খুলনা, বাংলাদেশ | ২৮ পৌষ, ১৪৩১ | ১২ জানুয়ারি, ২০২৫

Breaking News

  আরও ৬০ দিন বাড়ল সশস্ত্র বাহিনীর ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা
  রমজান ও ঈদের সম্ভাব্য তারিখ জানাল আরব আমিরাত
  দেশে একজনের শরীরে এইচএমপিভি ভাইরাস শনাক্ত : আইইডিসিআর

উইকেট হারিয়ে বিপর্যয়ে জিম্বাবুয়

ক্রীড়া ডেস্ক

লক্ষ্য ২৭৭ রানের। একদম সহজ নয়। কিন্তু চ্যালেঞ্জিং এই লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে যেমন শুরু করা দরকার ছিল, তেমন পায়নি জিম্বাবুয়ে। হারারেতে সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে টাইগার পেসারদের তোপে শুরুতেই বিপদে পড়ে স্বাগতিকরা।

স্কোরবোর্ডে ১৩ রান উঠতেই ২ উইকেট হারিয়ে বসে জিম্বাবুয়ে। তাদিওয়ানাশে মারুমানিকে রানের খাতা খোলার আগেই বোল্ড করে দেন মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন। কাট করতে গিয়ে লেগস্ট্যাম্প হারান ক্যারিয়ারের প্রথম ওয়ানডে খেলতে নামা এই ওপেনার।

এরপর চোধ ধাঁধানো এক ডেলিভারিতে ওয়েসলে মাদভেরের (৭) মিডল স্ট্যাম্প তুলে নেন তাসকিন আহমেদ। তৃতীয় উইকেটে প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করেছিলেন ব্রেন্ডন টেলর আর অভিষিক্ত ডিয়ন মায়ের্স।

আত্মবিশ্বাসের সঙ্গেই খেলছিলেন মায়ের্স। কিন্তু অতি আত্মবিশ্বাসী হয়ে উইকেট বিলিয়ে দিয়েছেন তিনি। এগারতম ওভারে শরিফুল ইসলামকে পুল করতে গিয়ে ব্যাকওয়ার্ড স্কয়ারে মোসাদ্দেক হোসেনের সহজ ক্যাচ হয়েছেন এই ব্যাটসম্যান, ২৪ বলে করেন ১৮ রান।

৪৯ রানে ৩ উইকেট হারানো দলকে টেনে তোলার চেষ্টা করেছিলেন টেলর আর রেগিস চাকাভা। কিন্তু তাদের চতুর্থ উইকেট জুটিটি ২৯ রানের বেশি যেতে দেননি সাকিব আল হাসান।

প্রথম দুই ওভারে খরুচে (১৭ রান) সাকিব দ্বিতীয় স্পেলে এসেই তুলে নিয়েছেন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উইকেটটি। জিম্বাবুইয়ান অধিনায়ক টেলর তাকে সুইপ করতে গিয়ে টপ এজ হয়ে সাজঘরে ফেরেন ৩১ বলে ২৪ করে।

এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ২২.১ ওভার শেষে জিম্বাবুয়ের সংগ্রহ ৭ উইকেটে ১০৮  রান।

এর আগে চাপের মুখে দুর্দান্ত এক সেঞ্চুরি করে বাংলাদেশকে লড়াকু সংগ্রহের ভিত গড়ে দেন লিটন দাস। ৯ উইকেটে ২৭৬ রানের পুঁজি পায় টাইগাররা।

হারারে স্পোর্টস ক্লাব মাঠে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টস হেরে আগে ব্যাটিংয়ে নামে বাংলাদেশ। যদিও টাইগার অধিনায়ক তামিম ইকবাল জানান, টস জিতলে তিনি আগে বোলিংয়ের সিদ্ধান্ত নিতেন।

কেন আগে বোলিং নিতেন তামিম, তারই যেন প্রমাণ দেন জিম্বাবুয়ের দুই নতুন বলের পেসার। প্রথম দুই ওভারে ব্লেসিং মুজারাবানি ও টেন্ডাই চাতারার বিপক্ষে সুবিধাই করতে পারেননি তামিম ও লিটন।

