খুলনা, বাংলাদেশ | ৭ পৌষ, ১৪৩১ | ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ইন্টারপোলে রেড নোটিশ জারি
  নরসিংদীতে ব্যাডমিন্টন খেলার সময় যুবককে গুলি করে হত্যা
  ঘন কুয়াশায় ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে ১০ যানবাহনের সংঘর্ষ, নিহত ১, আহত ১৫
  ব্রাজিলে দুর্ঘটনায় বাসে আগুন, পুড়ে নিহত ৩৮
গ্রন্থ পর্যালোচনা

‘উন্নয়নের সরণিতে পদ্মা সেতু’ গবেষক ও সাধারণ পাঠকদের জন্য অনন্য এক তথ্যভান্ডার

মহসিন মিঞা

স্বপ্নের পদ্মাসেতু এখন পরম বাস্তবতা। ২৫ জুন ২০২২ খ্রি. বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জনসাধারণের পারাপারের জন্য আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেছেন বহুল প্রতীক্ষিত এ সেতুর সড়ক অংশ। অচিরেই চালু হয়ে যাবে রেল অংশ। দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার সাথে রাজধানী ঢাকার সরাসরি যোগাযোগ নিশ্চিত হলো এ সেতুর মাধ্যমে। পাশাপাশি দেশের বাকি অংশও যুক্ত হলো অর্থনৈতিকভাবে বিপুল সম্ভাবনাময় এ অঞ্চলের সাথে। পদ্মাসেতুর আগে এই জেলাগুলোর মানুষদের নানামুখী দুর্ভোগের কথা বিভিন্ন সময়ে যেমন সাংবাদিক-লেখক-গবেষক-রাজনীতিবিদ-সুশীল সমাজের কাছে উপজীব্য ছিল, তেমনি এ সেতুর সুফল নিয়েও হয়েছে বিস্তর আলোচনা-গবেষণা। বিচ্ছিন্ন সেই ভাবনাগুলোকে একইসূত্রে গেঁথেছে ‘উন্নয়নের সরণিতে পদ্মা সেতু’ শীর্ষক সম্পাদিত গ্রন্থটি।

সম্পাদনার দুরূহু কিন্তু অতি প্রয়োজনীয় এ কাজটি করেছেন খুলনার সুপরিচিত গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব গাজী আলাউদ্দিন আহমদ। জুলাই ২০২২ এ প্রকাশিত বইটির প্রকাশক বিশিষ্ট মানবাধিকার কর্মী অধ্যাপক মাওলানা মোহাম্মাদ আবেদ আলী। বইটির প্রচ্ছদ করেছেন সুমন আহমেদ। প্রচ্ছদে থ্রি-ডি ভার্সনে পদ্মা সেতুর নান্দনিক ছবি বইটির নামের সাথে যুৎসই লেগেছে। বইটি মুদ্রিত হয়েছে খুলনার বেনীবাবু রোডস্থ কাকন প্রিন্টিং এন্ড পাবলিকেসন্স থেকে। নীলাভ মলাটে জড়ানো বইটির আকার ও বাধাই পাঠকের জন্য যথেষ্ট সুবিধাজনক। সাদা অফসেট কাগজে ছাপানো বইটির মূল পৃষ্ঠা সংখ্যা ১২৫, মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ২০০ টাকা।

সম্পাদকীয়তে বইটি প্রকাশের পুরো প্রেক্ষাপট বিবৃত হয়েছে। মূল্যবান এ বইটির মুখবন্ধ লিখেছেন খুলনার সুশীল সমাজের অন্যতম প্রিয়মুখ খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ট্রেজারার মোহাম্মাদ মাজহারুল হান্নান। পুরো বইটি তিনটি প্রধান অংশে বিন্যস্ত। প্রথম অংশে রয়েছে পদ্মা সেতুকে নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত মৌলিক প্রতিবেদন। এসব সংবাদ প্রতিবেদনে উঠে এসেছে পদ্মা সেতু নিয়ে এ অঞ্চলের মানুষের আবেগ-অনুভুতির গল্পকথা, পদ্মাসেতুর কারিগরি দিক, সম্ভাবনা ও সীমাবদ্ধতা নিয়ে ১৫টি নির্ভরযোগ্য তথ্যভিত্তিক প্রতিবেদন। এসব প্রতিবেদন থেকে পাঠকমহল তাদের আগ্রহের অনেক অজানা তথ্যে সমৃদ্ধ হতে পারবে। উল্লেখযোগ্য প্রতিবেদনগুলোর মধ্যে- সম্ভাবনার নতুন অধ্যায়ে বাংলাদেশ; খুলে গেল দখিনের দুয়ার; বাঙালির অহংকারের সেতু পদ্মা, শুরু থেকে শেষ; পদ্মা সেতু বাঁকা যেসব কারণে; যেভাবে বাগে আনা হয়েছে খরস্রোতা পদ্মাকে শিরোনামগুলো পাঠককে নিশ্চিতভাবেই আকর্ষিত করবে।

