যশোরের ভয়াবহ উদীচী ট্র্যাজেডির শনিবার ২২তম বছর। ১৯৯৯ সালের ৬ মার্চ রাত ১২টা ১০ মিনিটে যশোর টাউনহল মাঠে উদীচীর দ্বাদশ জাতীয় সম্মেলনের শেষ দিনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে ঘটে নারকীয় ঘটনা। পর পর দু’টি শক্তিশালী বোমার বিস্ফোরণে নিহত হন ১০ জন। আহত হন আড়াই শতাধিক মানুষ।
এতদিনেও নৃশংস এ হত্যাকাণ্ডের সাথে সম্পৃক্ত ঘাতকদের বিচারের মুখোমুখি করা যায়নি। যদিও ২০০৭ সালের ১৯ নভেম্বর হরকাতুল জিহাদের নেতা মুফতি হান্নান আদালতে উদীচী বোমা হামলায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে। এত বছর পর এসেও সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক, পেশাজীবীসহ সর্বস্তরের মানুষের চাওয়া দ্রুত এর যথাযথ বিচারের মাধ্যমে দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত হবে।
বিচার চাইতে চাইতে হতাশ হয়ে পড়েছেন বোমা হামলায় নিহতের স্বজনসহ আহতরা। গণমাধ্যমের কাছে প্রতি বছর সুষ্ঠু বিচারের আকুতি আর সেই দুঃসহ দিনের স্মৃতি ব্যক্ত করতে করতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন তারা। আহতদের এখন একটাই প্রশ্ন জীবন দশায় তারা বিচার দেখে যেতে পারবেন কিনা ?
মামলার সর্বশেষ পরিস্থিতি সম্পর্কে উদীচী যশোর থেকে জানা যায়, সে সময় পৃথক দু’টি মামলা হয়। তদন্ত শেষে ওই বছরের ১৪ ডিসেম্বর বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ও সাবেক মন্ত্রী তরিকুল ইসলামসহ ২৪ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করে সিআইডি। পরবর্তীতে চার্জ গঠনের সময় উচ্চ আদালতে আবেদনের প্রেক্ষিতে তরিকুল ইসলামকে এ মামলা থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়। চাঞ্চল্যকর এ মামলা আদালতে গড়ানোর সাত বছর পর ২০০৬ সালের ৩০ মে মামলার রায় প্রদান করেন আদালত। রায়ে সব আসামিকে বেকসুর খালাস দেয়া হয়। পরবর্তীতে এ হামলার সাথে জঙ্গি নেতা মুফতি হান্নানের সম্পৃক্ততার প্রমাণ পেয়ে পুনঃতদন্তের উদ্যোগ নেয় সরকার। এসময় উদীচী ও সরকার রায়ের বিরুদ্ধে দুটি আপিল করে।
২০১১ সালের ৪ মে সরকারের দায়ের করা আপিলটি বিচারপতি সিদ্দিুকুর রহমান ও কৃষ্ণা দেবনাথের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ গ্রহণ করে খালাসপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের পুনরায় আত্মসমর্পণের জন্যে সমন জারির নির্দেশ দেন। ২০১১ সালের ২০ জুন এ সংক্রান্ত আদেশ যশোর বিচারিক হাকিম আদালতে পৌঁছলে ২১ জুন মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালত খালাসপ্রাপ্ত ২৩ আসামির বিরুদ্ধে সমন জারি করেন। এরমধ্যে তিন আসামি মহিউদ্দিন আলমগীর, আহসান কবীর হাসান এবং মিজানুর রহমান মিজানের মৃত্যু হওয়ায় আসামির সংখ্যা দাঁড়ায় ২০ জন। তাদের মধ্যে ১৭ জন বিভিন্ন সময়ে আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন পায়। আসামিদের মধ্যে শফিকুল ইসলাম মিন্টা, শরিফুল ইসলাম লিটু ও সোহরাব নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আত্মসমর্পণ না করায় তাদের বিরুদ্ধে ২০১১ সালের ২৪ জুলাই গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত। ২০১২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে এ মামলার আসামি সাইফুল ইসলাম খুন হন। একই মাসে শফিকুল ইসলাম মিন্টা আটক হয় ও পরে জামিন লাভ করে। বর্তমানে জীবিত সকল আসামি জামিনে আছেন।
এ বছর দিবসটি স্মরণে যশোর উদীচী বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। কর্মসূচির অংশ হিসেবে শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা থেকে ভার্চ্যুয়াল মাধ্যমে আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। ৬ মার্চ ১৯৯৯ সালের বোমা হামলা : বর্তমান প্রেক্ষিত’ শীর্ষক এ আলোচনায় প্রকৃত অপরাধীদের চিহ্নিত ও সুবিচারের জন্যে ঘটনার পুনঃতদন্তের দাবি উত্থাপন করা হয়।
এছাড়া, শনিবার বিকেল সাড়ে চারটায় টাউনহল মাঠের ঘটনাস্থলে প্রতিবাদী গান, আলোচনা সভা শেষে শহীদ বেদীতে আলোক প্রজ্বালন ও পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হবে।