বেশ কয়েকটি বলে আউটের সম্ভাবনা জাগান এ দুই পেসার। অল্পের জন্য বেঁচে যান দুই টাইগার ওপেনার। তবে প্রথম দুই ওভার থেকে কোনো রান অবশ্য করতে পারেনি বাংলাদেশ।

তৃতীয় ওভারের প্রথম বলটি অফস্ট্যাম্পের খানিক বাইরে করেছিলেন মুজারাবানি। এক্সট্রা বাউন্স থাকা ডেলিভারিটি কাট করতে চেয়েছিলেন তামিম। কিন্তু তার ব্যাটের বাইরের কানায় লেগে বল চলে যায় উইকেটরক্ষকের গ্লাভসে।

ওয়ানডে ক্যারিয়ারে ১৯তম বারের মতো শূন্য রানে আউট হন তামিম। যা কি না বাংলাদেশের পক্ষে ওয়ানডে ক্রিকেটে সবচেয়ে বেশিবার শূন্য রানে আউট হওয়ার রেকর্ড। শুধু তাই নয়, তিন ফরম্যাট মিলেও বাংলাদেশের পক্ষে সর্বোচ্চ ডাকের মালিক এখন তামিম।

অধিনায়কের বিদায়ের পর তিন নম্বরে ব্যাট করতে নেমে প্রথম বলেই স্ট্রেইট ড্রাইভে চার মেরেছেন সাকিব আল হাসান। বাংলাদেশের ইনিংসেও এটিই প্রথম রান। পরের ওভারে লেগসাইডে বিশাল ওয়াইডে বোনাস বাউন্ডারি দেন টেন্ডাই চাতারা।

তামিম-লিটন সুবিধা করতে না পারলেও, শুরু থেকেই উইকেটে ব্যস্ত সময় পার করতে থাকেন তিনি। বিশেষ করে চাতারার ওভারে কাভার ড্রাইভে হাঁকান দর্শনীয় এক চার।

কিন্তু বেশিক্ষণ এটি চালিয়ে নিতে পারেননি সাকিব। ইনিংসের নবম ওভারের দ্বিতীয় বলে মুজুরাবানির দ্বিতীয় শিকারে পরিণত হয়ে সাজঘরে ফেরার আগে ৩ চারের মারে ২৫ বলে ১৯ রান করেন সাকিব।

তামিমের মতোই সাকিবের আউটের ডেলিভারিতেও ছিল এক্সট্রা বাউন্স। তবে ঠিকঠাক ব্যাটে নিতে পেরেছিলেন সাকিব। কিন্তু তার ব্যাটে ডাবল টাচ লেগে বল চলে যায় শর্ট এক্সট্রা কাভারে দাঁড়ানো রায়ান বার্লের হাতে।

সাকিব ফিরে যাওয়ার পর মিঠুনের শুরুটাও ছিল আশা জাগানিয়া। কিন্তু বেশ কয়েকটি দৃষ্টিনন্দন অফ ড্রাইভের পর জায়গায় দাঁড়িয়ে খেলা শটে কট বিহাইন্ড হন তিনি (১৯ বলে ৪ বাউন্ডারিতে ১৯)। যেখানে ছিল না কোনো ফুট মুভমেন্ট।

মিঠুনের মতো প্রায় একইভাবে সাজঘরে ফিরেছেন মোসাদ্দেক। বাঁহাতি পেসার রিচার্ড এনগারাভার বল ফুট মুভমেন্ট ছাড়াই অফসাইডে খেলার চেষ্টা করেন। কিন্তু ধরা পড়েন উইকেটরক্ষক রেগিস চাকাভার গ্লাভসে। ১৫ বল খেলে করেন মাত্র ৫ রান। ৭৪ রানে ৪ উইকেট হারায় বাংলাদেশ।

