যশোরের নৃশংসতম উদীচী হত্যাযজ্ঞের কাল সোমবার দুই যুগপূর্তি। দেশব্যাপী আলোচিত এ হত্যাকান্ডের ২৪ বছর পার হলেও বিচারের মুখোমুখি করা যায়নি মূল ঘাতকদের। এমনকি বাস্তবে কারা এ জঘন্য হত্যা ঘটিয়েছিল, তা আজও উদ্ঘাটন হয়নি। ঘাতকদের হত্যার বিচার চাইতে চাইতে হতাশ হয়ে পড়েছেন নিহতের স্বজন, আহত ও সাংস্কৃতিক কর্মীরা।
ঐতিহাসিক যশোর টাউন হল মাঠে ১৯৯৯ সালের ৫ ও ৬ মার্চ অনুষ্ঠিত হয় উদীচী শিল্পী গোষ্ঠীর দ্বাদশ জাতীয় সম্মেলন। প্রথমদিনের অনুষ্ঠান সফলভাবে সমাপ্তি হলেও পরদিন ৬ মার্চ ছিলো সমাপনী অনুষ্ঠান। এ অনুষ্ঠানে বাউল গানের আসরে রাত ১ টা ১০ মিনিটে দুই দফা বোমা বিস্ফোরণ ঘটে। এতে ১০ জন সাংস্কৃতিক কর্মী ও দর্শক প্রাণ হারায়। আহত হন আড়াই শতাধিক নিরীহ মানুষ।
নিহত হন নূর ইসলাম, নাজমুল হুদা তপন, সন্ধ্যা রাণী ঘোষ, ইলিয়াস মুন্সী, শাহ আলম বাবুল, বুলু, রতন রায়, বাবুল সূত্রধর, শাহ আলম ও রামকৃষ্ণ। দেশব্যাপী আলোচিত এ ঘটনার দিনে প্রতিবছর শহীদদের স্মরণে আলোচনা, স্মরণসভা, শহীদ স্মারকে আলোক প্রজ্জ্বালন ও বিচারের দাবি করে আসছেন স্বজন বন্ধু ও সাংস্কৃতিক কর্মীরা।
উদীচী ট্র্যাজেডিতে নিহত নূর ইসলাম, নাজমুল হুদা তপন, সন্ধ্যা রাণী ঘোষ, ইলিয়াস মুন্সী, শাহ আলম বাবুল, বাবুল সূত্রধর, শাহ আলম, বুলু, রতন রায় এবং রামকৃষ্ণের পরিবারের সদস্যদের দীর্ঘশ্বাস বাড়ছে। এতবড় একটি বর্বর ঘটনার বিচার এবং ঘাতকদের শাস্তি না হওয়ায় এক বুক যন্ত্রণা নিয়ে দিন কাটাচ্ছেন বোমা হামলায় আহতরা।
উদীচী নেতৃবৃন্দ ও আদালত সূত্র জানায়, সিআইডির ত্রুটিপূর্ণ চার্জশিটের কারণে ২০০৬ সালের ৩০ মে আদালত থেকে খালাস পেয়ে যায় এ মামলার সব আসামি। পরে সরকার ওই রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করলে মামলাটি পুনরুজ্জীবিত হয়। কিন্তু এরপর মামলাটির আপিল শুনানি আর হয়নি। আটকে আছে আইনের বেড়াজালে। বিচারের এই দীর্ঘ বিড়ম্বনায় ক্ষুব্ধ যশোরের মানুষ এখন দ্রুত এ মামলার কার্যক্রম চালু করার দাবি জানান।
উদীচী ট্র্যাজেডিতে নিহত তপনের স্বজনেরা বলেন, বর্তমান সরকার আমলে অনেক আলোচিত ঘটনার বিচার হচ্ছে। কিন্তু দীর্ঘদিনেও উদীচী ট্র্যাজেডির বিচার হচ্ছে না। প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাবি, দ্রুত উদীচী হত্যা মামলার বিচার সম্পন্ন করে দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তি দেয়া হোক।
উদীচী ট্র্যাজেডিতে দুই পা হারানো নাহিদ বলেন, দুঃসহ যন্ত্রণা নিয়ে বেঁচে আছি। প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন হামলাকারীদের বিচার দেখতে চাই।
বোমা হামলায় এক পা হারানো সুকান্ত দাস বলেন, একের পর এক বছর চলে যাচ্ছে। কিন্তু উদীচী হামলার ঘটনায় জড়িতদের বিচারের মুখোমুখি করা সম্ভব হয়নি। প্রকৃত অপরাধীদের শাস্তি চাই। সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। এজন্য সরকারের আন্তরিকতা প্রয়োজন।
তিনি বলেন, ১৯৯৯ সালে উদীচী ট্র্যাজেডির সময় আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় ছিল। বতর্মানেও আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় রয়েছে। এ সরকারের আমলে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায় কার্যকর হয়েছে। তাহলে উদীচী ট্র্যাডেজির বিচার কেন বিলম্বিত হচ্ছে। অবিলম্বে উদীচী হত্যাকান্ডের বিচার দাবি করছি।
খুলনা গেজেট/ এসজেড