খুলনা, বাংলাদেশ | ২৫শে আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ৯ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

Breaking News

  গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে এক জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ৪০৬
  কেসিসির সাবেক মেয়র তালুকদার আবদুল খালেক ও তার স্ত্রী সাবেক উপমন্ত্রী হাবিবুন নাহারের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
  ভারতীয় যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত, দুই পাইলট নিহত
  যুবদল নেতা হত্যা মামলায় সুব্রত বাইন ৭ দিনের রিমান্ডে
বিবিসির অনুসন্ধানে ৫ আগস্ট

উঠে এলো যাত্রাবাড়ী-হত্যাকাণ্ডের ‘ভয়াবহ চিত্র’

গেজেট ডেস্ক

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ঢাকার অন্যতম ব্যস্ত এলাকা যাত্রাবাড়ীতে পুলিশের নির্বিচার গুলিতে কমপক্ষে ৫২ জন নিহত হন বলে উঠে এসেছে বিবিসি আই-এর একটি অনুসন্ধানে। ঘটনাটিকে বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ পুলিশি সহিংসতাগুলোর একটি হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।

ভয়াবহ ওই হত্যাকাণ্ড ঘটেছিল ৫ আগস্ট, যেদিন শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে টানা ৩৬ দিন ধরে চলা বিক্ষোভের মুখে দেশটির তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হন এবং ভারতে পালিয়ে যান।

গত বছর সরকারবিরোধী বিক্ষোভের শেষ দিনে ভয়াবহ ঘটনাটি কীভাবে ঘটেছিল, সেটি বের করার জন্য তখনকার শত শত ভিডিও, ছবি ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সাক্ষ্য গ্রহণ এবং সেগুলো বিশ্লেষণের পাশাপাশি সরেজমিনে বেশ কয়েকবার যাত্রাবাড়ীর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে বিবিসির অনুসন্ধানী টিম।

জাতিসংঘের প্রতিবেদন ও বিভিন্ন গণমাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে নানা খবর প্রকাশিত হলেও নির্বিচারে হত্যার ঘটনাটি কীভাবে শুরু ও শেষ হয় এবং তাতে কত মানুষ হতাহত হয়, সে সম্পর্কে বিবিসির অনুসন্ধানে এমন কিছু তথ্য ও বিবরণ উঠে এসেছে, যা আগে সেভাবে সামনে আসেনি।

আন্দোলনকারীদের ওপর নির্বিচারে গুলি ও হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে বক্তব্য জানতে বাংলাদেশ পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে বাহিনীটির একজন মুখপাত্র ঘটনা স্বীকার করে বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় এ ধরনের দুঃখজনক ঘটনা ঘটেছে। সেখানে তৎকালীন পুলিশ বাহিনীর কিছু সদস্য অতিরিক্ত বলপ্রয়োগে লিপ্ত হয়েছিলেন এবং আন্দোলনকারীদের নিয়ন্ত্রণে অপেশাদার আচরণ করেছিলেন।

অনুসন্ধান চলাকালে ঘটনার এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ ভিডিও বিবিসির হাতে আসে, যেখানে ৫ আগস্ট বিকালে যাত্রাবাড়ীতে পুলিশের গুলিবর্ষণ শুরুর কিছু মুহূর্ত দেখা যায়।

ভিডিওটি এমন একজন আন্দোলনকারীর মোবাইল ফোন থেকে বিবিসি সংগ্রহ করেছে, যিনি নিজেও সেদিন পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারান। নিহত ওই আন্দোলনকারীর নাম মিরাজ হোসেন।

পুলিশ যখন বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলিবর্ষণ শুরু করে, সেই সময়ের ভিডিও ধারণ করেন মিরাজ। মর্মান্তিকভাবে মোবাইল ক্যামেরায় ওই ভিডিওতে তার জীবনের শেষ মুহূর্তও ধরা পড়ে।

মিরাজের মৃত্যুর পর পরিবারের সদস্যরা তার মোবাইলটি খুঁজে পান এবং ফোনে সংরক্ষিত ভিডিওটি বিবিসিকে দেন।

ভিডিও’র মেটাডেটা বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, সেদিন নির্বিচারে গুলিবর্ষণের ঘটনাটি শুরু হয় দুপুর ২টা ৪৩ মিনিটে।

ভিডিওটিতে যাত্রাবাড়ী থানার মূল ফটকে বিক্ষোভকারীদের সামনে সেনাবাহিনীর একটি দলকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। এরপর হঠাৎ করেই তারা ওই এলাকা থেকে সরে যান।

এ ঘটনার কিছুক্ষণের মধ্যেই যাত্রাবাড়ী থানার ভেতরের পুলিশ সদস্যরা ফটকের সামনে অবস্থানরত বিক্ষোভকারী জনতার ওপর আকস্মিকভাবে গুলিবর্ষণ শুরু করেন।