সেখান থেকে লিটন দাস আর মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের প্রতিরোধ। দারুণ খেলে ক্যারিয়ারের চতুর্থ ফিফটি তুলে নেন লিটন। মাহমুদউল্লাহ তার প্রথম ১৮ রান তুলেন কোনো বাউন্ডারি ছাড়াই। ছক্কা মেরে পৌঁছান বিশের ঘরে।

থিতু হওয়ার পর তারা দুজনই হাত খুলেছেন। টানা পাঁচ ওভার আটের ওপর করে রান নিয়েছেন। জুটিটি সেঞ্চুরির কাছেই পৌঁছে গিয়েছিল। শেষ পর্যন্ত মাহমুদউল্লাহকে স্লো বাউন্সারে বিভ্রান্ত করে উইকেট তুলে নেন লুক জঙ্গি।

লিটনের সঙ্গে ৯৩ রানের জুটিতে মাহমুদউল্লাহর অবদান ছিল ৩৩ রান। ৫২ বলে ১ ছক্কায় এই রান করেন টাইগার দলের অভিজ্ঞ সেনানী।

তবে সঙ্গী হারিয়েও লিটন তার মনোসংযোগ হারাননি। দেখেশুনে খেলে ছুঁয়েছেন তিন অংকের ম্যাজিক ফিগার এবং বরাবরের মতো স্ট্রাইকরেটের কথা মাথায় রেখে।

জিম্বাবুয়ে বোধ হয় তার পছন্দের প্রতিপক্ষ। ওয়ানডে ক্যারিয়ারের চার সেঞ্চুরি হলো আজ, এর মধ্যে তিনটিই জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। তবে হারারেতে আজ লিটন যে পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে সেঞ্চুরি করেছেন, আলাদা প্রশংসা পেতেই পারেন।

শেষ পর্যন্ত তার চোখ ধাঁধানো ইনিংসটির সমাপ্তি ঘটিয়েছেন রিচার্ড এনগারাভা। জিম্বাবুইয়ান এই পেসারের শর্ট বলে পুল করতে গিয়ে টপ এজ হয়েছেন লিটন।

ডিপ ব্যাকওয়ার্ড স্কয়ার লেগে দাঁড়িয়ে ক্যাচটি তালুবন্দী করতে ভুল করেননি বদলি ফিল্ডার ওয়েলিংটন মাসাকাদজা। ১১৪ বলে লিটনের ১০২ রানের ইনিংসটি ছিল ৮ বাউন্ডারিতে সাজানো।

এরপর আফিফ হোসেন ধ্রুব আর মেহেদি হাসান মিরাজ মিলে গড়েন ৫৮ রানের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ জুটি। ৪৮ ওভার পর্যন্ত তারা দেখেশুনে খেলেছেন। কিন্তু লুক জঙউইর করা ৪৯তম ওভারে টানা তিন বলে তিন উইকেট হারিয়ে বসে বাংলাদেশ।

ওভারের তৃতীয় বলে ডিপ কভারে ক্যাচ হন মিরাজ (২৫ বলে ২৬)। পরের বলে স্কুপ করতে গিয়ে বোল্ড আফিফও। হাফসেঞ্চুরির দোরগোড়ায় দাঁড়ানো এই বাঁহাতি ৩৫ বল খেলে ১ বাউন্ডারি আর ২ ছক্কায় করেন ৪৫ রান। জঙউইর পরের ডেলিভারিতেও উইকেট। এবার দুই নিতে গিয়ে হন রানআউট তাসকিন আহমেদ (১)।

তবে বাংলাদেশকে অলআউট করতে পারেনি জিম্বাবুয়ে। ৬ বলে এক বাউন্ডারিতে ৮ রানে অপরাজিত থাকেন অলরাউন্ডার মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন।

জিম্বাবুইয়ান বোলারদের মধ্যে সবচেয়ে সফল লুক জঙউই। ৫১ রানে ৩টি উইকেট শিকার করেন তিনি। ২টি করে উইকেট ব্লেসিং মুজারাবানি আর রিচার্ড এনগারাভার।

খুলনা গেজেট/ টি আই




খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!