দীর্ঘ ১৮ মাস বন্ধ থাকার পর গোপালগঞ্জে প্রায় ১২’শ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠদান শুরু হয়েছে। স্কুল খোলার প্রথম দিনে ব্যাপক আনন্দ উল্লাসের মধ্যদিয়ে শিক্ষার্থীদের স্কুলে উপস্থিত হতে দেখা গেছে। স্কুলে প্রবেশের আগে শিক্ষার্থীদের শরীরের তাপমাত্রা ও অক্সিজেন লেভেল পরিমাপ করার পর হাতধুয়ে প্রবেশ করানো হয়। শিক্ষার্থীদের বরণ করতে স্কুলগুলোর প্রধান ফটক নান রংএর বেলুন ও কাগজ দিয়ে সাজানো হয়েছে। স্কুলের প্রবেশদ্বারে শিক্ষার্থীদের চকলেট দিয়ে হাসিমুখে বরণ করে নেয়া হয়।
জেলায় ৮৬২টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ২০৩টি মাধ্যমিক ও ৮৯টি মাদ্রাসা ও শতাধিক কিন্ডারগার্ডেন স্কুল রয়েছে। করোনা সংক্রমণের পর থেকে দীর্ঘ ১৮ মাস ধরে বন্ধ ছিলো জেলার সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। আজ রোববার(১২ সেপ্টেম্বর) স্কুল খোলার প্রথম দিনে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা গেছে। অনেক দিন পর বন্ধুদের দেখা পেয়ে অনেকেই আবেগ-আপ্লুত হয়ে পড়ে।
শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য সচেতনার উপর নির্দেশনা দেন। স্কুলের শ্রেনী কক্ষগুলোতে শিক্ষার্থীদের ‘ভি’ ফরমেটে বসানো হয়েছে। ব্যবস্থা করা হয়েছে স্যানেটাইজার আর মাস্কের। দীর্ঘদিন পর ক্লাস করতে পেরে খুশি শিক্ষার্থীরা। এতে কিছুটা হলেও তাদের পড়াশোনার ঘাটতিপূরণ হবে বলেও মনে করছে তারা। শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যবিধি মানাতে কঠোর ছিলেন শিক্ষকরা।
গোপালগঞ্জ স্বর্ণকলি উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেনীর ছাত্র ফেরদৌস কবীর রাদিন বলেন, ‘দীর্ঘদিন পর স্কুল খুলেছে এতে আমি খুশি। স্যারেরা সরাসরি পাঠদান করাবেন। এতে আমরা কিছুটা হলেও ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবো। স্কুল খুলে দেয়ায় সরকারকে ধন্যবাদ।’
বীণাপানি সরকারি উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের এসএসসি পরীক্ষার্থী ঐশ্বর্য কৃত্তর্নীয়া বলেন, ‘আমি এ বছর এসএসসি পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করবো। দীর্ঘদিন স্কুল বন্ধ থাকায় আমরা পড়াশোনায় অনেক পিছিয়ে পড়েছি। এখন আমাদের নিয়মিত পাঠদান করানো হবে। তাতে আমরা কিছুটা হলেও উপকৃত হবো।’
একই স্কুলে এসএসসি পরীক্ষার্থী তাবাসচ্ছুম খান ও কামরুন্নেছা তোয়া বলেন, স্কুল খোলায় তারা খুব খুশি। তারা সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, প্রতিদিন যে ২ টা ক্লাসের বিধিনিষেধ বেঁধে দিয়েছেন এটা তারা বৃদ্ধির দাবী জানান। এতে তারা কিছুটা হলেও ক্ষতি পূষিয়ে নিয়ে ভাল ফলাফল করতে পারবে বলে মন্তব্য করেন।
গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার ৮৯ নং করপাড়া হাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি এস এম নজরুল ইসলাম বলেন, ‘স্কুল খুলেছে এতে ভাল লাগছে। ছেলে মেয়েরা আবার স্কুলমুখি হবে। পড়াশোনায় মনোযোগী হবে। আমি আশা করবো শিক্ষকরা আরো বেশি মনোযোগী হবেন, যাতে শিক্ষার্থীরা ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারেন। আর সরকারের কাছে দাবী যতো দ্রুত সম্ভব শিক্ষার্থীদের জন্য টিকার ব্যবস্থা করবেন।’
বীণাপানি সরকারি উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় সহকারি শিক্ষক কালীদাস বিশ্বাস বলেন, স্কুল খুলেছে এতে আমরা আনন্দিত। আমরা মনোযোগ দিয়ে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করাতে পারবো। এতে শিক্ষার্থীদের উপকার হবে। তবে, শিক্ষার্থীদের যত দ্রুত সম্ভব টিকা দেয়া প্রয়োজন বলেও তিনি মন্তব্য করেন। কারণ শত চেষ্টা করেও শিক্ষার্থীদের নিরাপদ দূরত্ব মানানো যাবে না। এতে করোনা ঝুঁকি থাকবে।
গোপালগঞ্জ বীণাপানি সরকারি উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মৃন্ময় বাড়ৈ বলেন, ‘আমরা খুব আনন্দিত। এতো দিন শিক্ষার্থীদের সাথে আমাদের সরাসরি যোগাযোগ ছিলনা। এখন থেকে পূর্বের ন্যায় হাতে-কলমে পাঠদান করাতে পারবো। এতে শিক্ষার্থীরা উপকৃত হবে। তারা পড়াশোনায় আবারও মনোনিবেশ করতে পারবে।’
গোপালগঞ্জ এস এম মডেল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ মঈন উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, ‘সরকারি নির্দেশ মোতাবেক আমরা প্রথমদিন পাঠদান করেছি। শিক্ষার্থীদের সকল প্রকার স্বাস্থ্য বিধি মেনে স্কুলে প্রবেশ করানো হয়েছে এবং পাঠদান করানো হচ্ছে। এতে অভিভাবক, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা অনেক অনেক খুশি। কারণ অভিভাবকরা ছেলে-মেয়েদের ভবিষ্যত নিয়ে অনেক চিন্তিত হয়ে পড়েছিলেন। স্কুল খোলায় তারা স্বস্তি ফিরে পেয়েছেন।’
খুলনা গেজেট/ এস আই