‘ঊনো বর্ষায় দুনো শীত’ অর্থাৎ স্বল্প বৃষ্টিপাত হলে সে বছর প্রচুর শীত পড়ে! বাংলা এ প্রবাদটির একটু ভিন্ন রূপায়ন ঘটলো খুলনা মহানগরীতে। মঙ্গলবার বেলা ১২টা ২০মিনিট থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত ৩৯মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়। সেই পানিবদ্ধ অবস্থায় নাকাল নগরবাসী, সন্ধ্যা ৬টায়ও কাটেনি। তাই দুর্ভোগে বিকেলে ঘরমুখো মানুষকে বলতে শোনা গেছে, এ যেনো ঊনো বর্ষায় দুনো পানি। সামান্য বৃষ্টিতে তলিয়ে যায় বিভাগীয় শহর খুলনার ব্যস্ততম গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও নিম্ন এলাকা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বৃষ্টিতে তলিয়ে যায় নগরীর খানজাহান আলী রোড, পিটিআই মোড়, রয়েল মোড়, কেডিএ এভিনিউ, লোয়ার যশোর রোড, ডাকবাংলো মোড়, শান্তিধাম মোড়, ফুলমার্কেট, টুটপাড়া, নতুন বাজার, খালিশপুর বাস্তুহারা, বয়রা এলাকা, মুজগুন্নী, হাউজিং বাজার, নতুন কলোনী, দৌলতপুর ও খানজাহান আলী থানার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক এবং নিম্ন এলাকার ঘরবাড়ী।
বিকেল পর্যন্ত সড়কগুলোতে কোথাও কোথাও দুই থেকে তিন ফুট পানি জমে খাল-বিল বা জলাশয়ের মতো দৃশ্যে পরিণত হয়। এছাড়া অলিগলি, সরকারি-বেসরকারি অফিস, মার্কেট ও বিপনী বিতানের সামনে তিন থেকে চার ঘন্টা জমেছিল পানি। বিভিন্ন এলাকায় সৃষ্টি হয়েছে দীর্ঘস্থায়ী পানিবদ্ধতা। ফলে জনদুর্ভোগে পড়ে নগরবাসী।
ঘরমুখো পথচারীদের অভিযোগ, অপরিষ্কার ও অপরিকল্পিত পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা, যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনার স্তুপ, বড় বড় খাল ভরাট, অবৈধভাবে দখল, ফুটপাত ও ড্রেনে অবৈধ অস্থায়ী স্থাপনার কারনে এ পানিবদ্ধতা অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
খুলনা বিভাগীয় আবহাওয়া অধিদপ্তরের ইনচার্জ মোঃ আমিরুল আজাদ বলেন, মঙ্গলবার বেলা ১২টা ২০মিনিট থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত ৩৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এবছর বর্ষা মৌসুম জুনে ৩৫০মিলিমিটার ও চলতি মাসের ২৮ জুলাই পর্যন্ত ২০৫মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। তবে গত বছর (২০১৯) জুনে ১১৫ ও জুলাইয়ে ৩২৯মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছিল। সে হিসেবে গড়ে এবছর বৃষ্টিপাত একটু বেশি।
তিনি আরও বলেন, এখন থেকে প্রতিদিন দু/এক পশলা বৃষ্টিপাত হবে। তবে আগামী দুই-তিনদিন বৃষ্টিপাত কম হতে পারে। আগামী মাসে মৌসুমী জলবায়ুর স্বাভাবিক চাপের কারণে বৃষ্টিপাত কিছুটা বাড়তে পারে। আগামী ১ আগস্ট ঈদুল আযহার দিন আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে, তবে সন্ধ্যায় বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।’
বিআইডব্লিউটিএ ঢাকায় কর্মরত মিসেস মোহসিনা ফেরদৌসী নিজ বাড়ী খুলনায় ফিরেছেন মঙ্গলবার সন্ধ্যায়। বাস থেকে রয়েল মোড়ে নেমেই পড়েছেন বিপাকে। তিনি বললেন, ‘দু’দিন পর ঈদ। এখনো মানুষের এতো দুর্ভোগ। গ্রীষ্মকালীন মৌসুমী ফলমুলের উচ্ছিষ্ঠ ও মনুষ্য সকল ময়লা বৃষ্টির পানিতে মিলেমিশে রাস্তায় এক দুর্গন্ধময় অসহনীয় পরিবেশ।’
পাশে দাড়ানো দোকানী বললেন, ‘তাপমাত্রায় অতিষ্ঠ, বৃষ্টি মধ্যদিয়ে স্বস্তি পাইছি। তবে স্বস্তির মাঝেও সৃষ্টি হয়েছে দুর্ভোগ।’
খুলনা গেজেট/এআইএন