খুলনা, বাংলাদেশ | ১০ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২৫ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  আইপিএল নিলামে অবিক্রিত মোস্তাফিজুর রহমান, ভিত্তিমূল্য ছিলো ২ কোটি রুপি
  ইসকন নেতা চিন্ময় দাসকে বিমান বন্দরে গ্রেপ্তার করেছে ডিবি
  কক্সবাজারের টেকনাফ সমুদ্র সৈকতে গোসলে নেমে নিখোঁজ দুই শিক্ষার্থীর মরদেহ উদ্ধার
  সাবেক আইজিপি মামুনের ফের ৩ দিনের রিমান্ড

উপকূলের শ্রমজীবি শিশু তাহাদুজ্জামান এখন মূল স্রোতধারার স্কুলে

নিজস্ব প্রতিবেদক, সাতক্ষীরা

সাতক্ষীরার উপকূলীয় এলাকার অতি দরিদ্র পরিবারের সন্তান শ্রমজীবী শিশু তাহাদুজ্জামান এখন মূল স্রোতধারার স্কুলে পড়ালেখা করছে। শ্যামনগর উপজেলার বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের পশ্চিম পোড়াকাটলা গ্রামে অতি দরিদ্র পরিবারে তাহানুজ্জামানের জন্ম। তার পিতা মোঃ আবুল হোসেন এবং মাতার নাম রহিমা বেগম।

অসুস্থ্য বাবার পায়ে সমস্যার কারণে নিয়মিত উপার্জন না হওয়ায় নানা অভাবের মাঝে বেড়ে উঠতে থাকে তাহানুজ্জামান। সে মাছের ঘেরে কাজের পাশাপাশি ব্রিজ স্কুলে লেখাপড়া করতে থাকে। কাজ করার পাশাপাশি সে পড়ালেখা চালিয়ে যেতে থাকে। এক পর্যায়ে ব্রিজ স্কুল থেকে পড়াশুনা শেষে আবার মূল স্রোতধারার স্কুলে পড়তে পেরে সে মহাখুশি।

তাহানুজ্জামানের বাবা মোঃ আবুল হোসেন জানান, ৬ বছর বয়সে তাহানুজ্জামানকে কলবাড়ি সরকারী প্রাইমারী স্কুলে ভর্তি করা হয়। কিন্তু বাড়ি থেকে স্কুল দূরে হওয়ার নিয়মিত স্কুলে যাওয়া হতনা তার। নিয়মিত স্কুলে না গিয়েও সে সফলতার সাথে তৃতীয় শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হয়। তিনি হঠাৎ মটরসাইকেলের সাথে দুর্ঘটনায় কবলিত হলে তাহানুজ্জামানের স্কুল সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়। সে মাছের ঘেরে ও নদীতে মাছ ধরার কাজে নিয়মিত হয়ে পড়ে। মাছের খাদ্য দেওয়া, ঘেরের পাশের গর্ত ভরাট করা ও নদী থেকে রেণু মাছ ধরে ঘেরে দেয়ায় তার কাজ। স্কুলে পড়ার কথা ভুলে যায় সে। সহপাটিদের সাথে স্কুলে যাওয়ার কথা ভুলে গিয়ে মাছের ঘেরে কাজ করাটা আপন করে নেয় সে। এভাবে চলতে থাকে দুই বছর।

তিনি বলেন, ২০২১ সালে বে-সরকারী সংস্থা উত্তরণ বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের পশ্চিম পোড়াকাটলা গ্রামে স্কুল থেকে ঝরে পড়া শিশুদের জরিপ করলে তাহানুজ্জামানের নাম তালিকাবদ্ধ করা হয়। তাকে বুড়িগোয়ালিনী ব্রিজ স্কুলে চতুর্থ শ্রেণিতে ভর্তি করনো হয়। সে মাছের ঘেরে কাজের পাশাপাশি ব্রিজ স্কুলে লেখাপড়া করতে থাকে। ব্রিজ স্কুলে লেখাপড়ায় ভালো করতে থাকে সে। কিন্তু স্কুলে লেখাপড়ার পাশাপাশি তাকে নিয়মিত মাছের ঘেরে যেতে হয় কাজের জন্য।

