সাতক্ষীরার কালীগঞ্জ উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ শংকর কুমার দে’র বিরুদ্ধে খামারীদের প্রশিক্ষণের নামে প্রাণি সম্পদ ডেইরী উন্নয়ন প্রকল্পের (এলডিডিপি) লক্ষ লক্ষ টাকা নয়ছয় করার অভিযোগ উঠেছে। প্রশিক্ষণে অংশগ্রহনকারী খামারীদের কম টাকায় নিম্নমানের জিনিস পত্র দিয়ে মোটা অংকের টাকা তছরুপ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন অনেকে। সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলায় বাড়ি হওয়ায় এবং পার্শ্ববর্তী কালিগঞ্জ উপজেলায় চাকুরি করার সুবাদে তিনি ধরাকে সরাজ্ঞান করে চলেছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কালিগঞ্জ উপজেলার খামারীদের প্রশিক্ষণের জন্য প্রাণি সম্পদ ডেইরী উন্নয়ন প্রকল্পের (এলডিডিপি) আওতায় পিজি ও নন পিজি ৪ টি ধাপে অনুষ্ঠিত প্রশিক্ষণে ডে-১১ এর মোট বাজেট ৪,১৭,৮০০ টাকা। মোট পিজি সংখ্যা-১৪ টি। মোট সদস্য সংখ্যা ৫৪৩ জন। প্রতিজন পিজি সদস্যর দুপুরের খাবার (বিরিয়ানি)+ নাস্তা +পানি+খাতা+কলম+ফোল্ডার বাবদ সরকারীভাবে খরচ ধরা হয়েছে ৪০০ টাকা। এই খাতে মোট সরকারী হিসেবে খরচ দেয়া হয়েছে (৫৪৩/৪০০)= ২,১৭,২০০টাকা। কিন্তু এই খাতে খরচ করা হয়েছে (বিরিয়ানি ১৪০ টাকা+পানি ৮টাকা + নাস্তা ১৭ টাকা+ (খাতা+কলম+ফেল্ডার) বাবদ ২৫ টাকাসহ মোট ১৯০ টাকা। এই খাতে তিনি খরচ করেছেন (৫৪৩/১৯০)=১,০৩,১৭০ টাকা।
সব কিছু বাদ দিয়ে অবশিষ্ট রয়েছে প্রায় ১,১৪,০০০ টাকা। একইভাবে পিজি ডে- ১২ তেও সব খরচ বাদ দিয়ে তার প্রায় ১,১৪,০০০ টাকা অবশিষ্ট্য রয়েছে। ডে ১১ ও ডে-১২ তে মোট ২ লক্ষ ২৮ হাজার টাকার বেশি তছরুপ করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। একইসাথে পিজি ডে-১৩ (বর্তমান চলমান রয়েছে) এখানেও সমপরিমান টাকা তছরুপের আশংকা করছেন অনেকেই।
এছাড়া নন পিজি অথ্যাৎ বিজিনেস প্লান বর্তমানে চলমান রয়েছে। এর সরকারী বাজেট রয়েছে মোট ১৮ লক্ষ টাকা। উপজেলার ১২ টি ইউনিয়ন এর মোট সদস্য সংখ্যা ৬০০ জন। প্রতিজন সদস্যের ব্যাগ,খাতা, কলম বাবদ সরকারীভাবে বাজেট ধরা হয়েছে ১হাজার টাকা হারে ৬০০ জনের মোট ৬ লক্ষ টাকা। কিন্তু প্রতিটি ব্যাগ, খাতা, কলম বাবদ তিনি ক্রয় করেছেন ব্যাগ ২০০ টাকা, খাতা ১০ টাকা, কলম ৫ টাকা। মোট ২১৫ টাকা হারে ৬০০ জনের ১ লক্ষ ২৯ হাজার টাকা। অবশিষ্ট্য রয়েছে ৪ লাখ ৭১ হাজার টাকার মতো। এছাড়া প্রতিদিন প্রতিজনের দুপুরের খাবার বাবদ বাজেট ৫০০ টাকা করে ২ দিনে ১ হাজার টাকা। ৬০০ জনের মোট বাজেট ধরা হয়েছে ৬ লক্ষ টাকা। সেখানে তিনি খাবার (বিরিয়ানি) ক্রয় করেছে জনপ্রতি ২ দিনে ৪০০ টাকা হারে ৬০০ জনের মোট খরচ করেেেছন ২ লক্ষ ৪০ হাজার টাকা। অবশিষ্ট রয়েছে ৩ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা। এই খাতে ব্যাগ ও খাবার ক্রয়ে সব কিছু বাদ দিয়ে প্রায় ৮ লাখ টাকা মতো তছরুপ করা হচ্ছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণকারি বেশ কয়েকজন খামারিরা জানিয়েছেন, প্রশিক্ষনের নাম বরাদ্দের সিংহভাগ টাকা উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা নয়ছয় করছেন। বিজনেস প্লানে দুই দিনের প্রক্ষিনে ব্যাগ ও খাবারে বাজেট ছিল ২ হাজার টাকা। অথচ দুই দিনে খাবার দেয়া হয়েছে ৪০০ টাকার ও ব্যাগ দেয়া হয়েছে ২০০ টাকার। বাকী ১৪০০ টাকা আত্তসাৎ করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন। এছাড়া প্রকৃত খামারীদের অনেকেরই এই প্রশিক্ষনে নেয়া হয়নি।
নির্ভযোগ্য একটি সূত্রে জানা গেছে, তার চাকরির দ্বিতীয় কর্মস্থল অভয়নগর নোয়াপাড়া যশোর সোনালী ব্যাংক হতে তিনি ১০ লক্ষ টাকা লোন নিয়েছিলেন। তিনি সেখানে থাকাকালীন ২ লাখ টাকা পেিশাধ করেছেন। বাকী ৮ লক্ষ টাকা সাতক্ষীরার কালিগেঞ্জে যোগদানের পর পরিশোধ করেছেন।
এ ব্যাপারে কালিগঞ্জ উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ শংকর কুমার দে তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, কোনভাবেই প্রশিক্ষণরত খামারিদের ঠকানো হয়নি। প্রশিক্ষণের জন্য বরাদ্দকৃত সমুদয় টাকা প্রশিক্ষণরত খামারিদের মাঝে বুঝে দেওয়া হয়েছে।
খুলনা গেজেট/ টিএ