খুলনা, বাংলাদেশ | ৩ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ১৮ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ৬ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ১০৮৩
  ১৬ ডিসেম্বর ঘিরে কোনো ধরণের হামলার শঙ্কা নেই : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

উন্নয়ন কখনো গণতন্ত্রের বিকল্প ব্যবস্থা নয় : মাহবুব তালুকদার

গেজেট ডেস্ক

বিদায়ী নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার বলেছেন, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছে ওই নির্বাচনে গণতন্ত্র নেই, গণতন্ত্রের লাশ পড়ে আছে। এই লাশ সৎকারের দায়িত্ব কে নেবে?

সোমবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন ভবনে প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এ কথা বলেন।

‘সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে নির্বাচন সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয়ে আমার কথা এটাই আমার সর্বশেষ প্রেস ব্রিফিং’ শিরোনামে লিখিত বক্তব্যে বিদায়ী কমিশনার বলেন, একজন সাংবাদিক মানবাধিকার সম্পর্কে অভিমত জানতে চেয়েছেন। বাংলাদেশের মানবাধিকার সম্পর্কে কথা বলা অমূলক। মানবাধিকার নেই, মানবিক মর্যাদা নেই। গণতন্ত্র না থাকলে এসব থাকে না। বিশ্বে সম্মানজনক রাষ্ট্র হিসেবে আসীন হতে হলে গণতন্ত্রের শর্তসমূহ অবশ্যই পূরণ করতে হবে।

তিনি বলেন, ভোটাধিকার ও মানবাধিকার একই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। গণতন্ত্রের আকাঙ্ক্ষা থেকে এর উৎপত্তি। বর্তমান অবস্থায় উন্নয়নকে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। আইন প্রণেতারা আইন প্রণয়নের চেয়ে উন্নয়নেই বেশি আগ্রহী। কিন্তু উন্নয়ন কখনো গণতন্ত্রের বিকল্প ব্যবস্থা নয়। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছে ওই নির্বাচনে গণতন্ত্র নেই, গণতন্ত্রের লাশ পড়ে আছে। এই লাশ সৎকারের দায়িত্ব কে নেবে? কথাটি রূপকার্থে বলা হলেও এটাই সত্য।

মাহবুব তালুকদার বলেন, নির্বাচনের নামে সারাদেশে এমন অরাজকতা কখনো কাঙ্ক্ষিত ছিল না। তৃণমূল পর্যায়ে এই নির্বাচন দ্বন্দ্ব-সংঘাতের চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত করে দিয়েছে। অন্যদিকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় পদে আসীন হওয়াকে নির্বাচন বলা যায় কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন আছে। বিদায়কালে আত্মবিশ্লেষণের তাগিদে বলি, নির্বাচন কমিশনের বড় দুর্বলতা নির্বাচন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের অনিয়ম, পক্ষপাতিত্ব, জালিয়াতি সম্পর্কে ভুক্তভোগীরা যেসব অভিযোগ করেন, সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার দৃষ্টান্ত বিরল।

তিনি বলেন, লিখিত যেসব অভিযোগ পাঠানো হয়, তারও যথাযথ নিষ্পত্তি হয় না। অধিকাংশ অভিযোগই আমলে না নিয়ে নথিভুক্ত করা হয় বা অনেক ক্ষেত্রে নথিতেও তার ঠাঁই হয় না। আমাদের কার্যকালের শেষ পর্যায়ে এসে গত কয়েক মাসে অবশ্য এর কিছু ব্যতিক্রম লক্ষ্য করা যাচ্ছে। নির্বাচন নিয়ে গত পাঁচ বছরে যা কিছু বলেছি, তাতে কোনো ফলোদয় হয়েছে বলে মনে হয় না। আগেও বলেছি, নির্বাচন কমিশন গঠন আইন বাধ্যতামূলক। তবে আইনটি সব রাজনৈতিক দলের কাছে গ্রহণযোগ্য না হলে, সংকটের সমাধান হবে না।

তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিরোধী দলগুলোর অংশগ্রহণের কোনো পূর্বাভাস দেখা যাচ্ছে না। এতে সংকট আরও ঘনীভূত হবে। আশাবাদী মানুষ হিসেবে আমি সব সংকটের সমাধান দেখতে চাই। নির্বাচনে জনমানসের প্রতিফলন একান্ত অপরিহার্য। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে সংসদ নির্বাচন সর্বত্র জনমানসের প্রতিফলন একান্ত অনুপস্থিত। এতে বিশেষভাবে টাকার খেলাই প্রতিভাত হয়। রাজনীতি ধীরে ধীরে ব্যবসায়ীদের করতলগত হচ্ছে। আমার প্রশ্ন, আইন প্রণেতারা ভবিষ্যতে আইন ব্যবসায়ী হয়ে যাবেন না তো? অবাধ সুষ্ঠু গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের বাধাগুলো দূর করতে নির্বাচন প্রক্রিয়ার সংস্কার প্রয়োজন। এজন্য সংবিধান ও বিধিবিধানের পরিবর্তন প্রয়োজন হতে পারে। বসন্তের প্রথম দিনে ও ভালোবাসা দিবসে আপনাদের সবাইকে আন্তরিক শুভেচ্ছা।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে কিনি বলেন, তিনি বিএনপির ভাষা বোঝেন না। তাদের ভাষায় কথা বলেন না। তবে নীরব জনগোষ্ঠীর মুখপাত্র হয়ে সবসময় কথা বলেন।

সাংবাদিকদের তিনি মিস করবেন কি না এমন প্রশ্নে আবেগাপ্লুত হয়ে তিনি বলেন, আমি অবশ্যই আপনাদের মিস করব। আপনারাও কোনোদিন আমাকে ভুলবেন না।

তিনি বলেন, আমি পাঁচজনের একজন। গণতন্ত্রের কথা বলতে গিয়ে গণতন্ত্রের সংখ্যালঘু হিসেবে আমি হেরে গেলাম এমন ঘটনা রয়েছে। একাদশ সংসদ নির্বাচন কমিশনের কথা বলতে গিয়ে আমাকে বক্তব্য রাখতে দেওয়া হয়নি। কিন্তু মতামত প্রকাশের অধিকার কিন্তু সংবিধানে আমাকে দিয়েছে।

 

খুলনা গেজেট/এনএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!