“বিনামূল্যে নিরাপদ ও পর্যাপ্ত সুপেয় পানি প্রাপ্তি আমার অধিকার” এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে সাতক্ষীরার উপকূলীয় অঞ্চলের সকল মানুষের নিরাপদ সুপেয় পানির অধিকার নিশ্চিত করার দাবীতে মানববন্ধন করেছে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। উন্নয়ন সংগঠন লিডার্স, স্বদেশ, পার্টিসিপেটরি রিসার্চ অ্যান্ড অ্যাকশান নেটওয়ার্ক- পান ও এ্যাকশন এইড এর সহযোগিতায় শনিবার (১৩ আগষ্ট) সকালে সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সামনে জেলা নাগরিক কমিটি, জলবায়ু অধিপরামর্শ ফোরাম, শ্যামনগর, কালিগঞ্জ ও আশাশুনি উপজেলা যুব ফোরাম যৌথভাবে এই মানববন্ধন কর্মসুচির আয়োজন করে।
সাতক্ষীরা সরকারি মহিলা কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ আব্দুল হামিদের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন, জেলা নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব অ্যাড. আবুল কালাম আজাদ, মানবাধিকার কর্মী শ্যামল বিশ্বাস, উন্নয়ন কর্মী মরিয়ম মান্নান, আবুল কালাম, নারী নেত্রী শাহানাজ পারভীন, স্বর্ণ কিশোরী সুমাইয়া পারভীন, গোবিন্দ মুন্ডা প্রমুখ।
মানববন্ধন ও সমাবেশে বক্তারা বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে হুমকির মুখে পড়েছে উপকূল। উপকূলীয় নদীগুলোর লবণাক্ততা ক্রমশ বেড়ে চলেছে। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির ফলে উপকূলীয় পানির উৎসগুলো লবণাক্ত হয়ে পড়ায় পানের অযোগ্য হয়ে পড়ছে। ফলে উপকূলীয় জেলাগুলোতে সুপেয় পানির সংকট বেড়েই চলেছে।
পানির সংকট তুলে ধরে বক্তারা আরো বলেন, বেড়িবাঁধ দুর্বল হওয়ার কারনে লবণ পানি ঢুকে চাষ যোগ্য জমি, সুপেয় পানির আধারগুলো নষ্ট হচ্ছে। চারিদিকে পানি কিন্তু খাবার পানি নেই। চারিদিকে শুধু লবণ পানি। খাবার পানি সংগ্রহ করার জন্য একজন নারীকে ৪/৫ কিলোমিটার দূরে যেতে হয়। পানি সংগ্রহ করতে নারীকে নিরাপত্ত্বাহীনতায় ভুগতে হয়। এমনকি তারা বিভিন্ন ধরণের নিপীড়ণের শীকার হচ্ছে। যা অমানবিক। পানি উপকূলের মানুষের ন্যায্য অধিকার। কিন্তু উপকূলের দরিদ্র মানুষকে এখন পানি কিনে খেতে হয়।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, সুপেয় পানির অভাবে মানুষ পুকুরের দুষিত পানি পান করে নানাবিধ পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। বিশেষ করে নারীরা স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে ভুগছে। নদী ভাঙ্গানসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দূর্যোগের পর সুপেয় পানির সংকটের কারনে নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে উপকুলীয় অঞ্চলের নারী ও শিশুরা। লোনা পানির কারনে উপকূলীয় নারীরা হারাচ্ছে তাদের মাতৃত্ব। পিরিয়ড কালীন সময়ে এ অঞ্চলের নারীদের লোনা পানির কারনে ঝুঁকিতে থাকতে হয়।
উপকূলে এই সংকট সমাধানে সরকারী ও বেসরকারী উদ্যোগ থাকলেও তা যথেষ্ঠ নয়। এর আগে সরকারের কাছে সুপেয় পানি সংকটের জন্য দাবী করা হলেও তার কোন উদ্যোগ নেই। এজন্য অনতিবিলম্বে উপকূলীয় এলাকায় সুপেয় পানির সংকট সমাধান করতে হবে।
বক্তারা আরও বলেন, উপকূলে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মান করতে হবে, উপকূলে জলাধার সংরক্ষণ ও নারীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ ও উপকূলে উন্নয়ন বোর্ড গঠন করে উপকূলীয় এলাকাকে দুর্যোগ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা ঘোষণা করতে হবে।
এ সময় অবিলম্বে উপকূলীয় অঞ্চলে টেকসই বেঁড়িবাধ নির্মাণ করা সহ সকল মানুষের নিরাপদ সুপেয় পানির অধিকার নিশ্চিত করার জোর দাবী জানান।
সমগ্র অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন জলবায়ু অধিপরামর্শ ফোরামের সদস্য সচিব ও স্বদেশের নির্বাহী পরিচালক মাধব চন্দ্র দত্ত।
খুলনা গেজেট / আ হ আ