বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলা পরিষদের ৬ষ্ঠ উপজেলা নির্বাচন একেবারে দোড় গোড়ায়। আর মাত্র ৩দিন পর ৯ জুন অনুষ্ঠিত হবে এ উপজেলার ভোট গ্রহণ। শেষ মুহুর্তে বৈরি আবহাওয়া উপেক্ষা করে প্রচার-প্রচারণা ও গণসংযোগে ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ও তাদের কর্মী-সমর্থকরা। প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত শিডিউল করে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে নিয়ে গণসংযোগ করছেন চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে অংশ নেয়া ৭ জন প্রার্থী।
এবারের নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া সবাই আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও মহিলা লীগের নেতা। প্রার্থীরা সবাই একই ঘরনার হওয়ায় নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে কি-না তা নিয়েও ভোটারদের মধ্যে একধরনের শঙ্কা কাজ করছে। ভোটাররা ভাবছেন যে প্রার্থী মাঠে শক্তি প্রয়োগ বা প্রশাসনিক প্রভাব বিস্তার করতে পারবেন তিনিই জয় সিনিয়ে নিবেন কিনা। অপর দিকে এবারের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিএনপিসহ অন্য কোন রাজনৈতিক দলের প্রার্থী না থাকায় তাদের সমর্থকদের মধ্যে ভোট নিয়ে কোন আগ্রহ নেই। আবার বিগত নির্বাচনগুলোতে ভোট দিলেও জনমতের প্রতিফলন না ঘটায় সাধারণ ভোটারদের মধ্যেও নির্বাচনের কোন প্রভাব নেই।
এ উপজেলার সর্ব মোট ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ৫৭ হাজার ৪১০। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার সংখ্যা ১ লাখ ৩০ হাজার ৩১২, মহিলা ভোটার সংখ্যা ১ লাখ ২৭ হাজার ৯৬ ও হিজড়া ২ জন। ভোট কেন্দ্রের সংখ্যা ১১১টি এবং মোট বুথের সংখ্যা ৬৪৯ টি।
গত ২৯ এপ্রিল ৩য় ধাপে এ উপজেলার নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা থাকলেও ঘূর্ণিঝড় রেমালের কারণে ১৯ উপজেলার নির্বাচন স্থগিত করে এবং পরবর্তীতে এসব উপজেলায় ৯ মে ভোট গ্রহণের ঘোষণা দেয় নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সে মতে ৯ মে অনুষ্ঠেয় মোরেলগঞ্জ উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন মোরেলগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ সহসভাপতি ও সুন্দরবন সাবসেক্টর স্টুডেন্ট কমান্ডার বীর মক্তিযোদ্ধা লিয়াকত আলী খান (আনারস), উপজেলা যুব লীগের আহ্বায়ক ও উপজেলা আওয়ামী লীগ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান মো. মোজাম্মেল হক (দোয়াত কলম)।
ভাইস চেয়ারম্যান পদে সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ও ছাত্রলীগ সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. এনামুল হক রিপন (তালা), সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মো. রাসেল হাওলাদার (চশমা) এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান ফাহিমা খানম (ফুটবল), সাবেক মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগ সভানেত্রী আজমীন নাহার (কলস), উপজেলা স্কাউট কমিশনার অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা হোসনেয়ারা হাসি (হাঁস)। এবারের নির্বাচনে বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মো. শাহ-ই আলম বাচ্চু প্রার্থী হননি।
উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে স্থানীয় ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এবারের নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী ২ জন এবং ভাইস চেয়ারম্যান পদেও ২জন প্রার্থী। অতএব এ ২টি পদে লড়াইটাতো দ্বিমূখী হবে, আর মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৩ প্রার্থীর মধ্যে যিনিই প্রতিদ্বন্দ্বীতায় উঠে আসবেন তাকে হাঁস প্রতীকের সঙ্গেই লড়াই করতে হবে। নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পারা নিয়ে রয়েছে সংশয়। তবে এসব ভোটাররা শান্তিপূর্ণ পরিবেশ পেলে তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেবেন বলে জানান। কিন্তু সকল প্রার্থী একই দলের হওয়ায় সুষ্ঠু পরিবেশে ভোটগ্রহণ হবে কি-না কিংবা তাদের মধ্যে কোনো ঝামেলা হবে কি-না তা নিয়ে শঙ্কা কাজ করছে। অবশ্য পরিবেশ শান্তিপূর্ণ না হলে অনেকেই ভোট কেন্দ্রে যাবেন না বলে জানিয়েছেন।
তাছাড়া মানুষ যদি দেখে তারা ভোট দিলেও কোনো লাভ হবে না, তাদের রায় ছিনিয়ে নেয়া হবে, তাহলে শুধু সাধারণ ভোটার কেন-আওয়ামী লীগ সমর্থক নিরীহ ভোটাররাও কেন্দ্রে যাবে না। কেউ কেউ বলেছেন, অতীতের বিভিন্ন নির্বাচনে ভোট কেন্দ্রে গিয়েও ভোট দিতে পারিনি এবার উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোট কেমন হবে সেটা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি।
স্থানীয় রাজনীতি সচেতন লোকজন মনে করছেন, এবারের নির্বাচনে প্রার্থীরা সবাই একটি রাজনৈতিক দলের সাথে সম্পৃক্ত হওয়ায় এই নির্বাচন নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে তেমন কোনো আগ্রহ নেই। তেমন মাতামাতিও নেই। তারা মনে করছেন, ভোটারদের কেন্দ্রে উপস্থিত করানোই হবে প্রার্থীদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। যে প্রার্থী বেশি সংখ্যক ভোটার কেন্দ্রে হাজির করাতে পারবেন, ভোটের লড়াইয়ে তিনিই এগিয়ে যাবেন।
খুলনা গেজেট/এনএম