খুলনা, বাংলাদেশ | ৯ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২৪ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  মিরপুরে গ্যাস সিলিন্ডার লিকেজ থেকে বিস্ফোরণ, নারী-শিশুসহ দগ্ধ ৭
  সাবেক প্রধান বিচারপতির মৃত্যুতে আজ সুপ্রিম কোর্টের বিচারকাজ বন্ধ
  সিইসিসহ নতুন নির্বাচন কমিশনারদের শপথ আজ
  অ্যান্টিগা টেস্ট: ৪৫০ রানে ইনিংস ঘোষণা ওয়েস্ট ইন্ডিজের, দ্বিতীয় দিন শেষে বাংলাদেশ ৪০/২

উৎপাদন কম, মূল্য বৃদ্ধি : পাট রপ্তানি অর্ধেকে নেমেছে

একরামুল হোসেন লিপু

দেশের রপ্তানি বাণিজ্যে তৈরি পোশাক শিল্পের পরেই দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে পাট। পাট অধিদপ্তরের তথ্যানুসারে বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার এক চতুর্থাংশ প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে পাট ও পাট শিল্পের সঙ্গে জড়িত। বিশ্ববাজারে চাহিদার প্রায় ৯০ শতাংশ কাঁচা পাট এবং ৪০-৫০ শতাংশ পাটজাত পণ্য বাংলাদেশ রপ্তানি করে থাকে। বিশ্বের সবচেয়ে বেশি পাট রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে মর্যাদা পেয়েছে বাংলাদেশ। পাট খাতের বৈশ্বিক রপ্তানি আয়ের ৭২ শতাংশ বর্তমান বাংলাদেশের দখলে। একক কৃষিপণ্য হিসেবে বর্তমানে জাতীয় রপ্তানি আয়ে পাটখাতের অবদান অনস্বীকার্য।

পাট উৎপাদনে বিশ্বে ভারতের অবস্থান শীর্ষ হলেও রপ্তানিতে বাংলাদেশ বিশ্বের প্রথম। চলতি বছরের ২৪ জুন পর্যন্ত বিশ্বের ১৩টি দেশে মোট ১৩ লাখ ৪৪ হাজার ৮৩৫ বেল পাট রপ্তানি করেছে। এর মধ্যে ভারতে ৭ লাখ ৯৭ হাজার ৩৩২ বেল, পাকিস্তানে ১ লাখ ৮১ হাজার ৯৫১ বেল, নেপালে ২ লাখ ৫৯ হাজার ২০৫ বেল, চীনে ৪১ হাজার ২৬৭ বেল, ব্রাজিলে ৩১ হাজার ৭১৪ বেল, ইউকেতে ৯ হাজার ২৫১ বেল, কোরিয়ায় ৩ হাজার ৯০৯ বেল, তিউনিশিয়ায় ১ হাজার ৫৪৫ বেল, ভিয়েতনামে ১৪৪ বেল, ইউএসএ তে ৪ হাজার ৬২১ বেল, আইভরিকোষ্টে ৩ হাজার ৪৮ বেল, রাশিয়ায় ১৩৯ বেল, থাইল্যান্ড ৭০৯ বেল। পাট রপ্তানি থেকে চলতি বছরের ২৪ জুন পর্যন্ত বাংলাদেশ আয় করেছে ১ হাজার ৭৩১ দশমিক ৩৪ কোটি টাকা।

কিন্তু এ বছর উৎপাদন কম হওয়ায় দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলশ্রুতিতে পাট রপ্তানি অর্ধেকে নেমেছে।

সূত্র মতে, গত বছর সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশ যেখানে তিন লাখ ১০ হাজার ৩১৮ বেল পাট রপ্তানি করেছে, সেখানে চলতি বছর সেপ্টেম্বর পর্যন্ত রপ্তানি হয়েছে এক লাখ ৬২ হাজার ৯৪৮ বেল। গত বছরের তুলনায় এ বছর রপ্তানি কমেছে ৫২ দশমিক ৫ শতাংশ। ফলশ্রুতিতে রপ্তানি আয়ও কমেছে যথেষ্ট পরিমাণ।

তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষকেরা গতবছর তাদের উৎপাদিত পাটের কাঙ্খিত মূল্য না পাওয়ায় এ বছর পাট চাষে নিরুৎসাহিত হয় । গত বছর মৌসুমের শুরুতে দেশের বিভিন্ন মোকামে মন প্রতি পাটের মূল্য ছিল ১৩’শ টাকা। পর্যায়ক্রমে মূল্য ১৪’শ টাকা,১৬’শ টাকা, ১৮’শ টাকা, দুই হাজার টাকা থেকে সর্বোচ্চ আড়াই হাজার টাকা পর্যন্ত উঠে। কিন্তু চলতি বছর মৌসুমের শুরুতে দেশের বিভিন্ন মোকামে মনপ্রতি ৩৩০০ টাকা থেকে শুরু হয় পাট বিক্রি। পরবর্তীতে মন প্রতি ৩০০ টাকা কমে ৩ হাজার টাকা বিক্রি শুরু হয়। পর্যায়ক্রমে এটি ৩৩০০ টাকা থেকে ৩৯০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। এরপর সর্বোচ্চ মূল্য ৪ হাজার টাকা থেকে ৪১০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়।

গোপালগঞ্জ জয়নগর মোকামের এক সময়ের প্রান্তিক পাট চাষী ও বর্তমান ওই বাজারের বড় আড়ৎদার রিপন চৌধুরী খুলনা গেজেটকে বলেন, পাটের মূল্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে কোন কারসাজি কিংবা সিন্ডিকেট চলে না। কোন কারণ ছাড়াই এ মূল্য অটো সেট হয়ে যায়। পাট মোকামের বাজার এমন জিনিস এটা কেউ বাড়াইতেও পারে না, কমাইতেও পারে না, এটা কেউ নিয়ন্ত্রণও করতে পারে না।

তিনি বলেন, মিল মালিকেরা বহুবার চেষ্টা করেছেন সিন্ডিকেট করে পাটের দাম কমানোর জন্য, কিন্তু তারা বারবার ব্যর্থ হয়েছেন। সিন্ডিকেট করে তারা সাময়িক সর্বোচ্চ ২০/২৫ টাকার বেশি কমাতে পারেননি। পক্ষান্তরে সিন্ডিকেট করতে যেয়ে তারাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।

পাটের মজুদ সম্পর্কে তিনি বলেন, ব্রিটিশ আমল থেকে এই মজুদ প্রথা চলে আসছে। কিন্তু এই মজুদের ফলেও দামে কোন প্রভাব ফেলে না। একজন মজুদদার সর্বোচ্চ ৫’শ মন থেকে এক হাজার মন পাট মজুদ করতে পারেন। এর বেশি কোন মজুদদারের সামর্থে কুলায় না।

তিনি বলেন, দাম বাড়লে মিল মালিকদের সুবিধা হয়। সরকারকে মিসগাইড করে ফায়দা লোটে। মিল মালিকরা সবসময় চায় কাঁচাপাট রপ্তানি বন্ধ করা হোক। কাঁচা পাট রপ্তানি বন্ধ হলে মিলে উৎপাদিত সুতা, চটসহ অন্যান্য উৎপাদিত অন্য সামগ্রী বেশি রপ্তানি করতে পারবে।

দেশের শীর্ষস্থানীয় কাঁচাপাট রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান খুলনার দৌলতপুরের সারতাজ ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকারী বদরুল আলম মার্কিন বলেন, এবছর পাটের দাম বৃদ্ধি পাওয়ার মূল কারণ হচ্ছে উৎপাদন কম। আগে যেখানে কৃষকরা এক বিঘা জমিতে ১৫ মণ পাট উৎপাদন করত এখন সেটা ৭/৮ মণে নেমে এসেছে।

তিনি বলেন, তৃণমূলের কৃষকেরা যেভাবে দাম চায় সেভাবে দাম নির্ধারণ হয়। এছাড়াও অনেক সময় মজুদদাররা অতিরিক্ত পাট মজুদ করার কারণে দামের উপর প্রভাব পড়ে। এ বছর পাটের দাম অতিরিক্ত বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে লাভ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। লসের সম্মুখীন হতে হবে। দাম বাড়ার কারণে মোকাম থেকে আমাদের প্রতিযোগিতা করে পাট কিনতে হচ্ছে। দাম বৃদ্ধি পেলেও বিদেশি বায়ারদের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী নির্ধারিত সময় পাট সরবরাহ করতে হবে।

তিনি বলেন, এ বছর উৎপাদন কম এবং অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির কারণে রপ্তানি অর্ধেকে নেমে এসেছে। ফলশ্রুতিতে রপ্তানি আয়ও কমে যাওয়া সম্ভাবনা রয়েছে।

 

খুলনা গেজেট/এনএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!