থানার উল্টো দিকে অবস্থিত একটি ভবনের সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যাচ্ছে, পুলিশ গুলি চালানো শুরু করার পর প্রাণ বাঁচাতে গলির ভেতর দিয়ে ছুটে পালাচ্ছেন বিক্ষোভকারীরা।

ওই সময়ের আরেকটি ভিডিওতে আহতদের শরীরে লাথি মারতেও দেখা যায় পুলিশকে। পুলিশ গুলি শুরু করার পর প্রাণ বাঁচাতে গলির ভেতর দিয়ে ছুটে পালান আন্দোলনকারীরা।

মিরাজের ধারণ করা ভিডিও থেকে হত্যাকাণ্ডটির সূত্রপাতের বিষয়ে স্পষ্ট একটা ধারণা পাওয়া যাচ্ছে।

৫ আগস্ট ধারণ করা ভিডিওগুলোতে পুলিশকে যখন গুলিবর্ষণ করতে দেখা যায়, তখন যাত্রাবাড়ী থানা প্রাঙ্গণে তাদের একাধিক যানবাহন রাখা ছিল। এর আগে ৪ আগস্ট বিক্ষোভকারীরা যাত্রাবাড়ী থানার সামনে একত্রিত হলে পুলিশ তাদের ওপরও হামলা চালায়।

৪ আগস্টের ওই ঘটনার কিছু ভিডিও বিবিসি সংগ্রহ করেছে, যেখানে পুলিশকে থানা থেকে বেরিয়ে মহাসড়কের দিকে গুলি চালাতে যেতে দেখা যাচ্ছে।

দু’টি ভিডিওতেই মেশিনগান থেকে ছোড়া তিনটি গুলির শব্দ শোনা যাচ্ছে এবং থানার বাইরে একটি ট্রাক থেকে ধোঁয়া বের হতে দেখা যাচ্ছে।

অনুসন্ধানে বিবিসি দেখেছে যে, ৫ আগস্ট বিকালে যাত্রাবাড়ী থানার সামনে ৩০ মিনিটেরও বেশি সময় ধরে হত্যাকাণ্ড চালানো হয়েছিল। ঘটনার সময়ের কিছু ড্রোন ভিডিও বিবিসি’র হাতে এসেছে।

ভিডিও’র মেটাডেটার তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, বিকাল ৩টা ১৭ মিনিটেও যাত্রাবাড়ী থানার সামনের মহাসড়কে বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলি চালাচ্ছিল পুলিশ।

এরপর তাদের বড় একটি দলকে থানার উল্টো পাশে অবস্থিত একটি অস্থায়ী সেনা ব্যারাকে আশ্রয় নিতে দেখা যায়।

ড্রোন ভিডিওতে মহাসড়কের ওপর হতাহতদের একাধিক লাশ পড়ে থাকতেও দেখা গেছে। ভ্যান-রিকশা এবং বাইকে করে আহতদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন আন্দোলনকারীরা।

পরবর্তী কয়েক ঘণ্টার মধ্যে আন্দোলনকারীদের একটি অংশ শাহবাগের দিকে চলে যান। আর যারা তখনও যাত্রাবাড়ীতে ছিলেন, তাদের মধ্যে বিক্ষুব্ধ একটি অংশ থানায় আগুন দেন। এ ঘটনায় পুলিশের কমপক্ষে ছয়জন সদস্য নিহত হন।

৫ আগস্ট বিকালে পুলিশের নির্বিচার গুলির ঘটনার পর আহতদেরকে আশেপাশের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকরা অনেক ব্যক্তিকে মৃত ঘোষণা করেন।সেদিন যাত্রাবাড়ীতে অন্তত ৩০ জন বিক্ষোভকারী নিহত হন বলে প্রাথমিকভাবে জানা যাচ্ছিল।

কিন্তু গণমাধ্যমে প্রকাশিত তখনকার খবর, নিহতদের পরিবারের সাক্ষাৎকার, হাসপাতালের নথি এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বিভিন্ন পোস্টের সত্যতা যাচাই করার পর বিবিসি দেখেছে, ৫ আগস্ট যাত্রাবাড়ীতে কমপক্ষে ৫২ জন সাধারণ মানুষ নিহত হন। এর বাইরে সেদিন আরও অন্তত ছয়জন পুলিশ নিহত হন।

পুলিশ বাহিনী জানিয়েছে, তারা ঘটনার সঙ্গে যুক্ত কর্মকর্তাদের বিচারের মুখোমুখি করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছেন।

ওই ঘটনার সময় সেনা সদস্যদের ভূমিকার বিষয়ে মন্তব্য জানতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সাথে যোগাযোগ করা হলেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।

 

খুলনা গেজেট/এনএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!