এক পর্যায়ে সিবিসিপিসি এর সদস্য নুর ইসলাম তাহানুজ্জামানকে পুনরায় সরকারী প্রাইমারী স্কুলে ভর্তি করানোর জন্য বললে আমরা খুব উৎসাহ প্রকাশ করি। তাকে আবার কলবাড়ী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তি করে দেওয়া হয়। সে নিয়মিত স্কুলে যেতে থাকে, তবে সংসারে অভাবের কারণে তাকে এখনও মাছের ঘেরে কাজের জন্য যেতে হয়। প্রাইমারী স্কুলে কোন বিষয় সমস্যার সম্মূখীন হলে, সে ব্রিজ স্কুলে চলে আসে এবং সমস্যার সমাধান করে নেয়।

কলবাড়ী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পংকজ কুমার বলেন, তাহানুজ্জামান এই স্কুলে পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তি হওয়ার পর থেকে নিয়মিত স্কুলে আসে। লেখাপড়ায়ও যতেষ্ট ভালো সে।

তিনি বলেন, বেসরকারী সংস্থা উত্তরণ স্কুল থেকে ঝরে পড়া শিশুদের নিয়ে যে স্কুল পরিচালনা করছে সেটি প্রশংসনীয়। যে সমস্ত শিশুরা স্কুলমূখী না, তাদের লেখাপড়া শেখানোর পাশাপাশি স্কুলমূখী করে প্রাইমারী স্কুলের সাথে যুক্ত করে দিচ্ছে তারা। এখনও অনেক শিশু আছে যারা নিয়মিত স্কুলে আসেনা, আবার অনেকে আছে যারা কাজের মৌসুমে বাবা-মায়ের সাথে স্থানান্তরিত হয়। এমন সমস্যার ক্ষেত্রে উত্তরণ বিভিন্ন মিটিং করে এবং কমিটি গঠন করে স্কুলবিমুখ শিশুদের মূল স্রোতধারার স্কুলের সাথে যুক্ত করার জন্য কাজ করছে।

তাহানুজ্জামান বলেন, প্রইমারী স্কুলে আবার ভর্তি হতে পেরে সে মহাখুশি। সে মাছের ঘেরে আর কাজ করতে চায় না, নিয়মিত স্কুলে যেতে চায়। লেখাপড়া বিষয়ক সমস্যাগুলো ব্রিজ স্কুল হতে সমাধান করে নিতে চায়, তাহলে তার আর প্রাইভেট পড়া লাগে না। এভাবে সেলেখাপড়া করে মানুষের মত মানুষ হতে চায়, সমাজে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে চায় সে।
উত্তরণের এডুকো প্রকল্পের প্রকল্প ব্যবস্থাপক নাজমা আক্তার বলেন, শ্যামনগর উপজেলায় মুন্সিগঞ্জ, বুড়িগোয়ালিনি, গাবুরা ও কাশিমাড়ী ইউনিয়নে এই প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে।

এই চার টি ইউনিয়নের চারটি লার্নিং সেন্টারে ৩৫০ জন শ্রমজীবী শিশুকে শিক্ষাদান কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এই শিশুরা নিয়মিত লার্নিং সেন্টারে এসে লেখাপড়া করছে এবং এরমধ্য থেকে ২৫ জন ইন্ডাষ্ট্রিয়াল সুইং মেশিন ও টেইলরিং এবং ২৫ জন ইলেকট্রনিকস ও মোবাইল সার্ভিসিংয়ের বিষয়ে তিন মাসের কারিগরি প্রশিক্ষণ গ্রহণ করছে।

শ্যামনগর উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ ইদ্রিস আলী জানান, মূলত ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রমে নিয়োজিত স্কুল বহির্ভূত শিশুদের শিক্ষার মূল স্রোতে আনার জন্যই এ ব্যবস্থা। এটি দুর্গম ও পিছিয়ে পড়া উপকূলীয় এলাকায় অত্যন্ত কার্যকর ভূমিকা রাখছে। বিশেষ করে ইলেকট্রনিকস ও মোবাইল সার্ভিসিং এবং সুইং মেশিন ও টেইলরিং প্রশিক্ষণ একটি সময়োপযোগী পদক্ষেপ বল মনে করেন তিনি।

বুড়িগোয়ালিনী ইউপি সদস্য আবিয়ার রহমান বলেন, এলাকায় ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত শিশুদের মাঝে শিক্ষার আলো ছড়াতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে উত্তরণের এডুকো প্রকল্প।




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!