বইটির দ্বিতীয় অংশে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে পদ্মা সেতুর প্রভাব শিরোনামে প্রথিতযশা লেখক-গবেষকদের মানসম্মত ১৮টি প্রবন্ধ সংকলিত হয়েছে। প্রবন্ধকারগণ তাদের যুক্তিপূর্ণ ও তথ্যসমৃদ্ধ লেখনিতে পদ্মাসেতু নির্মাণের প্রেক্ষাপট, বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ, অভ্যন্তরীণ ষড়যন্ত্র, নেতৃত্বের দৃঢ়চেতা মানসিকতা যেমন ফুটিয়ে তুলেছেন তেমনি পদ্মা সেতু এ অঞ্চলের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে যে অপার সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে তার স্বরুপ বিশ্লেষণ করেছেন নিপুনভাবে। যাদের প্রবন্ধ বইটিকে সমৃদ্ধ করেছে তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মাহমুদ হোসেন, খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সা‌বেক উপাচার্য প্রফেসর ড. মোঃ শহীদুর রহমান খান, নর্থ ওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটি, খুলনার উপাচার্য প্রফেসর ড. মোঃ বজলার রহমান , খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মোঃ ওয়াসিউল ইসলাম, ড. তুহিন রায়, বিশিষ্ট সমাজ গবেষক ড. খ. ম. রেজাউল করিম ও খুলনা গেজেটের নির্বাহী সম্পাদক কাজী মোতাহার রহমান অন্যতম। রুবাইয়াতে পদ্মা সেতু শীর্ষক গাজী আব্দুল্লাহেল বাকী এর দীর্ঘ কবিতা বইটিতে ভিন্ন একটি আমেজ এনেছে।

গ্রন্থের তৃতীয় অংশে বিশিষ্টজনদের ভাবনায় পদ্মা সেতু শিরোনামে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি, প্রতিষ্ঠিত রাজনীতিবিদ, শিক্ষাবিদ, প্রকৌশলী, আইনজীবী, ব্যবসায়ীদের সাক্ষাৎকার সন্নিবেশিত হয়েছে। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন – প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান, খুলনা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক, খুলনা ৫ আসনের সংসদ সদস্য নারায়ন চন্দ্র চন্দ, খুলনা ৪ আসনের সংসদ সদস্য আব্দুস সালাম মুর্শেদী, খুলনা ৬ আসনের সংসদ সদস্য মোঃ আক্তারুজ্জামান বাবু, শিক্ষাবিদ প্রফেসর ড. গোলাম রহমান, কু‌য়ে‌টের সা‌বেক উপাচার্য প্রফেসর ড. কাজী সাজ্জাদ হোসেন, মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এ্যাডমিরাল মোহাম্মাদ মূসা, খুলনা বিশ্ব‌বিদ‌্যাল‌য়ের ডীন প্রফেসর ড. মো: না‌সিফ আহসান, খুলনা চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি’র সভাপতি কাজী আমিনুল হক, খুলনা জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি এ্যাডভোকেট মোঃ সাইফুল ইসলাম, খুলনা সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আনিসুজ্জামান মাসুদ। সাক্ষাৎকারদাতাগণ পদ্মাসেতু পূর্ব সময়ের দুর্ভোগ-সংকটের স্মৃতিরোমন্থন যেমন করেছেন তেমনি পদ্মাসেতুর বহুমাত্রিক সুফল বিষয়ে স্ব স্ব পেশাগত ও সামাজিক অবস্থান থেকে বিশ্লেষণ করেছেন। তাদের এসব একান্ত আলাপন পাঠকের চিন্তাজগতকেও উদ্দিপ্ত করবে বলেই বিশ্বাস।

পরিশিষ্ট অংশে কয়েক পাতা জুড়ে স্থান পেয়েছে পদ্মাসেতু উদ্বোধন সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ছবি। এছাড়া বইয়ের মূল অংশের বিভিন্ন পাতায়ও পদ্মা সেতু বিষয়ক নানান ছবি ও দালিলিক নথি স্থান পেয়েছে। অলংকরণ, বর্ণবিন্যাস, বিষয়বস্তুর ধারাবাহিকতা সব মিলিয়ে বইটিকে যথেষ্ট মানসম্মত মনে হয়েছে। বইটির সম্পাদক ও প্রকাশক এজন্য ধন্যবাদ পাওয়ার দাবি রাখেন। সার্বিকভাবে উন্নয়নের সরণিতে পদ্মা সেতু বইটি এ বিষয়ক পঠন-অনুসন্ধানে নতুন পাঠক – গবেষকদের কাছে সমাদৃত হবে বলেই মনে হয়।

লেখক : সহকারী অধ্যাপক, সমাজবিজ্ঞান, সরকারি জয়বাংলা কলেজ, খুলনা।

খুলনা গেজেট/ টি আই




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!