী সপ্তাহের সোম-মঙ্গলবারের মধ্যে পরিকল্পনা তারিখসহ ঘোষণা (এইচএসসি পরীক্ষার বিষয়ে) করতে পারবো।’
এইচএসসি পরীক্ষার বিষয় শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘এইচএসসি পরীক্ষা নেওয়ার বিষয়ে আমাদের সব প্রস্তুতি, সবকিছু আমাদের ষোলআনা আছে। আমাদের প্রশ্ন আছে, প্রশ্ন জায়গামতো আছে, সবই আছে।’
‘এখন প্রশ্ন হলো, এই যে বিরাটসংখ্যক পরীক্ষার্থী, ১৪ লাখ পরীক্ষার্থী, তার সঙ্গে অভিভাবকেরা যান সেটা নিয়ে সংখ্যা অনেক বাড়ছে। লক্ষাধিক পর্যবেক্ষক শিক্ষক, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য সব মিলিয়ে ২৫-৩০ লাখ লোকের একটা সম্পৃক্ততা এবং যাদের অধিকাংশই হয়তো গণপরিবহন ব্যবহার করবেন। সেই জন্য স্বাস্থ্যঝুঁকির ব্যাপারটা আমাদের মাথায় আছে। যার কারণে এটি নিতে পারিনি। ’
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘আগামী দিনে অনেক কথা আসছে, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন শীতের সময় প্রকোপ বাড়ার সম্ভাবনা আছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন প্রকোপ বাড়তে পারে। একটা দ্বিতীয় ঢেউয়ের কথা বলেছেন। এর মধ্যে আমরা কী করবো?’
‘কোনো কোনো পরীক্ষার্থী বলেছে যে পরীক্ষা ছাড়া মূল্যায়ন চায়, আমাদের কাছে অনেকেই ই-মেইল করেছেন, অনুরোধ… আমরা পরীক্ষা দিতে চাই না, আমাদের আগের পরীক্ষার রেজাল্ট দিয়ে মূল্যায়ন করার জন্য। এটা একটা অপশন।’
তিনি বলেন, ‘আমরা সব প্রস্তুতি নিলাম, সবকিছু করলাম তারপরও পরীক্ষা নেওয়া গেল না, তাহলে কী হবে? তাহলে কি শিক্ষার্থীরা পরবর্তী পর্যায়ে যাবে না? নিশ্চয়ই তারা পরবর্তী পর্যায়ে যাবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য তো তাদের আরেকবার পরীক্ষার সম্মুখীন হতেই হচ্ছে। তাহলে পরীক্ষা ছাড়াই মূল্যায়ন করার একটা সম্ভাবনা তো থেকেই যাচ্ছে।
‘আমরা সেটিকে নাকচ করে দিচ্ছি, কিন্তু অনেক পরীক্ষার্থী আছে তাদের অভিভাবকদেরও অন্য অপশন ভাবতে হবে যেন ২-৩ বছর গিয়ে কোনো শিক্ষার্থী, কোনো চাকরির জায়গায় গিয়ে কেউ যেন তাকে না বলে ও আচ্ছা, তুমি টুয়েন্টি টুয়েন্টির ব্যাচ! তুমি তো পরীক্ষা দিয়ে পাস করোনি। কাজেই এই এইচএসসিটাকে গুরুত্ব দিলাম না, এমন যেন না হয়। তাহলে কী কী কতটুকু সম্ভব হতে পারে, আমরা এর সবকিছু একেবারে সুনির্দিষ্টভাবে ঠিক করেছি। ’
‘আমি আশা করছি, আগামী সপ্তাহের সোম-মঙ্গলবারের মধ্যে আমরা এই বিষয়টি সুনির্দিষ্টভাবে আমাদের পরিপূর্ণ পরিকল্পনা একেবারে তারিখসহ আপনাদের সামনে ঘোষণা করতে পারবো। ’
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘পরীক্ষা নিলে কতটুকু পরীক্ষা নেবো, সেই পরীক্ষাটা কী পদ্ধতিতে হবে- আমি পরীক্ষার্থীদের বলতে চাই আমরাও এক সময় পরীক্ষা দিয়েছিলাম। আমাদেরও সন্তান-সন্তুতি আছে। আমরা কিন্তু কোনোভাবে চাই না, আমাদের পরীক্ষার্থীরা দীর্ঘদিন, প্রায় ছয় মাস পড়াশোনা থেকে অনেকেই দূরে সরে গেছেন, অনেকেই তেমন নিয়মিতভাবে পড়াশোনা করতে পারছেন না। এটা খুব স্বাভাবিক, পরীক্ষা কবে হবে কবে হবে করে প্রস্তুতি নিয়ে রাখা যায় না। আমি বারবার বলেছি অন্তত ১৫ দিন সময় দেবো। ’
‘আমার মনে হয় পরীক্ষা শুরু করার আগে অন্তত চার সপ্তাহ সময় দেবো। আমরা চেষ্টা করবো দ্রুততম সময়ের মধ্যে মিনিমাম কতগুলো সাবজেক্ট ও মিনিমাম কত নম্বর দিয়ে পরীক্ষা কাজটি সম্পন্ন করতে পারবো। হয়তো কিছু কিছু বিষয়ের বেলায় জেএসসি, এসএসসির নম্বর দিয়ে মূল্যায়নের মধ্যে নিয়ে আসতে পারি। আমরা অনেক অপশন ঠিক করেছি। ’
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, পরীক্ষা নিতে যাচ্ছি সেই সময়ে পরীক্ষার্থী বা তার বাড়িতে কোভিডে আক্রান্ত আছে, সেই পরীক্ষার্থীর কী হবে- তার জন্যও একটা বিকল্প ব্যবস্থা করে রাখতাম। সব অপশন নিয়ে আমরা আসবো। আমাদের পরীক্ষার্থী যেন কোনোভাবে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। তারা যেন সুবিধাজনক সময়ে দুশ্চিন্তা ছাড়া পরীক্ষা দিতে পারে।
