খুলনা, বাংলাদেশ | ৪ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ১৯ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  রাজধানীর উত্তরা থেকে সাবেক খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম গ্রেপ্তার
  ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ৬ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ১০৮৩
  ১৬ ডিসেম্বর ঘিরে কোনো ধরণের হামলার শঙ্কা নেই : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

উপাচার্যের শেষ সময়ে উত্তপ্ত বিএসএমএমইউ, সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ

গেজেট ডেস্ক

মেয়াদকালের শেষ সময়ে এসে বর্তমান উপাচার্য যাতে কোনো ধরনের নিয়োগ ও পদোন্নতি দিয়ে যেতে না পারেন, সেজন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সাধারণ শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা শক্ত অবস্থান নিয়েছেন। এ নিয়ে গতকাল শনিবারও আওয়ামী লীগ সমর্থিত স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) নেতৃত্বে এসব শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে উপাচার্য সমর্থিতদের হাতাহাতির হয়েছে। এ সময় উপাচার্যের ব্যক্তিগত সহকারীসহ কয়েকজনকে মারধর করে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের করে দেন বিক্ষোভকারীরা।

কয়েক দিন ধরেই বিএসএমএমইউ উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদের বিরুদ্ধে বিগত সময়ে নিয়োগ ও পদোন্নতি বাণিজ্যের অভিযোগ তুলে বিশ্ববিদ্যালয়ে তার কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ করে আসছেন চিকিৎসক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তাদের দাবি, বিদায়ের আগে যেন উপাচার্য কিছুতেই এসব নিয়োগ স্থায়ী করে ও পদোন্নতি দিয়ে যেতে না পারেন। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবারও এ দাবিতে বিক্ষোভ হয়। সেদিন উপাচার্য ঘোষণা দেন, তার সময়কালে আর কোনো নিয়োগ ও পদোন্নতি দেওয়া হবে না।

তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্বাচিপের একাধিক নেতা জানান, তারা শুনতে পান, গতকাল উপাচার্য সিন্ডিকেট সভা অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। আজ রবিবার সেই সিন্ডিকেট সভা করার কথা রয়েছে। সেই সিন্ডিকেট সভায় উপাচার্য ১১০-১১৫ জন চিকিৎসক, ১০০ জন নার্স-টেকনিশিয়ান এবং কিছু কর্মকর্তাসহ ২২০ জনের পদোন্নতি ও নিয়োগ চূড়ান্ত করবেন। সেজন্য তিনি সিন্ডিকেট সভা করবেন। গতকাল নিজ কার্যালয়ে সেই তালিকা তৈরি করছিলেন তিনি। এমন খবর পেয়ে স্বাচিপ নেতাদের নেতৃত্বে সাধারণ শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সকাল সাড়ে ৯টার দিকে মিল্টন হলের সামনে অবস্থান নেন। দুপুর ১২টা পর্যন্ত তারা সেখানে অবস্থান নিয়ে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন।

বিক্ষোভ চলাকালে একপর্যায়ে কিছু চিকিৎসক উপাচার্যের কক্ষের সামনে অবস্থান নিয়ে তার ব্যক্তিগত সহকারী ডা. রাসেল আহমেদকে চড়-থাপ্পড় দিয়ে উপাচার্যে কক্ষ ও পরে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের করে দেন। প্রায় একই সময়ে বিএসএমএমইউর সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল থেকেও উপাচার্য সমর্থিত একজন চিকিৎসককে মারধর করে বের করে দেওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

এ বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমাকে দোষী করার জন্য আমার নামে অপপ্রচার করছে। কোষাধ্যক্ষসহ যারা এই চেয়ারে বসতে চান, তাদের সমর্থিত শিক্ষক ও চিকিৎসকরা এই অপপ্রচার করছেন। আমাকে অভিযুক্ত করতে পারলে তাদের সুবিধা হয়। তাদের যারা সমর্থক তারাই দু-তিন দিন ধরে অস্থিরতা তৈরি করছেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘নতুন উপাচার্য নিয়োগের ঘোষণা আগে হওয়ায় এই অংশ পরবর্তী ভিসির সঙ্গে বিভিন্ন জায়গায় ফুল দিচ্ছে। যারা ফুল দিচ্ছেন তারা স্বাচিপের একটি অংশের লোক। স্বাচিপের সেই অংশ ও কোষাধ্যক্ষ এই দুই গ্রুপের লোকজন বিভিন্ন জায়গায় শিক্ষক ও চিকিৎসকদের নাজেহাল করছেন। এটা অত্যন্ত আপত্তিকর ও অনভিপ্রেত। বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসকরা এ ধরনের কাজ করলে চিকিৎসাসেবাও ব্যাহত হয়। আমি আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পুলিশ কমিশনারসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে জানিয়েছি। তারা আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে বলে জানিয়েছেন।’

বিক্ষোভকারী যে সিন্ডিকেট সভার কথা বলছে, তা অপপ্রচার বলে দাবি করেন উপাচার্য। তিনি বলেন, ‘এসব মিথ্যা কথা। তারা একেক দিন একেক কথা বলে অস্থিরতা তৈরি করছে। তারা প্রতিদিনই প্রচার করে যে সিন্ডিকেট সভা হবে। কিন্তু এক দিনও তো হয়নি। এ ধরনের সভা করার জন্য ৭-১৫ দিন আগে নোটিস করতে হয়। অ্যাকাডেমিক কাউন্সিল সভা করতে গিয়েছিলাম। তারা বাধা দিয়েছে। আমি গন্ডগোল পরিহার করার জন্য সেই সভাও করিনি। সিন্ডিকেটের কোনো প্ল্যান আমাদের নেই। এখন কোনো নিয়োগ ও পদোন্নতি দিচ্ছি না। ওরা একেক দিন একেকটা কথা বলে বিভিন্ন অংশকে খেপাচ্ছে। কোনো দিন তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারীদের খেপিয়ে তুলছে। আমি মনে করি এ ধরনের অসুস্থ পরিবেশ যদি চলতে থাকে, আমি তো চলে যাবে কয়েক দিন পরই, কিন্তু পরে যারা আসবেন, তাদের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয় চালানো খুব সহজ হবে না।’

বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন আহমেদের মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী ২৮ মার্চ। এরই মধ্যে গত ১১ মার্চ নতুন উপাচার্য হিসেবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক ও জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. দীন মো. নূরুল হককে নিয়োগ দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সরকার।

স্বাচিপের চিকিৎসকদের অভিযোগ, বর্তমান উপাচার্য অবৈধভাবে দুই হাজারের বেশি লোকবল অ্যাডহক ভিত্তিতে নিয়োগ দিয়েছেন। এসব নিয়োগে ব্যাপক দুর্নীতি হয়েছে। এসব নিয়োগের অধিকাংশ স্থায়ী করা হয়েছে। কিন্তু অনিয়মের মাধ্যমে নিয়োগ ও পদোন্নতি পাওয়া কিছু লোকজনের চাকরি এখনো স্থায়ী হয়নি। এসব লোকজনসহ আরও কিছু নিয়োগ ও পদোন্নতি দিতে শেষ মুহূর্তে উপাচার্য মরিয়া হয়ে উঠেছেন।

 

খুলনা গেজেট/এইচ




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!