রংপুরের হারাগাছে পুলিশের বিরুদ্ধে এক ব্যক্তিকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় বিক্ষুদ্ধ জনতা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন। পরে তারা হারাগাছ থানা ঘেরাও করলে পুলিশের সঙ্গে দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে।
উত্তেজিত জনতা ইটপাকটেল ছুড়ে মারার পাশাপাশি পুলিশের গাড়িসহ বেশ কয়েকটি যানবাহন ভাঙচুর করেছে। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিতে টিয়ারশেল ছুড়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। প্রায় তিন ঘণ্টা পর বিক্ষোভকারীরা পিছু হটলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয় পুলিশ।
সোমবার (১ নভেম্বর) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে হারাগাছের নতুন বাজার বছিবানিয়ার তেপতি এলাকায় তাজুল ইসলাম নামে এক মাদকাসক্ত ব্যক্তিকে আটক পরবর্তী তার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে এ ঘটনা ঘটে। নিহত ব্যক্তির নাম তাজুল ইসলাম (৫৫)। তিনি উপজেলার হারাগাছ নয়াটারী দালালহাট গ্রামের মৃত শওকত আলীর ছেলে।
বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে বলে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের (আরপিএমপি) উপ-কমিশনার আবু মারুফ হোসেন।
স্থানীয়রা জানায়, সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে নতুন বাজার বছিবানিয়ার তেপতি থেকে তাজুল ইসলামকে মাদকসহ আটক করে পুলিশ। এ সময় তিনি পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি করে পালানোর চেষ্টা করেন। পুলিশ তাকে মারধর করলে ঘটনাস্থলেই মারা যান তাজুল ইসলাম। পরে ঘটনাটি জানাজানি হলে এর প্রতিবাদে প্রথমে রংপুর-হারাগাছ সড়ক অবরোধ করেন উত্তেজিত জনতা।
পরে তারা হারাগাছ থানা ঘেরাও করে বিক্ষোভ করেন। পুলিশ টিয়ারশেল ছুড়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করলে বিক্ষোভকারীরা রংপুর-হারাগাছ সড়কের হক বাজার এলাকায় অবস্থা নেন। এ সময় ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও ইটপাকটেল ছুড়ে আসে দুদিক থেকে। বিক্ষুদ্ধরা পুলিশের গাড়িসহ কয়েকটি যানবাহন ভাঙচুর করে। শত শত মানুষ থানায় হামলার চেষ্টা করেন। পুলিশ টিয়ারশেল ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করছে। এ সময় পুলিশ, সাংবাদিকসহ অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন।
মেট্রোপলিটন হারাগাছ থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শওকত আলী সরকার জানান, সন্ধ্যায় নতুন বাজার বছিবানিয়ার তেপতি থেকে গাঁজা সেবনরত অবস্থায় আটক করে তাজুল ইসলামকে হাতকড়া পড়ানো হয়। এতে ভয়ে সে মলত্যাগ করে ফেলে। হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে পুলিশ হাতকড়া খুলে দেয়। এর পর পুলিশ তাজুলকে স্থানীয়দের জিম্মায় দিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। এর কিছুক্ষণ পর খবর আসে যে তাজুল ইসলাম মারা গেছেন।
তিনি আরও জানান, এলাকাবাসী ভুল তথ্য পেয়ে থানা ঘেরাও করে ভাঙচুর করেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। উত্তেজিত জনতার ছোড়া ইট-পাটকেলের আঘাতে কয়েকজন পুলিশসদস্য আহত হয়েছে। বিক্ষোভকারীরা পুলিশের গাড়িও ভাঙচুর করেছে।
অন্যদিকে আরপিএমপির উপপুলিশ কমিশনার (অপরাধ) আবু মারুফ হোসেন জানান, পুলিশের সঙ্গে কয়েক দফা বিক্ষোভকারীদের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া হয়। রাত ১০টার দিকে পুলিশ তাদের হটিয়ে দিলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। ঘটনাটি খতিয়ে দেখা হবে। কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে। একই সঙ্গে পুলিশের নির্যাতনে আটক ব্যক্তির মৃত্যুর যে অভিযোগ তোলা হয়েছে, তার মরদেহ ময়নাতদন্ত করলে প্রকৃত বিষয়টি জানা যাবে।
উল্লেখ্য, গত ২৪ সেপ্টেম্বর হারাগাছের সাহেবগঞ্জ এলাকায় মাদকসেবীকে ধরতে গিয়ে ছুরিকাঘাতে আহত হয়েছেন পুলিশের সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) পিয়ারুল ইসলাম। এ ঘটনার পরদিন চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। ওই ঘটনার ঠিক ৩৬ দিন পর এবার পুলিশের বিরুদ্ধে মাদকসেবীকে আটকের পর পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে।
খুলনা গেজেট/ টি আই