এদিকে করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের চলমান ছুটি আরেক দফা বাড়ানো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।
তিনি বলেন, ‘শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছুটি তো বাড়াতে হবে, তারিখটা আপনাদের জানিয়ে দেব।’
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন বলেছেন, ছুটি কতদিন বাড়বে, সে সিদ্ধান্ত বৃহস্পতিবারের মধ্যে সংবাদমাধ্যমকে জানাবেন তারা।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, করোনার সময়ে ধাপে ধাপে আমরা ছুটি বাড়িয়েছি। এটি ছাড়া তো সম্ভব ছিলো না। ধাপে ধাপে বাড়ানো ছাড়া একসাথে অনেক ছুটি বাড়ানোর যুক্তি নেই। শিক্ষার্থীরাতো অনলাইনে পড়াশুনা করছেন, তাদের শিক্ষকদের সাথে যোগাযোগ আছে। আমরা চাই দ্রুত সব ঠিক হোক, দ্রুত আমরা স্বাভাবিক কার্যক্রমে ফিরতে চাই
“ও” লেভেলের পরীক্ষার বিষয়ে তিনি বলেন, “ও” লেভেলের প্রতিদিন ১৮০০ পরীক্ষার্থী। সেখানে মোট ৬ হাজার শিক্ষার্থী। তাদের ৩৫টির বেশি পরীক্ষা কেন্দ্র। তাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে তাদের কাজ করা অনেক সহজ হবে। তাদের সব শর্তই দেয়া হয়েছে। এবং যারা অক্টোবরের মধ্যে দিতে না পারবে, তারা মে মাসের আগে আর দিতে পারবেন না।
কওমির ক্ষেত্রে বলেন, কওমি মাদরাসা খোলার বিষয়ে একটি অন্যতম বিষয় তারা অনেকটাই আবাসিক। তারা স্বাস্থ্যবিধি মেনেই শিক্ষা কার্যক্রম চালানোর কথা জানিয়েছে। সেজন্যই তারা আমাদের কাছ থেকে অনুমতি পেয়েছেন। তবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার স্বার্থে তাদের অনুমতি দেয়া হয়েছে। যাতে কোন সমস্যা না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ম্যানেজিং কমিটি নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ম্যানেজিং কমিটি নিয়ে অনেক সমস্যা হয়। সারাদেশে এতো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, তাদের অনেক ধরনের সমস্যা থাকে। এটি নিয়ে একটি নীতিমালা হচ্ছে। সেটি চূড়ান্ত করতে একটি সংসদীয় উপকমিটি করে দেয়া হয়েছে। তারা ডিসেম্বরের মধ্যেই এটি চূড়ান্ত করতে পারবেন।
করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরুর পর গত ১৭ মার্চ থেকে দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। আগামী ৩ অক্টোবর পর্যন্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছুটি ঘোষণা করা আছে।
গত ১ এপ্রিল থেকে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা হওয়ার কথা থাকলেও করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে তা স্থগিত রয়েছে। বছর প্রায় শেষ হয়ে আসায় এ পরীক্ষা নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের।
স্থগিত থাকা এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা কবে থেকে নেওয়া হবে, সেই তারিখ আগামী ‘সোম-মঙ্গলবারের মধ্যে’ ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী।
মহামারীর কারণে এবার পঞ্চম ও অষ্টমের সমাপনী পরীক্ষা নেবে না সরকার। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এসব শ্রেণির শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করে উপরের শ্রেণিতে তোলার কথা রয়েছে।
তবে চারটি শর্ত দিয়ে আগামী অক্টোবর ও নভেম্বর মাসে ব্রিটিশ কাউন্সিলের পরিচালনায় ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষার্থীদের ‘ও’ এবং ‘এ’ লেভেলের পরীক্ষা নেওয়ার অনুমতি দিয়েছে সরকার।
শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব আমিনুল ইসলাম খান, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সৈয়দ গোলাম ফারুক, ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান মু. জিয়াউল হক এ মিটিংয়ে যুক্ত ছিলেন।
খুলনা গেজেট/এনএম